কলকাতা, 14 নভেম্বর : সেনাবাহিনীর এক চিঠিতে হঠাৎই সরগরম কলকাতা ময়দান ৷ একইসঙ্গে শঙ্কার ঘূর্ণাবর্ত ক্লাব তাঁবুগুলোতে। গত 20 অক্টোবর কর্নেল শ্যাম দেও ভাটসের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ময়দানে অবস্থিত ক্লাবগুলোকে ক্রীড়া কর্মকাণ্ডের উন্নতিতে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রথমবার এই ধরনের চিঠি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে পেয়ে বিস্মিত ময়দানের ক্লাবগুলো।
গঙ্গার পূর্বপাড়ে বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহে কলকাতা ময়দান নগর কলকাতার অক্সিজেনও বটে। যাকে তিলোত্তমার বুকে খেলাধুলার কেন্দ্রভূমি বলা হয়ে থাকে। ফোর্ট উইলিয়াম সংলগ্ন এই এলাকায় কালের নিয়মে গড়ে উঠেছে একাধিক ক্লাব। অন্য অনেক ক্লাবের মূল ভবন ময়দানের বাইরে থাকলেও ময়দানই তাদের অনুশীলনের জায়গা। সত্তরের বেশি ক্লাব তাঁবু রয়েছে সেখানে। তবে ময়দানের কোনও ক্লাব তাঁবুরই মালিকানা স্বত্ব নেই। সেনাবাহিনীর অনুমতিক্রমে যাবতীয় কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয় সেখানে। অক্টোবর মাসের প্রথম পনেরো দিন বাধ্যতামূলক ক্লাব তাঁবুর দরজা বন্ধ রাখতে হয়। এই সময় প্রবেশাধিকার বন্ধ থাকে। এমনকি ময়দানের ক্লাবগুলো কোনও কিছু গড়তে চাইলে সেটাও সেনাবাহিনীর অনুমতি সাপেক্ষে করতে হয়।
ময়দানের ক্লাবগুলোর মধ্যে গোটা দশেক ক্লাবে পানশালা রয়েছে। তা চালু সম্ভব হয়েছিল সেনাবাহিনীর অনুমতিতেই। কিন্তু প্রত্য়েকটি ক্লাবেরই যে সারাবছর ক্রীড়া কর্মকাণ্ড থাকে তা বলা যাবে না। বহু ক্লাব এমন রয়েছে যেখানে খাতায় কলমে পদাধিকারীরা রয়েছেন কিন্তু খেলাধুলা হয় না। সে বিষয়ে আলোকপাত করেই কি নড়েচড়ে বসল সেনাবাহিনী ? ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কর্তা দীপ্তিকল্যাণ সেন শর্মা বলেন, "সেনাবাহিনীর কাছ থেকে এই ধরনের চিঠি আমরা কোনও দিন পাইনি। আমাদের ক্লাবে সারা বছর খেলাধুলো হয়। ফুটবল ক্রিকেট দু'টোতেই আইএফএ, সিএবি লিগে অংশগ্রহণ করি। একটা কোচিং ক্যাম্প রয়েছে। আমাদের ক্লাব ধর্মতলার উপরেই। অসামাজিক কাজ বলতে যা বোঝায় তা হয় না। এই ধরনের চিঠিতে ময়দানে আলোড়ন পড়েছে। যাদের কোনও কর্মকাণ্ড নেই তাদের তো চিন্তা হবেই। প্রচুর ক্লাব আছে যাদের তাঁবু নেই ৷ ময়দানে খেলতে এসে অসুবিধার মধ্যে পড়ে তারা। বর্ষাকালে পোশাক ভিজে যায়, পোশাক বদলের জায়গা পায় না। যদি সেনাবাহিনী এই সকল কিছু ভেবে কোনও পদক্ষেপ নেয় বা চিন্তা করে তাহলে ভাল।"
পোর্ট ট্রাস্ট ক্লাবের কর্তা এবং আইএফএর সহ-সচিব শুভাশিস সরকার জানিয়েছেন, তাদের কাছে এই ধরনের কোনও চিঠি আসেনি। তবে তাদের ক্লাবের সবক'টি বিভাগ সারাবছর ধরে চলে। কোন ক্লাবে কোথায় কী চলছে তা তাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তবে এই ধরনের চিঠি নতুন। কেন চিঠি দেওয়া হয়েছে তা সেনাবাহিনী বলতে পারবে। ময়দানের অব্যবহৃত ক্লাব তাঁবুতে অসামাজিক কাজের অভিযোগ নতুন নয়।
আরও পড়ুন : জাতীয় দলের জার্সিতে ক্রিকেটের স্বর্গোদ্যান মাতাতে মুখিয়ে ভেঙ্কটেশ
ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির ক্লাবের যুগ্ম সচিব আশিস পাল বলেন, "এই ধরনের চিঠি প্রথমবার পেয়েছি। আমাদের ক্লাবের কর্মকাণ্ড রয়েছে। অফিস লিগে ক্রিকেট-ফুটবল দুটোই খেলি। বহু ক্রীড়াবিদ রয়েছে আমাদের অফিসে। আমার মনে হয় দুই বছর ধরে করোনার কারণে খেলাধুলো না হওয়ায় ঝোপ-জঙ্গল হয়েছে অনেক ক্লাবেই। সেগুলো দেখেই হয়তো এই চিঠি এসেছে।"
সবমিলিয়ে খেলার উন্নতির কথা বলে সেনাবাহিনীর এই চিঠির উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না ক্লাবগুলো। সবাই নিজেদের মত করে কর্মকাণ্ডের হিসেব সাজাচ্ছেন। তাই আপাত শান্ত ময়দানের ক্লাব তাঁবুগুলোতে শঙ্কার চোরাস্রোত।