হায়দরাবাদ, 23 ডিসেম্বর : বয়স 37-এর কোঠায় হলেও ক্রিকেট কেরিয়ার নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই ৷ নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর চোটের সুযোগে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়েছিলেন কেএস ভরত ৷ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংস খেলেছিলেন ঋষভ পন্থ ৷ কিন্তু ভারতীয় দলের পুরনো যোদ্ধা ঋদ্ধিমান সাহা, উঠতি তরুণ ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী নন ৷ বরং সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে ঘাড়ের যন্ত্রণা নিয়ে কানপুরে দ্বিতীয় ইনিংসে 61 রানের ইনিংস খেলেছেন ৷ দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পারলেই খুশি বাংলার এই উইকেটকিপার ব্যাটার ৷
কানপুর টেস্টের পর অনেকেই বলতে শুরু করেন, ঋদ্ধিমানের কেরিয়ারের পুনরুত্থান হল ৷ কিন্তু এই ভাবনায় একমত নন তিনি ৷ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিক জয়, দলের নতুন কোচ রাহুল দ্রাবিড় মুম্বই টেস্টের আগে দলকে কী বলেছিলেন ? এমন বেশ কিছু বিষয়ে ইটিভি ভারতের কাছে খোলামেলা ধরা দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা ৷
প্রশ্ন : নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজকে কীভাবে দেখছেন?
ঋদ্ধিমান : আমি সবসময় দলকে এগিয়ে রাখি । প্রথম ম্যাচটি আমাদের মনের মতো হয়নি ৷ কিন্তু দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে আমরা বেশ ভালভাবে ফিরে এসেছি । আমি খুশি যে, দলের প্রয়োজনে অবদান রাখতে পেরেছি ৷
প্রশ্ন : কানপুর টেস্টে নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন কীভাবে করবেন ?
ঋদ্ধিমান : আমি কে যে নিজের খেলার বিশ্লেষণ করব ? দল আমাকে যা করতে বলে আমি তাই করি । নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করার জায়গায় আমি নেই । সর্বোত্তম উপায়ে অবদান রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি । আমার পারফরম্যান্সের বিশ্লেষণ এখন দর্শকদের উপর নির্ভর করছে ৷
প্রশ্ন : নবনিযুক্ত কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
ঋদ্ধিমান : কোচ হিসেবে এটি ছিল তাঁর প্রথম সিরিজ । তাই এ সম্পর্কে সাত তাড়াতাড়ি মন্তব্য করাটা ঠিক নয় ৷ তবে আমি যা লক্ষ্য করেছি তা হল রাহুল ভাই প্রস্তুতির সময় কিছুই ফেলে রেখে যান না । ছোট ছোট এমন কিছু বিষয়ের কথা মনে করিয়ে দেন যা অনুশীলনের সময় পার্থক্য গড়ে দেয় ৷
প্রশ্ন : কানপুর টেস্টে পারফরম্যান্সের পর আপনাকে বিশেষভাবে কিছু বলেছিলেন ?
ঋদ্ধিমান : পার্টনারশিপ গড়ে তুলতে বলেছিলেন ৷ এবং আমরা তাঁর নির্দেশকে কার্যকর করার চেষ্টা করেছি । ওই ইনিংসের পর দলের জয়ের জন্য আমার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন ।
প্রশ্ন : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উইকেটকিপার হিসেবে প্রথম পছন্দ এখন ঋষভ পন্থ ৷ কেএস ভরতও উঠে এসেছেন ৷ এসবের মাঝে আপনি কি কখনও নিরাপত্তাহীন বোধ করেছেন ?
ঋদ্ধিমান : দেখুন, দল নির্ধারণ করার দায়িত্ব নির্বাচকদের । এই বিষয়টিতে আমাদের হাত নেই ৷ আমি যেটা করতে পারি তা হল, সুযোগ পেলেই সেরাটা দিতে পারি ।
প্রশ্ন : ব্যাট হাতে পন্থের ম্যাচ জেতানো ইনিংসের পর আপনিও কি পুনরায় নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন অনুভব করেছেন ?
ঋদ্ধিমান : আমি আমার শৈশবের দিনগুলিতে, ক্লাবে এবং রাজ্যস্তরে যা শিখেছি, এখনও আমি সেভাবে অনুশীলন করি ৷ এবং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করি । অন্য কেউ রান করছে বলেই আমি রান করার চাপ নিই না । আমি একটু ভিন্ন ৷ ঋষভের খেলার ধরন এবং সম্ভাবনা আলাদা । আমরা দু'জন এক নই ৷
প্রশ্ন : রোহিত শর্মাকে ওয়ান ডে ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব এবং টেস্টে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়ার পর ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা এখন কেমন ?
ঋদ্ধিমান : দিনের শেষে এটা নির্বাচকদের সিদ্ধান্ত ৷ কে অধিনায়ক বা কে সহ-অধিনায়ক তা প্রাধান্য পায় না ৷ কারণ একটা দল হিসেবে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এসেছি ৷ ড্রেসিংরুমের পরিবেশ আগের মতোই আছে ৷ দলের মূল উদ্দেশ্য হল ভাল পারফর্ম করা ৷ রোহিত বিশ্বমানের ক্রিকেটার ৷ দীর্ঘদিন ধরে ও ভারতীয় দলের হয়ে অবদান রেখে চলেছে ৷ আমরা একটি দল হিসেবে ভাল জায়গায় আছি ৷ তার মানে এটা নয় যে নতুন কোনও খেলোয়াড় এলে তার সঙ্গে কথা বলব না । আমরা দলের প্রত্যেককে সম্মান করি ।
প্রশ্ন : বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরাজয় কতটা বেদনাদায়ক ছিল ?
ঋদ্ধিমান : আমরা পুরো ম্যাচে ভাল খেলেছি ৷ কিন্তু শেষ দিনে পারফর্ম করতে পারিনি ৷ যার ফলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হেরে গিয়েছি । রাহুল ভাই মুম্বই টেস্টে আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমরা সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের কাছে অনেকবার পরাজিত হয়েছি ৷ তাই পরাজয়ের অনুভূতিটা কেমন হবে তা নিউজিল্যান্ডকে বোঝাতেই হবে ৷ সম্ভবত, এই কারণেই আমরা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছি ৷
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আয়ুষ্মান পাণ্ডে