হায়দরাবাদ, 1 অগাস্ট : ভারতের অন্যতম ঐতিহাসিক ফুটবল ক্লাব ইস্টবেঙ্গল পার করল 100 বছরের গণ্ডি । গতবছরই ইস্টবেঙ্গল শতবর্ষ পা দেয় । শতবর্ষে তাদের ট্যাগ লাইন ছিল, "স্পর্ধার শতবর্ষ"। 100 বছর উপলক্ষে শহরে মশাল নিয়ে মিছিল করেন সমর্থকরা। সমর্থকদের কাছে এটি একটি ফুটবল ক্লাবের থেকেও বেশি কিছু ।
গতবছর দূরন্ত কাপের 129 তম মরশুম শুরু করেছে ইস্টবেঙ্গল। ইস্টবেঙ্গলের খেলা যাঁরা দেখতে যান তাঁরা অনেকেই চেনেন যমুনা দাসকে। ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম সমর্থক যমুনাদেবী । ক্লাবের প্রতিটি খেলায় তাঁকে দেখা যায় গ্যালারিতে লজেন্স বিক্রি করতে। সেই 'লজেন্স দিদি'-কেও লাল-হলুদ রঙের শাড়িতে দেখা গিয়েছিল শতবর্ষের অনুষ্ঠানে। কাঁধে সেই লজেন্সের ঝোলা নিয়ে জনসমুদ্রে অংশ নিয়েছিলেন তিনিও। যমুনাদেবী জানিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গল তাঁর ব্যবসার জন্য শুভ। ইস্টবেঙ্গল জিতলে তাঁর বিক্রিও বেড়ে যায় বহুগুণ।
ইস্টবেঙ্গল তৈরির ইতিহাস
1920 সাল থেকে পথচলা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব । 1920 সালের 28 জুলাই মোহনবাগানের সঙ্গে খেলা ছিল জোড়াবাগান ক্লাবের। সেই ম্যাচ থেকে পূর্ববঙ্গের দুই খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয়। এরপরই গঠন করা হয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। কিন্তু, ক্লাবের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন জোড়াবাগান ক্লাবের তৎকালীন সহ-সভাপতি সুরেশচন্দ্র চৌধুরি । এরপর বন্ধু মহারাজা সন্তোষকে (যার নামে সন্তোষ ট্রফি) সঙ্গে নিয়ে অন্যান্য ক্লাবের পূর্ববঙ্গের সব খেলোয়াড়কে একত্রিত করে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রতিষ্ঠা করেন সুরেশচন্দ্র চৌধুরি। সেই দিনটি ছিল 1920 সালের 1 অগাস্ট।
এই ক্লাবের জার্সির রং হয় লাল-হলুদ । ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর সেই মাসেই 'হারকিউলিস কাপ' জয়ী হয় ইস্টবেঙ্গল। এর পরেই ক্লাব পৌঁছে যায় ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (IFA) লিগের দ্বিতীয় স্থানে।
গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব
- 1924 সালে ইস্টবেঙ্গল দ্বিতীয় ডিভিশন লিগে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই সময় শীর্ষস্থানে থাকত মাত্র দু'টি দল। সেটি হল মোহনবাগান ও আরিয়ানস। কিন্তু, পরবর্তীকালে ইস্টবেঙ্গল সেই জায়গায় ঢুকে পড়ে।
- শুরু থেকেই কলকাতায় দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলা শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু, প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যে ক্লাবটি পৌঁছে যায় প্রথম ডিভিশনে। এরপর 1925 সালের 28 মে প্রথম আয়োজিত হয় ডার্বির। সেখানে মোহনবাগানকে 1-0 গোলে হারায় ইস্টবেঙ্গল।
- এরপর 1945 সালে প্রথম ময়দান লিগ জয়ী হয় ইস্টবেঙ্গল। এর পরের বছরই 1943 সালে প্রথমবার IFA শিল্ড জয় করে ক্লাব। 1945 সালে লিগ ও শিল্ড জয়ের দ্বৈত সম্মান অর্জন করে ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচে B.B.C.I. রেলওয়ের বিরুদ্ধে 11-0 গোল করে সর্বোচ্চ রেকর্ড করে ক্লাব। এরপর 1946 সালে কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে স্বামী নায়ার 36টি গোল করে রেকর্ড করেন। 1949-'50 সালের মধ্যে টানা তিনবার IFA শিল্ড নিজেদের ঝুলিতে পোরে ইস্টবেঙ্গল।
- 1948 সালে চাইনিজ় অলিম্পিক XI-এ ইস্টবেঙ্গল প্রথমবার বিদেশি ক্লাবের সঙ্গে খেলে। সেখানে সুইডেনের FC গোথেবুর্গ ক্লাবের বিরুদ্ধে খেলে 2-0 গোলে এবং 1951 সালে 1-0 গোলে জয়ী হয় ক্লাব। 1970 সালে ইরানের PAS ক্লাবের বিরুদ্ধে 1-0 গোল করে IFA শিল্ড জয় করে ইস্টবেঙ্গল। এরপর 1973 সালে উত্তর কোরিয়ার ইয়ংইয়ং সিটি ক্লাবকে হারিয়ে ফের শিল্ড জয় লাল-হলুদের।
- 1997 সালের 13 জুলাই সল্টলেকের যুবভারতীতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে বাইচুং ভুটিয়ার হ্যাটট্রিকের সাক্ষী ছিল 1.31 লাখ দর্শক। সেখানে মোহনবাগানকে 4-1 গোলে হারায় লাল-হলুদ বাহিনী।
- 1996 সালে প্রথম জাতীয় লিগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে ইস্টবেঙ্গল। জাতীয় ফুটবল লিগে ইস্টবেঙ্গল তৃতীয় স্থান অর্জন করে। পরবর্তী দুটি মরশুমেও ইস্টবেঙ্গল রানার-আপ হয়। NFL-র পঞ্চম মরশুমে ইস্টবেঙ্গল প্রথম জয়লাভ করে।
- কলকাতায় আসিয়ান কাপে ইরাকের আল জ়াওয়ারা ক্লাবকে 6-2 গোলে হারায় লাল-হলুদ বাহিনী। 2003 সালে জাকার্তার মাটিতে আসিয়ান কাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে এই ক্লাব । AFC কাপে ইস্টবেঙ্গল তিনবার খেলার সুযোগ পায়। 2004 সালে এই কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছায় ক্লাব।
ইস্টবেঙ্গলের গুরুত্বপূর্ণ ট্রফি
- LG আসিয়ান কাপ -1
- জাতীয় ফুটবল লিগ - 3
- ফেডারেশন কাপ - 8
- সুপার কাপ - 3
- কলকাতা ফুটবল লিগ - 38
- IFA শিল্ড - 28
- দূরন্ত কাপ - 16
- রফার্স কাপ - 10
- DCM - 7
- মহামেডান জুবিলি কাপ - 1
- এস এম ইন্টারন্যাশনাল কাপ নেপাল - 1
বর্তমানে ক্লাবের জটিল সময়
ইস্টবেঙ্গলের খারাপ সময় শুরু হয় বাণিজ্যিক সংস্থা কোয়েস গ্রুপের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পর। কোয়েসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙে ক্লাব। এরপর নতুন বিনিয়োগকারী খোঁজা শুরু করে তারা। মোহনবাগান ISL-র সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় চাপ বাড়ে লাল-হলুদ শিবিরেও। তবে, দীর্ঘ জল্পনার পরেও এবছর ISL-এ অংশ নিচ্ছে না বলে জানিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ।
ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সব থেকে বেশি সময় খেলেছেন মেহতাব হোসেন, লালরিন্দিকা রালতে, অর্ণব মণ্ডল, কাভিন লোডো এবং হরমনজোৎ খাবরা। বর্তমানে ক্লাবের শীর্ষ খেলোয়াড়ের তালিকায় নাম রয়েছে সামদ মল্লিক, অভিষেক আম্বেকার, আশের আখতার, মির্শাদ কে মিচু, মিঠুন সামন্ত-র।