কলকাতা, 28 মে : ঘূর্ণিঝড় যশের তাণ্ডবে ভিটেহারা কয়েক লাখ মানুষ । আর্ত মানুষের পাশে সাহায্যের অনেক হাত । চোখের জল মুছে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলেছে । এমনই এক জীবনযুদ্ধে অন্য লড়াইয়ের গল্প সমর পালের । ফিফা প্যানেলের সহকারী রেফারি এখন বাজারে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন । লকডাউনের দ্বিতীয় ঢেউ তাঁকে বাজারে বসতে বাধ্য করেছে ।
বাগনানের মুককল্যাণ গ্রামের নিজের বাড়ির ছোট্ট ভিটেয় কাঁচা সবজির দোকান খুলেছেন ফিফার সহকারী রেফারি সমর পাল । একবছর আগে বারুইপুরের বাজারে ফল বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন সিএবির এ গ্রেড আম্পায়ার । সেই একই পথে এবার রেফারি সমর । বাড়িতে মা, স্ত্রী, ছোট ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার । চারটি পেট চালাতে লড়াই এতটাই কঠিন হয়েছে যে গ্রামের কিছু মানুষ সবজি না কিনলে হাঁড়ি চড়ানো দায় হয়ে ওঠে । ফুটবল খেলে চেষ্টা করলে চাকরি পাওয়া যায় । কিন্তু রেফারিরা সেই আঁধারে । সময় যত গড়াচ্ছে ম্যাচ পরিচালকদের অবস্থা আরও কঠিন হচ্ছে ।
2014 সালে প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সমর পাল ফিফা ব্যাজ পেয়েছিলেন । প্রাঞ্জল রেফারি এবং সমর পেয়েছিলেন সহকারী রেফারির ব্যাজ । সেদিন থেকে সমর এলিট প্যানেলের সহকারী রেফারি । গত ছয় বছরে 28টি দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচে সহকারী রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন সমর । কিন্তু 2020 সালে করোনা ভাইরাস প্যানডেমিকে সবকিছু স্তব্ধ । বন্ধ ফুটবলও ৷ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ পরিচালনার সুযোগ পেলেও তা করোনার কারণে বাতিল হয়ে যায় । ফলে অর্থ উপার্জনের সুযোগ হাতে এসেও হাতছাড়া ।
ফিফা ব্যাজ পেলেও চাকরি অধরা সমরের । দেখছি, দেখব বলে আশ্বাসের বাণীতে দিন গোনা । "কাকে বলিনি ? অনুরোধ করেছি সবাইকে । কিন্তু কিছুই হয়নি আশ্বাসে সাময়িক আশা বেড়েছে । তবে দিন গড়াতেই বুঝেছি ওগুলো শুধুই কথার কথা । গতবছর লকডাউনের সময় জমানো টাকায় সংসার চলেছে । এবার মুখ থুবড়ে পড়লাম । পারলাম না । বাধ্য হয়ে সবজির দোকান দিতে হল । সকালে অনেকেই দিনের শুভেচ্ছা জানায় । সাবধানে সুস্থ থাকার কথা বলে । কিন্তু তাতে পেট তো মানে না । ওসব পোশাকি কথায় হতাশ লাগে," ভারি শোনায় সমরের গলা ।
নিজেকে সামলে নিয়ে ফের বলতে থাকেন, "আমাদের গ্রাম চন্দ্রভাগে রেফারি রথীন মুখোপাধ্যায় থাকতেন । ওঁকে দেখেই রেফারি হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম । টিভিতে ওঁকে ম্যাচ খেলাতে দেখে আমার ঘোর লেগেছিল । সেই ঘোর যে কতটা কঠিন তা এখন বুঝতে পারছি । 2003 সালে রেফারিং শুরু । ফিফা ব্যাজ পাওয়ার পরে মনে হয়েছিল এবার একটা জায়গায় পৌঁছনো যাবে । কিন্তু ভাবিনি একদিন সবজি বিক্রি করতে হবে । এখন পিছনে তাকালে মনে হয় সব ভুল করেছি ।"
আরও পড়ুন : বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ড্র বা টাই হলে যুগ্ম বিজয়ী : আইসিসি
আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করলে পারিশ্রমিক যথেষ্ট ভালো । কিন্তু সমররা নিয়মিত ডাক পান না । ফলে নিয়মিত উপার্জনের উপায় নেই । এই হাহাকার রেফারি মহলে সর্বত্র । সমর পাল বলছেন, "ফিফা ব্যাজ পাওয়ার পরে চাকরি জোটেনি । অথচ অনেক ফুটবলার আছেন, যাঁরা সামান্য খেলে চাকরি পেয়েছেন । রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনার সর্বোচ্চ বয়স 45 । তারপর? কী করব,কী হবে ভেবে হতাশ লাগে । নতুন প্রজন্ম কেন রেফারি হবে বলতে পারেন?" বাংলায় ফিফা প্যানেলে তিনজন ম্যাচ পরিচালক । প্রাঞ্জল বন্দ্যোপাধ্যায় রেফারি । সমর পাল এবং অসিত সরকার সহকারী রেফারি । প্রাঞ্জল অনেক লড়াই করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন ।