কলকাতা, 16 অক্টোবর: 2006 সাল, জোহানেসবার্গ ক্রিকেট স্টেডিয়াম ৷ প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা ৷ ‘প্রিন্স অফ কল্যাকাটা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠে ৷ 51 রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে আবারও ক্রিকেট বিশ্বকে জানিয়েছিলেন, তিনি শেষ হয়ে যাননি ৷ তার 6 মাস আগে তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে শুধু নয় ৷ ক্রিকেট মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ৷
কাট টু 2022, আর একবার ধাক্কা খেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এ বার প্রশাসক সৌরভ ৷ যেখানে নিজেকে ক্রিকেটারের প্রশাসক বলা সৌরভকে বিসিসিআই (BCCI) সভাপতি পদে আরও একটা সময়কাল থাকার সুযোগই দেওয়া হল না ৷ বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (Board of Control for Cricket in India) দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রশাসক সৌরভের জন্য ৷ কার্যত অনাড়ম্বরভাবে ৷
তবে, নামটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ 1992 অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে কোনও এক ভারতীয় ক্রিকেটারের জুতো বইতে না চাওয়া থেকে, 1996 সালে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার মতো জেদ আজও বজায় রয়েছে তাঁর মধ্যে ৷ সেই পুরনো খিদে এবং আবেগ আজও বজায় রয়েছে ৷ যা সেই সময় তাঁকে ফিরে আসতে সাহায্য করেছিল ৷ তেমনি শোনা যাচ্ছে, ক্রিকেট প্রশাসনে কামব্যাকের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন তিনি ৷ আর সেটা করছেন প্রশাসক হিসাবে তাঁর হাতে খড়ি হওয়া ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল থেকে ৷ শোনা যাচ্ছে, 31 অক্টোবর সিএবি’র বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতি পদে নির্বাচন হলে, সেখানে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly All Set to Be Back as Administrator) ৷
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ না দেওয়াতেই কি বিসিসিআইয়ে ব্রাত্য সৌরভ, উঠছে প্রশ্ন
এই খেলাটা 22 অক্টোবর পর্যন্ত চলবে ৷ কারণ, এই দিনটি সিএবি নির্বাচনে মনোনয়ন পেশের শেষদিন ৷ ওই দিনটা পেরলেই স্পষ্ট হবে, সিএবি সভাপতি পদে নির্বাচন হবে কিনা ৷ সিএবি’র একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানাচ্ছে, সৌরভ তখনই মনোনয়ন পেশ করবেন, যখন সভাপতি পদে নির্বাচন হবে ৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই সূত্রের মতে, ‘‘যদি, বিপক্ষ শিবির থেকে একটিও মনোনয়ন জমা পড়ে, সেক্ষেত্রে সৌরভ কোনও ঝুঁকি নেবেন না ৷ আর যদি কোনও নির্বাচন না হয় ৷ সেক্ষেত্রে সৌরভ পিছিয়ে যাবেন এবং তাঁর দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে সিএবি সভাপতি পদে বসাবেন ৷ আর তিনি হবেন, ‘কিং মেকার’ ৷’’
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর পরিকল্পনা তৈরি করেই নেমেছেন ৷ যদি নির্বাচন হয় তবে, সিএবি’র প্যানেল হবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় শিবির থেকে ৷ আর তার রূপরেখা খানিকটা এইরকম, সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সিএবি সচিব হবেন প্রবীর চক্রবর্তী, দেবব্রত দাস হবেন যুগ্ম-সচিব, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় সহ-সভাপতি এবং নরেশ ওঝা হবেন কোষাধ্যক্ষ ৷
আরও পড়ুন: সিএবি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি সৌরভের
তবে, আরও একটি পরিসংখ্যান কাজ করছে ৷ যেখানে বলা হচ্ছে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সিএবি সভাপতি হলে, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় হয়তো বা প্রবীর চক্রবর্তী এবং নরেশ ওঝা এই দু’জনের মধ্যে একজনের জায়গায় সচিব পদে বসতে পারেন ৷ আর সিএবি’র অর্থনৈতিক কমিটির প্রধান বিবেক রুইয়া কোষাধ্যক্ষের পদে বসতে পারেন ৷
তবে, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সিএবি সভাপতি হওয়ার সুযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না ৷ যদি কোনও নির্বাচন না হয় এবং এ সবই গুজব হিসাবে সামনে আসে তবে, স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ই পূর্ব ঘোষণা মতো সিএবি সভাপতি হবেন ৷ আর বাকিরা যেমন ছিলেন তেমনি থাকবেন ৷
আরও পড়ুন: সিএবি’র বার্ষিক সাধারণ সভা 31 অক্টোবর! প্রশাসনে ফের রাজ করতে পারে ‘টিম’ সৌরভ
তবে, উল্লেখ না করলেই নয় যে, বিশ্ব মজুমদারের নামও সিএবি প্রশাসনের অলিন্দে শোনা যাচ্ছে ৷ বলা হচ্ছে, বিশ্ব মজুমদারও বিপক্ষের তরফ থেকে তাঁর মনোনয়ন পেশ করতে পারেন সভাপতি পদে ৷ তবে, পুরোটাই নির্ভর করছে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ৷ তাঁর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলেই বিশ্ব মজুমদার সিএবি নির্বাচনে মনোনয়ন পেশ করবেন ৷ তবে, শোনা যাচ্ছেন এই সিএবি নির্বাচন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দল হাত তুলে নিতে পারেন ৷ কারণ, ইতিমধ্যেই বিসিসিআই সভাপতি পদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করেছে তাঁর দল ৷ ফলে সিএবি-তে সৌরভের বিপক্ষে কোনও প্রার্থী দেওয়ার অনুমতি তৃণমূল সুপ্রিমো অন্তত দেবেন বলে মনে করছে না ওয়াকিবহালমহল ৷