ETV Bharat / sports

খেলোয়াড়ি জীবনের ইতিহাস ভুলে বিশ্বকাপে 'দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা'র নতুন রূপকথা লিখবেন রাহুল ?

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 17, 2023, 9:28 PM IST

Updated : Nov 17, 2023, 11:05 PM IST

ICC World Cup 2023: খেলোয়াড় হিসাবে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার তেজটা কাছ থেকে টের পেয়েছিলেন তিনি ৷ অনুর্ধ্ব-19 দলের কোচ হিসাবে এই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই ফাইনাল জেতার রণকৌশল তৈরি করেছিলেন ৷ এবার কি কোচ হিসাবে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারবেন রোহিত শর্মাদের হেডস্যর রাহুল দ্রাবিড় ৷

ICC World Cup 2023
দ্রাবিড়িয় সভ্যতার নতুন রূপকথা লিখবেন রাহুল

হায়দরাবাদ, 17 নভেম্বর: টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন থেকে রাহুল দ্রাবিড় সবসময় লাইম লাইটের পেছনে । 2003 সালে অধিনায়কের অনুরোধে উইকেটরক্ষক হয়েছেন । ব্যাট হাতে তিনি সবসময় মধুসূদন দাদা । বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবে পিছিয়ে যাননি । চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন । নিজস্ব ক্রিকেটীয় দর্শন রোহিত-কোহলিদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন । তাই নিখুঁত অর্কেষ্ট্রার মত বাজছে টিম ইন্ডিয়া । মহারণের আগে 'দ্য ওয়াল'কে ভূয়সী প্রশংসায় ভরালেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । মহারাজের কথায়, “এটাই দ্রাবিড়। সবকিছু নিখুঁত ভাবে করতে চায় ।”

সালটা ছিল 2018 ৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ছোটদের দলের দায়িত্ব নিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড় ৷ তাঁর হাত ধরে তখন তৈরি হচ্ছেন শুভমন গিল, ঈশান পোড়েলের মতো ক্রিকেটাররা ৷ বিশ্বকাপ সফরে অজেয় থেকে ট্রফি হাতে তুলেছিল পৃথ্বী শয়ের দল ৷ নিউজিল্যান্ডে এই বিশ্বকাপের স্কোরকার্ডে চোখ রাখলেই ছবিটা পরিষ্কার হবে । বিশাল বিশাল ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছিল অনুর্ধ্ব-19 দল । সেবার অস্ট্রেলিয়াকে 100 রানে, পাপুয়া নিউগিনিকে 10 উইকেটে, জিম্বাবোয়েকে 10 উইকেটে, বাংলাদেশকে 131 রানে হারায় ভারত ৷ সেমিফাইনালে তো পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেননি গিলরা ৷ পাকিস্তানকে তাঁরা হারান 230 রানে ৷ আর তারপর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া 8 উইকেটে ধরাশায়ী ।

সেদিন রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে তৈরি ভারতীয় দল আগামীর বার্তা শুনিয়েছিল জয়ের খিদে এবং ধরনে । সেই দলের গিল এখন খেলছেন সিনিয়র দলে ৷ আবার প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া ৷ “অক্রিকেটীয় শট না খেলা, অদম্য জয়ের ইচ্ছে আর স্বচ্ছ সাবলীল খেলা”, এই তিন মন্ত্রে সেদিন এসেছিল সাফল্য ৷ এরপর ভারতীয় শিবিরেও শুরু হয় দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা ৷ কানের পাশে চুলে একটু পাক ধরেছে ৷ বয়সটা পৌঁছে গিয়েছে হাফ-সেঞ্চুরির কাছাকাছি ৷ এই রাহুল একদিন দলের জন্য হাতে তুলেছিলেন কিপিং গ্লাভস ৷ তেমনই এবার তুলে নেন হেডস্যরের দায়িত্ব ৷ প্রশাসকের চেয়ারে বসে সেদিন সেই কাজটা করেছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । ভারতীয় ক্রিকেটকে ফের সাফল্যের আলোয় নিয়ে আসতে কোচের চেয়ারে বসিয়ে ছিলেন দ্রাবিড়কে । কোহলিকে নেতার পদ থেকে সরিয়ে রোহিত শর্মার হাতে ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন । সৌরভের সেই দুই পদক্ষেপের ফসল আজ পাচ্ছে ভারত ৷

চলতি বিশ্বকাপেও ভারতের কৌশলের পিছনে রয়েছে দ্রাবিড়ীয় নীতি, বুঝে নিতে কোনও অসুবিধা হয় না ৷ শুরু থেকে তুবড়ি জ্বালাচ্ছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা । কার্যত তাঁর ভূমিকা যেন এক সুইসাইড বম্বারের মতো ৷ যিনি একের পর সেঞ্চুরি হাফ-সেঞ্চুরি মাঠে ছেড়ে আসছেন ঠিকই তবে তার আগেই ব্যাটিং তুফানে প্রতিপক্ষ নাস্তানাবুদ ৷ সঙ্গতে শুভমান গিল । ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির নতুন গিরিশৃঙ্গের নাম বিরাট কোহলি । সচিন তেন্ডুলকরের মাইলস্টোন টপকে নতুন নজির ইতিমধ্যেই গড়েছেন তিনি । শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটেও রানের ফোয়ারা । উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে আর সামনে ব্যাট হাতে কেএল রাহুল যেন ভরসার নতুন সংজ্ঞা । অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিচ্ছেন, নির্ভুল ডিআরএস নিতে সাহায্য করছেন ৷ ঠিক যেন রোহিত শর্মার 'তৃতীয় নয়ন ।'

ফিল্ডিংয়ে পুষিয়ে দিচ্ছেন সূর্যকুমার যাদব । হার্দিক পান্ডিয়ার হঠাৎ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া বুঝতে দিচ্ছেন না রবীন্দ্র জাদেজা । ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন 2011 সালের যুবরাজ সিংহের কথা । কুলদীপ যাদবের স্পিনের জাল, জসপ্রীত বুমরার গতি, মহম্মদ সিরাজের পারফরম্যান্স সাফল্য ব্যর্থতার মেলবন্ধন । মহম্মদ শামির সিমে উইকেটের বন্যা ৷ আপাতত 23টি শিকার করে ফেলেছেন চলতি বিশ্বকাপেই । তিন বিশ্বকাপে আপাতত মোট শিকার সংখ্যা 54 । এই মসৃণ জয়ের পেছনে দক্ষ কম্পোজারের মত বিনিসুতোয় নীরবে নিভৃতে বেঁধে রাখছেন ব্যান্ডমাস্টার রাহুল দ্রাবিড় । স্বভাবসিদ্ধ বিনম্র অঙ্গুলিহেলনে । সাফল্যের যাবতীয় আলো যাতে ক্রিকেটারদের ওপরই পড়ে সেটাই একমাত্র লক্ষ্য ।

চিরকালই তিনি 'সেকেন্ড বয়' ৷ সচিন-সৌরভদের ঊজ্জ্বল আলোর পাশে নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়া ক্লাসের 'গুড বয়' ৷ যদিও টেস্ট হোক বা ওয়ান ডে দলের ক্রাইসিস ম্যানেজার হতে হয়েছে বারবার ৷ 2001 সালের ইডেন হোক বা 2003 সালের অ্যাডিলেড ৷ দলের জন্য বুক চিতিয়ে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িছেন তিনি বারবার ৷ টেস্টে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে ট্রফি ছিনিয়ে আনতে ৷ কিন্তু 2003 সালে জোহানেসবার্গে পারেননি ৷ দু'দশক আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল এই অজি-বাহিনী ৷ বঙ্গতনয় সৌরভের নেতৃত্বে তরুণ দল উজার করে দিয়েছিল নিজেদের ৷ রূপকথা লেখা হবে জোহনাসবার্গে ৷ আশা করেছিলেন অনুরাগীরা ৷

কিন্তু অস্ট্রেলিয়া নকআউট পর্যায়ে কতটা ভয়ংকর তা টের পেয়েছিলেন দ্রাবিড় ৷ রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্টরা সেদিন ছেলেখেলা করেছিলেন জাহির খান, হরভজন সিংদের নিয়ে ৷ অ্যাডাম গিলক্রিস্টের 48 বলে 57, রিকি পন্টিংয়ের 121 বলে অপরাজিত 140, মার্টিনের 84 বলে অপরাজিত 88 ভারতের বোলিংকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল । তৃতীয় উইকেটে পন্টিং-মার্টিনের জুটিতে 30.1 ওভারে তুলেছিলেন 234 রান । ফলে 359 রান তাড়া করতে নেমে আত্মসমর্পন ছাড়া আর উপায় ছিল না ভারতের সামনে ৷ বীরেন্দ্র সেওয়াগের 81 বলে 82 আর দ্রাবিড়ের 57 বলে 47 যথেষ্ট ছিল না দলকে জয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য । ভারত হেরেছিল 124 রানে ৷ পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে স্বপ্নের ক্রিকেট খেলা বাঙালি অধিনায়কের 'টিম ইন্ডিয়া'র ব্যর্থতা যেন হয়ে উঠেছিল জাতীয় শোক দিবস ।

পরে 2011 সালে সেমিতে ভারত হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে ৷ কিন্তু সেই দলে রাহুল ছিলেন না ৷ খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক হিসাবে তাঁর বিশ্বকাপের ট্রফি ছোঁয়া হয়নি ৷ রানার্স আপ মেডেল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে ৷ এবার কি কোচ হিসাবে রাহুল পারবেন কাপ এনে দিতে ৷ উত্তর দেবে রবিবারের আমেদাবাদ ৷ তবে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা তিনি নিশ্চই শেয়ার করতে পারবেন রোহিত শর্মাদের সঙ্গে ৷

আরও পড়ুন:

  1. 'ধোনি রিভিউ সিস্টেম' যখন 'ডিসিশন রাহুল সিস্টেম'
  2. বাংলার মাটিতে উত্থানের গল্প ভোলেননি, সিএবি'র জন্য এবার পেসার তৈরি করবেন শামি

হায়দরাবাদ, 17 নভেম্বর: টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন থেকে রাহুল দ্রাবিড় সবসময় লাইম লাইটের পেছনে । 2003 সালে অধিনায়কের অনুরোধে উইকেটরক্ষক হয়েছেন । ব্যাট হাতে তিনি সবসময় মধুসূদন দাদা । বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাবে পিছিয়ে যাননি । চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন । নিজস্ব ক্রিকেটীয় দর্শন রোহিত-কোহলিদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন । তাই নিখুঁত অর্কেষ্ট্রার মত বাজছে টিম ইন্ডিয়া । মহারণের আগে 'দ্য ওয়াল'কে ভূয়সী প্রশংসায় ভরালেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । মহারাজের কথায়, “এটাই দ্রাবিড়। সবকিছু নিখুঁত ভাবে করতে চায় ।”

সালটা ছিল 2018 ৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ছোটদের দলের দায়িত্ব নিয়েছেন রাহুল দ্রাবিড় ৷ তাঁর হাত ধরে তখন তৈরি হচ্ছেন শুভমন গিল, ঈশান পোড়েলের মতো ক্রিকেটাররা ৷ বিশ্বকাপ সফরে অজেয় থেকে ট্রফি হাতে তুলেছিল পৃথ্বী শয়ের দল ৷ নিউজিল্যান্ডে এই বিশ্বকাপের স্কোরকার্ডে চোখ রাখলেই ছবিটা পরিষ্কার হবে । বিশাল বিশাল ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়েছিল অনুর্ধ্ব-19 দল । সেবার অস্ট্রেলিয়াকে 100 রানে, পাপুয়া নিউগিনিকে 10 উইকেটে, জিম্বাবোয়েকে 10 উইকেটে, বাংলাদেশকে 131 রানে হারায় ভারত ৷ সেমিফাইনালে তো পাকিস্তানকে দাঁড়াতেই দেননি গিলরা ৷ পাকিস্তানকে তাঁরা হারান 230 রানে ৷ আর তারপর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া 8 উইকেটে ধরাশায়ী ।

সেদিন রাহুল দ্রাবিড়ের হাতে তৈরি ভারতীয় দল আগামীর বার্তা শুনিয়েছিল জয়ের খিদে এবং ধরনে । সেই দলের গিল এখন খেলছেন সিনিয়র দলে ৷ আবার প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া ৷ “অক্রিকেটীয় শট না খেলা, অদম্য জয়ের ইচ্ছে আর স্বচ্ছ সাবলীল খেলা”, এই তিন মন্ত্রে সেদিন এসেছিল সাফল্য ৷ এরপর ভারতীয় শিবিরেও শুরু হয় দ্রাবিড়ীয় সভ্যতা ৷ কানের পাশে চুলে একটু পাক ধরেছে ৷ বয়সটা পৌঁছে গিয়েছে হাফ-সেঞ্চুরির কাছাকাছি ৷ এই রাহুল একদিন দলের জন্য হাতে তুলেছিলেন কিপিং গ্লাভস ৷ তেমনই এবার তুলে নেন হেডস্যরের দায়িত্ব ৷ প্রশাসকের চেয়ারে বসে সেদিন সেই কাজটা করেছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । ভারতীয় ক্রিকেটকে ফের সাফল্যের আলোয় নিয়ে আসতে কোচের চেয়ারে বসিয়ে ছিলেন দ্রাবিড়কে । কোহলিকে নেতার পদ থেকে সরিয়ে রোহিত শর্মার হাতে ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন । সৌরভের সেই দুই পদক্ষেপের ফসল আজ পাচ্ছে ভারত ৷

চলতি বিশ্বকাপেও ভারতের কৌশলের পিছনে রয়েছে দ্রাবিড়ীয় নীতি, বুঝে নিতে কোনও অসুবিধা হয় না ৷ শুরু থেকে তুবড়ি জ্বালাচ্ছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা । কার্যত তাঁর ভূমিকা যেন এক সুইসাইড বম্বারের মতো ৷ যিনি একের পর সেঞ্চুরি হাফ-সেঞ্চুরি মাঠে ছেড়ে আসছেন ঠিকই তবে তার আগেই ব্যাটিং তুফানে প্রতিপক্ষ নাস্তানাবুদ ৷ সঙ্গতে শুভমান গিল । ওয়ান ডে ক্রিকেটে সেঞ্চুরির নতুন গিরিশৃঙ্গের নাম বিরাট কোহলি । সচিন তেন্ডুলকরের মাইলস্টোন টপকে নতুন নজির ইতিমধ্যেই গড়েছেন তিনি । শ্রেয়স আইয়ারের ব্যাটেও রানের ফোয়ারা । উইকেটের পিছনে গ্লাভস হাতে আর সামনে ব্যাট হাতে কেএল রাহুল যেন ভরসার নতুন সংজ্ঞা । অবিশ্বাস্য ক্যাচ নিচ্ছেন, নির্ভুল ডিআরএস নিতে সাহায্য করছেন ৷ ঠিক যেন রোহিত শর্মার 'তৃতীয় নয়ন ।'

ফিল্ডিংয়ে পুষিয়ে দিচ্ছেন সূর্যকুমার যাদব । হার্দিক পান্ডিয়ার হঠাৎ চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া বুঝতে দিচ্ছেন না রবীন্দ্র জাদেজা । ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন 2011 সালের যুবরাজ সিংহের কথা । কুলদীপ যাদবের স্পিনের জাল, জসপ্রীত বুমরার গতি, মহম্মদ সিরাজের পারফরম্যান্স সাফল্য ব্যর্থতার মেলবন্ধন । মহম্মদ শামির সিমে উইকেটের বন্যা ৷ আপাতত 23টি শিকার করে ফেলেছেন চলতি বিশ্বকাপেই । তিন বিশ্বকাপে আপাতত মোট শিকার সংখ্যা 54 । এই মসৃণ জয়ের পেছনে দক্ষ কম্পোজারের মত বিনিসুতোয় নীরবে নিভৃতে বেঁধে রাখছেন ব্যান্ডমাস্টার রাহুল দ্রাবিড় । স্বভাবসিদ্ধ বিনম্র অঙ্গুলিহেলনে । সাফল্যের যাবতীয় আলো যাতে ক্রিকেটারদের ওপরই পড়ে সেটাই একমাত্র লক্ষ্য ।

চিরকালই তিনি 'সেকেন্ড বয়' ৷ সচিন-সৌরভদের ঊজ্জ্বল আলোর পাশে নীরবে নিজের কাজ করে যাওয়া ক্লাসের 'গুড বয়' ৷ যদিও টেস্ট হোক বা ওয়ান ডে দলের ক্রাইসিস ম্যানেজার হতে হয়েছে বারবার ৷ 2001 সালের ইডেন হোক বা 2003 সালের অ্যাডিলেড ৷ দলের জন্য বুক চিতিয়ে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িছেন তিনি বারবার ৷ টেস্টে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে ট্রফি ছিনিয়ে আনতে ৷ কিন্তু 2003 সালে জোহানেসবার্গে পারেননি ৷ দু'দশক আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল এই অজি-বাহিনী ৷ বঙ্গতনয় সৌরভের নেতৃত্বে তরুণ দল উজার করে দিয়েছিল নিজেদের ৷ রূপকথা লেখা হবে জোহনাসবার্গে ৷ আশা করেছিলেন অনুরাগীরা ৷

কিন্তু অস্ট্রেলিয়া নকআউট পর্যায়ে কতটা ভয়ংকর তা টের পেয়েছিলেন দ্রাবিড় ৷ রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্টরা সেদিন ছেলেখেলা করেছিলেন জাহির খান, হরভজন সিংদের নিয়ে ৷ অ্যাডাম গিলক্রিস্টের 48 বলে 57, রিকি পন্টিংয়ের 121 বলে অপরাজিত 140, মার্টিনের 84 বলে অপরাজিত 88 ভারতের বোলিংকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল । তৃতীয় উইকেটে পন্টিং-মার্টিনের জুটিতে 30.1 ওভারে তুলেছিলেন 234 রান । ফলে 359 রান তাড়া করতে নেমে আত্মসমর্পন ছাড়া আর উপায় ছিল না ভারতের সামনে ৷ বীরেন্দ্র সেওয়াগের 81 বলে 82 আর দ্রাবিড়ের 57 বলে 47 যথেষ্ট ছিল না দলকে জয়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য । ভারত হেরেছিল 124 রানে ৷ পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে স্বপ্নের ক্রিকেট খেলা বাঙালি অধিনায়কের 'টিম ইন্ডিয়া'র ব্যর্থতা যেন হয়ে উঠেছিল জাতীয় শোক দিবস ।

পরে 2011 সালে সেমিতে ভারত হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে ৷ কিন্তু সেই দলে রাহুল ছিলেন না ৷ খেলোয়াড় এবং অধিনায়ক হিসাবে তাঁর বিশ্বকাপের ট্রফি ছোঁয়া হয়নি ৷ রানার্স আপ মেডেল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে ৷ এবার কি কোচ হিসাবে রাহুল পারবেন কাপ এনে দিতে ৷ উত্তর দেবে রবিবারের আমেদাবাদ ৷ তবে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা তিনি নিশ্চই শেয়ার করতে পারবেন রোহিত শর্মাদের সঙ্গে ৷

আরও পড়ুন:

  1. 'ধোনি রিভিউ সিস্টেম' যখন 'ডিসিশন রাহুল সিস্টেম'
  2. বাংলার মাটিতে উত্থানের গল্প ভোলেননি, সিএবি'র জন্য এবার পেসার তৈরি করবেন শামি
Last Updated : Nov 17, 2023, 11:05 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.