কলকাতা, 11 মার্চ: কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারতের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ের নেপথ্যে পারফরম্যান্সই একমাত্র কারণ নয়। হাসিখুশি ড্রেসিংরুম এবং টিম মিটিংয়ে অধিনায়ক কপিলদেবের ইংরেজি বলার প্রচেষ্টার মধ্যেই তৈরি হয়েছিল দলের একাত্মতা ৷ কলকাতায় এসে জানালেন তিরাশির বিশ্বজয়ী দলের অন্যতম সদস্য সন্দীপ পাতিল। শনিবার 'ক্রিকেট ইয়ার বুক'-এর 25 বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি (Sandeep Patil shared behind the success story of 1983 WC)।
প্রাক্তন ক্রিকেটার, নির্বাচক প্রধানের মতে তিরাশির বিশ্বজয়ের জন্য জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে অধিনায়ক কপিলদেবের অপরাজিত 175 যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ অখ্যাত জিম্বাবোয়ের কাছে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার হার। সেদিক থেকে জিম্বাবোয়ের জায়ান্ট কিলার হয়ে ওঠাতেই ভারতের পথ সুগম হয়ে গিয়েছিল। সন্দীপ পাতিলের সরল স্বীকারোক্তি, "জিম্বাবোয়ে সেবার অস্ট্রেলিয়াকে না হারালে আমরা সেমিফাইনালে যেতে পারতাম না, ইতিহাসও লেখা হত না হয়ত ৷" সেই সময়ের মারকুটে ব্যাটসম্যানের তকমা ছিল তাঁর গায়ে। আপাতভাবে গাম্ভীর্যের আড়ালে তা মুড়ে রাখলেও সন্দীপ পাতিলের রসবোধ যথেষ্ট। তাই তিনি যখন ভারতীয় ড্রেসিংরুমের অজানা গল্প সামনে নিয়ে আসলেন তখন বিশ্বজয়ী দলের সদস্যের কথায় প্রেক্ষাগৃহ হেসে উঠেছিল শুনে।
প্রাক্তন ক্রিকেটারের বলেন, "তিরাশির দলকে একসূত্রে বাঁধতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল অধিনায়ক কপিলদেবের ইংরেজিতে টিমমিটিং! জানি না কপিল কেন ইংরেজিতে বলত ! তবে, বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ওটাই করে গিয়েছিল ও ৷ ফলে যা হত, ওর বলা শেষ হলেই আমরা জড়ো হতাম সুনীলের কাছে, ক্যাপস কী বলেছে বুঝতে ! আমরা এখনও মাঝেমধ্যেই দেখা করি। আর ক্যাপসকে বলি, ও কী বলত তখন আমাদের বোঝাতে ! কিন্তু সত্যিই বলছি, হাসিঠাট্টায় সাজঘরের পরিবেশটা এতটাই ভাল ছিল যে, পরিবার হয়ে উঠেছিলাম আমরা। এখনও সেই সম্পর্কই আছে আমাদের।"
ব্যাটসম্যান পাতিলের মতোই অকুতোভয় বিশেষজ্ঞ পাতিলও। বর্তমান সময়ের ক্রিকেট তিনি টেলিভিশনে দেখেন না। টিম ইন্ডিয়ার যাবতীয় খবর রাখেন সংবাদপত্রের মাধ্যমে ৷ তবে নিজের সময়ের গল্প বলতে তিনি রাজি। কপিল এবং সুনীল দুই নেতার তুলনা করতে গিয়ে পাতিল বলছেন, "সুনীল রক্ষণাত্মক অধিনায়ক ছিল, আর কপিল আক্রমণাত্মক। পার্থক্য সেটাই।"
আরও পড়ুন: 'সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে', মোতেরায় শতরানকারী গিলের প্রশংসায় মহারাজ
জীবনে একটিই সিনেমা করেছিলেন 'কভি আজনবি থে'। তারপর আর সিলভার স্ক্রিনে দেখা যায়নি। ওই ছবিতে পাতিল ছিলেন নায়ক ৷ একই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন সৈয়দ কিরমানিও ৷ কেন আর সুদর্শন ক্রিকেটারকে পর্দায় দেখা গেল না। পাতিল বললন, "প্রযোজকরা আর ঝুঁকি নেয়নি, না হলে আমি তো এখনও চাই সিনেমার পর্দায় নিয়মিত জায়গা পেতে ৷" আপাতত সেই দুঃখে প্রলেপ পড়েছে। '83'তে অভিনয় করে সেই দুঃখ ভুলিয়েছেন চিরাগ ৷
সবশেষে হাসতে হাসতে জানালেন, বাংলা ভোলেননি ৷ যেটুকু বাংলা শিখেছিলেন বা বুঝতে পারেন সেটাও ওই সিনেমার কারণেই। 'কভি অজনবি থে' ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন দেবশ্রী রায়! অনেক কিছুই সন্দীপ পাতিলের জানা এই কলকাতার। মারকুটে প্রাক্তন ব্যাটার তাই বাংলার চেনা। তিনিও চেনেন বাঙালির আবেগকে।