কলকাতা, 27 অক্টোবর: আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ 31 অক্টোবর ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের হাইভোল্টেজ ম্যাচ ৷ প্রতিবেশী দুই দেশের ক্রিকেটারদের সুরক্ষায় কোনও ফাঁকফোঁকড় রাখছে না কলকাতা পুলিশ ৷ তবে অতিথি যেহেতু পাকিস্তান, তাই একটু বেশিই তৎপর লালবাজার ৷ খেলার ময়দানে যাতে বলিউডি ফিল্ম 'গদর'-এর আবেগ মাথাচাড়া না-দেয়, তার জন্য চোখ-কান খোলা রাখছেন নিরাপত্তা কর্মীরা ৷ পাকিস্তানের এক নম্বর ক্রিকেটার বাবর আজমের জন্য থাকছে বেনজির সতর্কতা ৷ এর আগে, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, শাহিদ আফ্রিদি বা শোয়েব আখতারদের কলকাতা সফরের সময়ও এতটা নিরাপত্তার কড়াকড়ি করা হয়নি ৷
লালবাজার সূত্রের খবর, বাবর আজম শহরের যে হোটেলে থাকবেন, সেই হোটেলের বিশেষ ঘরে শুধু বাছাই করা কয়েকজন লোককেই প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়েছে । বাবর আজম ইডেন গার্ডেন্সে যখন ফিল্ডিং করবেন, সে সময় গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে কোনও প্রকারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হলে কিংবা অন্য কোনও কারণে নিরাপত্তা বিঘ্নিত যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে, যথা সময়ে দর্শক আসনের সামনেও পৌঁছে যাবে কলকাতা পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিট । এভাবেই সাজানো হয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ৷
এই বিষয়ে সরাসরি ভাবে লালবাজারের তরফ থেকে কোনও তথ্য সামনে আনা না হলেও, নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একজন অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক ইটিভি ভারতকে বলেন,
"এই প্রকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগে কখনও হয়েছে বলে আমার জানা নেই । কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজমের জন্য সঠিক কী নিরাপত্তা ব্যবস্থার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, এই বিষয়ে আমরা এক ফোঁটা তথ্য বাইরে আনতে নারাজ । তাতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে ।"
পারফরম্যান্সের নিরিখে ভারতেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে পাক অধিনায়কের ৷ যদিও বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বেশ ব্যাকফুটেই রয়েছে পাকিস্তান ৷ প্রশ্নের মুখে পড়েছে বাবর আজমের অধিনায়কত্বও ৷ ভারতের কাছে তো বটেই, আন্ডারডগ আফগানিস্তানের মতো দলের কাছেও তাদের হার মানতে হয়েছে ৷ এই অবস্থায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে বাবর আজমের দল ৷ সে ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন পাক অধিনায়ক ৷ পুলিশের অনুমান, এ রকম কিছু হলে দর্শকরা এগিয়ে এসে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করতে পারেন বা তাঁকে জড়িয়ে ধরতে পারেন ৷ সেই সময় কোনওভাবে যদি পাক অধিনায়কের গায়ে একটা আঁচড়ও লাগে, তবে তার ক্ষত দু-দেশের সম্পর্কের তিক্ততা আরও বাড়াবে ৷ সেই কারণেই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না পুলিশের শীর্ষ কর্তারা ৷
আরও পড়ুন: ব্যাঘ্রবাহিনীকে সমর্থনে গাড়ি বিক্রি, বাংলাদেশকে তাতাচ্ছেন টাইগার শোয়েব
প্রতিবেশী হলেও কালে কালে ক্রমে বেড়েছে ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা ৷ সমস্যার মূলে নিঃসন্দেহে রয়েছে কাশ্মীর ৷ আর তার সঙ্গেই জড়িয়ে সন্ত্রাস ইস্যু ৷ এর ফলে দু-দেশের কূটনৈতিক তেতো সম্পর্কের রেশ গিয়ে পড়েছে ক্রীড়াক্ষেত্রেও ৷ পরিস্থিতি এমনই যে, বর্তমানে বড় কোনও টুর্নামেন্ট ছাড়া দ্বিপাক্ষিক কোনও সিরিজ খেলে না ভারত ও পাকিস্তান ৷ এশিয়া কাপের সময়ও ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট নিরাপত্তার কারণে পাকিস্তানে দল না পাঠানোয় অনেক জলঘোলা হয়েছিল ৷ তবে ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপের আবহে পরিস্থিতি কিছুটা সহজ হয়েছে ৷ দল পাঠিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ৷ কাজেই এই পরিস্থিতিতে সে দেশের ক্রিকেটারদের সুরক্ষার দায়িত্ব একটা বড় চ্যালেঞ্জ পুলিশের কাছে ৷
দেশের অন্যান্য জায়গায় মতোই ইডেন গার্ডেন্সে পাকিস্তানের ম্যাচ নিয়েও বাড়তি তৎপর পুলিশ ৷ বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলার জন্য কলকাতা পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে । তবে, সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পাক অধিনায়ক বাবর আজমের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ৷ লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার পাকিস্তান ক্রিকেট দল যখন দমদম বিমানবন্দর থেকে হোটেলের উদ্দেশে যাবে, সেখান থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজমের জন্য তৈরি থাকা কলকাতা পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী নিজেদের চার্জ নিয়ে নেবে ।
সূত্রের খবর, বাবর আজমের জন্যই শুধু দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে । থাকছে কলকাতা পুলিশের স্যাফের (স্পেশাল অ্যাকশন ফোর্স) বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো বাহিনী । এরা মোটামুটি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বাবর আজমের সামনের সারিতে থাকবেন বলে জানা গিয়েছে । প্রসঙ্গত, 2015 সালে পাকিস্তানের মাটিতেই ওয়াসিম আক্রমের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছিল ৷ তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান ৷ কাজেই পাক ক্রিকেটারদের নিরাপত্তাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি কলকাতা পুলিশের ৷ তাদের একটাই লক্ষ্য, বৈরিতা, কূটনৈতিক টানাপোড়েন, তপ্ত আবহের বাইরে বেরিয়ে ইডেন গার্ডেন্সে জিতুক ক্রিকেট ৷
আরও পড়ুন: ছন্দে ফিরতে ছোটবেলার কোচের পরামর্শ নিয়ে ইডেনে দলে যোগ শাকিবের