জলপাইগুড়ি, 4 সেপ্টেম্বর : ইস্টবেঙ্গল অনূর্ধ্ব 19 দলে নিয়মিত খেলেছিলেন ৷ কলকাতা থেকে পাড়ি জমিয়েছিলেন ভুটানে ৷ সেখানের জাতীয় লিগের ক্লাব ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেডে সুনামের সঙ্গে খেলছিলেন জলপাইগুড়ির ভানুনগরের তরুণ ফুটবলার সুরজ সরাইলি ৷ কিন্তু বাধ সাধল কোরোনা ভাইরাস প্যানডেমিক ৷ বর্তমানে ভুটানে সমস্ত খেলা বন্ধ ৷ অন্য দেশের ফুটবলারদের সেখানে খেলতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে সেদেশের সরকার ৷ ফলে রোজগার বন্ধ সুরজের ৷
বাবা প্রায় 15 বছর ধরে নিখোঁজ ৷ মা লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান ৷ দুই ভাই ও মায়ের সংসার চালাতে সাহায্য করত সুরজের ফুটবল খেলে উপার্জন করা অর্থ ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বন্ধ সেই উপার্জন ৷ তাই কার্যত দিশাহার সুরজ ও তাঁর পরিবার ৷
জলপাইগুড়ির ভানুনগরের এই তরুণ ফুটবলার 2015-16 মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব 19 দলের খেলোয়ার ছিলেন । সাত মাস ইস্টবেঙ্গল খেলেছেন সুরজ । সেখান থেকে ভুটানের ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেড দলে ডাক পায় । ভারতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ভুটানে জাতীয় লিগে বেশ কয়েকটি গোল করে সুনাম অর্জন করেছিলেন সুরজ । তাঁর খেলা নজর কাড়ে মির্নাভা পঞ্জাবের কর্তাদের ৷ তাঁরা সুরজকে মিনার্ভাতে খেলার জন্য ডাকেন ৷ কিন্তু ভুটানের দলটি তাঁকে ছাড়তে চায়নি ৷ ফলে পঞ্জাবের দলের হয়ে খেলা হয়নি সুরজের ৷
![সুরজ রসাইলি](https://etvbharatimages.akamaized.net/etvbharat/prod-images/wb-jal-01-special-footballer-suroj-rasaily-vis1-7203427-hd_03092020135647_0309f_01088_787.jpg)
কোরোনা ভাইরাসের জেরে বর্তমানে ভুটানের সমস্ত খেলা বন্ধ ৷ ফলে নতুন করে সুরজের সঙ্গে চুক্তি করেনি ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেড ৷ 2020 সাল পর্যন্ত ভুটান ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে চুক্তি ছিল তাঁর ৷ কিন্তু বর্তমানে তা শেষের পথে ৷
2010 সাল থেকে ফুটবল খেলা শুরু । রাজগঞ্জ ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনে কোচিং নেবার সময় ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব 19 দলে ডাক পান সুরজ । তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি । মা মিনতি দেবী অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান ৷ তাঁকে কিছুটা সাহায্য করত সুরজ ৷ কিন্তু বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতিতে ফের রসাইলি পরিবারে অন্ধকার ডেকে এনেছে ৷
সুরজের মা মিনতি রসাইলি জানান, ‘‘ বর্তমানে সুরজের খেলাধূলা নেই । আমাদের খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়েই চলছে । কারণ সুরজের রোজগার বন্ধ । এবার আমাদের খুবই খারাপ অবস্থা । আমারও কাজ আগের মতো নেই । সুরজ খেলাধূলা করে যা রোজগার করত আমাদের সাহায্য হত । কিন্তু এখন খেলা না থাকার জন্য সমস্যা তো হচ্ছেই । আমি একা । এভাবে চলতে থাকলে সুরজের খেলা বসে যাবে ৷ আর ওর সঙ্গে সঙ্গে আমরাও বসে যাব ।’’
সুরজের দাদা রবি রসাইলি বলেন, ‘‘কোরোনা ভাইরাসের জন্য সব কিছু বন্ধ । খেলার মাধ্যমে সুরজ যে রোজগার করত সেটা পুরোপুরি বন্ধ । আমরা চাই পৃথিবী দ্রুত কোরোনা ভাইরাস মুক্ত হোক ৷ তাতে যদি খেলা চালু হয় তাহলে ভালো হয় । আমার ভাইয়ের ঠিকঠাক অনুশীলনও হচ্ছে না ।’’
সুরজ নিজে বলছেন, ‘‘আমি ভুটান ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেডের হয়ে খেলি । এই দলটা ভুটানের জাতীয় লিগে খেলে । আমার 2020 সাল পর্যন্ত চুক্তি ছিল ৷ কিন্তু এবার খেলা হল না । ফলে সমস্যায় পরে গেলাম । আমরা যারা পেশাদার ফুটবলার তাদের জন্য সমস্যা হয়ে গেল । খেলে যা রোজগার হত তা বাড়িতে দিতাম ৷ মায়ের কিছুটা সাহায্য হত । মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৷ কিন্তু লকডাউনের ফলে কাজ নেই । তাই প্রচণ্ড সমস্যায় আছি ।’’