কলকাতা, 26 অগাস্ট : বার্সেলোনার সঙ্গে 20 বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করার ইচ্ছা প্রকাশ লিওনেল মেসির মুখে । ছয়টি ‘ব্যালন ডি অর’ জয়ী ফুটবলের যাদুকরের দলবদলের সিদ্ধান্তে চমক বিশ্বজুড়ে । এল এম টেন নতুন ক্লাবে খেলতে পারেন সে জল্পনা ছিলই । তাই বিশ্বের তাবড় তাবড় ধনী ক্লাবগুলি টাকার ঝুলি নিয়ে তৈরি হচ্ছিল । কিন্তু দলবদলে মেসি যাবেন কোন দিকে । তা নিয়ে কিন্তু জল্পনা তুঙ্গে ।
33 বছর বয়সে মেসি কি নতুন চ্যালেঞ্জ নেবেন ? মেসি ভক্তরা দোটানায়। কারণ 10 নম্বর জার্সির যাদু দেখতেই তো মাঠে ভিড় করা, টিভির সামনে রাত জাগা । ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়েছেন, মেসিও যদি অন্য লিগে পাড়ি দেন, তাহলে স্পেনের লা লিগার আকর্ষণ এক ঝটকায় তলানিতে পৌঁছবে ।
বাংলার প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন বলছেন, ‘‘কতটা যন্ত্রণা থাকলে একজন মানুষ এই সিদ্ধান্ত নেয় তা ফের প্রমাণিত হল । 20 বছর ধরে একটানা বার্সায় খেলেছে । ওই ক্লাবের জার্সিতে ছটা ‘ব্যালন ডি অর’ জিতেছে । বার্সেলোনা মানেই মেসি । ওর কারণেই বার্সেলোনার বিরাট সমর্থক । মেসির সঙ্গে সমর্থকরাও দলবদল করবে । বার্সেলোনা হারাবে তার ব্র্যান্ড ভ্যালু । যা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো চলে যাওয়ার পরে রিয়াল মাদ্রিদ হারিয়েছে ।’’
প্রায় একই সঙ্গে তিনি যোগ করলেন, ‘‘যাই হোক না কেন মেসিকে রাখার জন্য বার্সেলোনার এখন অলআউট যাওয়া উচিত । আভ্যন্তরীণ সমস্যা এতদূর থেকে বলা সম্ভব নয় । মেসি মুখ খুললেই তা সামনে আসতে পারে । তবে এখানে ইগো বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে হচ্ছে । তাই বার্সার প্রেসিডেন্ট, কোচ সবারই মেসির সঙ্গে বসে মান অভিমানের পালা মিটিয়ে নেওয়া উচিত ।’’
আরও পড়ুন :- ক্লাব ছাড়তে চান, বার্সা-কে ফ্যাক্স মেসির
মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়েরও কথায় মেহেতাবের সুর । বলছেন, ‘‘ 10 বছর আগের মেসি আর বর্তমান সময়ের মেসি এক নয় । তা সত্ত্বেও ওকে নেওয়ার জন্য বিশ্বের সব ক্লাব ঝাঁপাচ্ছে । কারণ মেসি একটা বড় ব্র্যান্ডের নাম । এই অবস্থায় এখানে পেশাদারিত্ব ছাপিয়ে আবেগ বেশি কাজ করছে । আমার ফুটবল জীবনে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে একবারই মোহনবাগানে আসতে দেখেছি । সেখানে পেশাদারিত্ব নয় ইগো সমস্যা কাজ করেছিল । একজন ফুটবলার হিসেবে বলতে পারি এই ক্ষেত্রে আবেগ বেশি বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।’’
মেহতাব হোসেন এবং সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় দুজনেই বলছেন মেসি সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার । বিশ্বকাপ হাতে তুলতে পারলে সবাইকে ছাপিয়ে যেত ।‘‘ এতদিন খেলার পরে ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে । আমি যখন ছাড়ার জায়গায় পৌঁছেছিলাম তখন পেশাদারিত্ব এবং আবেগের মধ্যে দ্বিতীয়টাকে বেছে নিয়েছিলাম । কারণ আমার মধ্যে আর দুই থেকে তিন বছর খেলা অবশিষ্ট ছিল । সেক্ষেত্রে মোহনবাগান ছেড়ে অন্য ক্লাবে যাওয়ার চেয়ে খেলা ছেড়ে দেওয়াই ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত । মেসি 20 বছর পরে কেন ছাড়ছে তা জানতে হবে । ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি পেশাদার । এবার পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে আবেগ গুরুত্ব পাবে কি না তার উত্তর ব্যক্তি মেসি ঠিক করবে," বলছেন বাগানের ঘরের ছেলে সত্যজিৎ ।
33 বছর বয়সে দলবদল যদি করে তাহলে তা মেসির মতো ফুটবলারের কাছে কতটা চ্যালেঞ্জের ? মেহতাব বলছেন, ‘‘বয়স 33 হলেও সক্ষমতার দিক থেকে মেসি এখনও 27 বা 28 এর । বার্সেলোনার একমাত্র ম্যাচ উইনার । কোচ কেন বায়ার্নের বিরুদ্ধে রাকেটিচকে খেলাননি তা কেউ বুঝতে পারেনি । তাই মেসির যোগ্যতা প্রশ্নাতীত । যে কোনও লিগের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা ওর রয়েছে ৷’’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ব্যর্থতার 11 দিনের মাথায় বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত । তবে মেসির গন্তব্য কোন পথে তা জানার জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতেই হবে ।