হায়দরাবাদ, 3 অক্টোবর: আর কয়েকদিন বাদেই শুরু হতে চলেছে 'বাইশগজের বিশ্বযুদ্ধ' ৷ অপেক্ষা মাত্র কয়েকটা ঘণ্টার ৷ ক্রিকেটে সাধারণত একসময় বলা হত বোলাররা নাকি 'লেবার ক্লাস' ৷ কিন্তু বোলিংও যে গ্ল্যামারাস হতে পারে তা প্রমাণ করেছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, ওয়াসিম আক্রম, অনিল কুম্বলে, শেন ওয়ার্ন, মুথাইয়া মুরলিধরনরা ৷ ঠিক যেমন ক্রিকেটে একসময় বেশ অবহেলিত ছিল ফিল্ডিং ৷ ভারতীয় ক্রিকেটেও এর দৃষ্টান্ত কম নেই ৷ কিন্তু জন্টি রোডস থেকে আজকের রবীন্দ্র জাদেজারা প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিয়েছেন 'ক্যাচেস উইন ম্যাচেস' ৷ আর একটা ক্য়াচ যে কত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বিশ্বকাপ হেরে তার খেসারত একদিন দিতে হয়েছিল প্রোটিয়া বাহিনিকে ৷ 1999 সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ৷ স্টিভ ওয়ার ক্যাচ সেদিন তালুবন্দি করতে পারেননি হার্সেল গিবস ৷ তারই স্টিভ তাঁর কাছে গিয়ে বলেন, "ভাই তুমি হাত থেকে ম্যাচটাই ফেলে দিলে ৷" আজ ফিরে দেখব বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এমনই কিছু অসম্ভব ক্যাচ নিয়ে যা আজও লেগে রয়েছে সকলের চোখে ৷
শেলডন কটরেল: সালটা ছিল 2019 ৷ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন ক্যারিবিয়ানরা ৷ এই ম্যাচেই এমন একটি দুরন্ত ক্যাচ তালুবন্দি করেন ফাস্ট বোলার শেলডন যা সকলের চোখ কপালে তুলে দেয় ৷ জোরে বোলাররা নাকি ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে একটু মাঝারি মানের হন ৷ এই প্রচলিত তত্ত্বকে পুরোপুরি ভুল প্রমাণ করে সেদিন এক নতুন ইতিহাস লেখেন কটরেল ৷ ওসিয়ান থমাসের বলটা এগিয়ে এসে বাউন্ডারির বাইরেই পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন স্মিথ ৷ কিন্তু দূর থেকে ছুটে গিয়ে সীমানার ধারে এই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি তালুবন্দি করেন শেলডন ৷ প্রায় বাউন্ডারি টপকে যাওয়া বলটিকে প্রথমে বাঁ হাতের ছোঁয়ায় সীমানার ভিতরে আনেন তিনি ৷ তারপর নিজে সীমানার ভিতরে এসে তালুবন্দি করেন বলটিকে ৷ ফলতো 73 রানের ইনিংস শেষ করে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল স্মিথকে ৷
ডোয়েন লেভেরক: একটি অবিশ্বাস্য ক্যাচ কীভাবে ইতিহাস হয়ে যেতে পারে সেকথা বলতে গেলে অবশ্য়ই মনে পড়বে 2007 সালে ভারত বনাম বারমুডা ম্যাচটির কথা ৷ ম্যাচে রবিন উথাপ্পা তখন ব্যাট করছিলেন মাত্র 3 রানে ৷ ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপের দিকে ৷ আর শরীরটাকে বাজপাখির মতো ছুঁড়ে দিয়ে এক হাতে এই ক্যাচ তালুবন্দি করেন বিশাল বপু ডোয়েন লেভেরক ৷ তাঁর সেই অবিশ্বাস্য ক্যাচটি আজও ভাইরাল সোশালে ৷
জেসি রাইডার: সালটা ছিল 2011 ৷ কিউয়ি অলরাউন্ডার জেসি রাইডার এই বিশ্বকাপে একটি অবিশ্বাস্য ক্যাচ তালুবন্দি করেন ৷ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিনি তখন ফিল্ডিং করছিলেন পয়েন্টে ৷ টিম সাউদির বল পয়েন্টের উপর দিয়ে বাউন্ডারির দিকে পাঠাতে চেয়েছিলেন উপল থরাঙ্গা ৷ কিন্তু রাইডার শূণ্যে লাফিয়ে উঠে বাঁ হাতে তালু বন্দি করেন এই ক্যাচটি ৷
অজয় জাদেজা: ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তাঁর ক্ষীপ্র ফিল্ডিংয়ের জন্য় বিখ্যাত ছিলেন অজয় জাদেজা ৷ 1992 সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন অ্যালেন বর্ডারের যে ক্যাচটি তিনি তালুবন্দি করেন ক্রিকেটের ইতিহাসে আজও সমান জনপ্রিয় ৷ কপিল দেবের বলে বড় শট নিতে চেয়েছিলেন বর্ডার ৷ কিন্তু কানায় লেগে বল উঁচুতে উঠে যায় ৷ বেশ অনেকটা দূর থেকে ছুটে এসে এই ক্যাচটি লুফেছিলেন অজয় ৷
আরও পড়ুন: ফিরে দেখা কপিলের ব্যাটে বিশ্বকাপের সেরা ইনিংস, যার কোনও ভিডিয়ো ফুটেজ নেই
কপিল দেব নিখাঞ্জ: একটা ক্যাচ ঠিক কতটা অমূল্য হতে পারে কপিল দেব তা টের পেয়েছিলেন লর্ডসের ময়দানে ৷ 1983 সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস যেন একাই ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব নিয়ে বসেছিলেন ৷ তাঁর একের পর এক শটে একটু একটু করে যখন ভেঙে চুরমার হতে বসেছে ভারতের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন তখনই মদনলালের বলে একটি ভুল শট নিয়ে বসেন স্য়ার ভিভ ৷ পিছন দিকে ছুুটে সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে কোনও ভুল করেননি তৎকালীন ভারত অধিনায়ক ৷ আর সেই ক্যাচই যে ভারতের ভাগ্য বদলে দেয় তা বলাই বাহুল্য ৷