কলকাতা, 24 নভেম্বর: জনপ্রিয়তা তাঁর আগেও ছিল ৷ তবে বিশ্বকাপের পর তা আকাশছোঁয়া হয়েছে ৷ এ বারের বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট শিকারী মহম্মদ শামিকে জড়িয়ে ধরে বাহবা দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ ভারতীয় দলের এই পেসারকে নেট মাধ্যমে খোলাখুলি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়ে ফেলেছেন বাঙালি অভিনেত্রী পায়েল ঘোষ ৷ কেরিয়ারে উজ্জ্বল সময় চললেও, তা প্রভাব ফেলেনি তাঁর ব্যক্তিজীবনে ৷ মহম্মদ শামির প্রতি ক্ষোভ এতচুল কমেনি তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহানের ৷ তাঁর চোখে অত্যন্ত নোংরা মানুষ মহম্মদ শামি ৷ তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের নক্ষত্র হলেও, তাঁর ক্লাস থ্রি-এর কন্যার তাঁর খেলার প্রতি কোনও আগ্রহ নেই ৷ মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে এমনই নানা বিস্ফোরক কথা ইটিভি ভারতের কাছে তুলে ধরলেন তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহান ৷ জানালেন তাঁর জীবন সংগ্রামের কথা ৷ তিনি আপাতত বিশ্বাস রাখছেন বাংলার এক অতি প্রাচীন প্রবাদের উপর, 'ভগবানের মার, দুনিয়ার বার ৷'
মহম্মদ শামি এবং হাসিন জাহানের বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার কথা এই মুহূর্তে কারওরই অজানা নয় । আর নামটা যেখানে মহম্মদ শামি, সেখানে সাধারণের আগ্রহ থাকা অস্বাভাবিক নয় । মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় যাদবপুরে থাকেন শামির মডেল তথা অভিনেত্রী স্ত্রী হাসিন । এই মুহূর্তে নিজের কেরিয়ার, মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন তিনি ? হাসিন বলেন, "কেস নিয়ে আমাকে একাই ছোটাছুটি করতে হচ্ছে ৷ তার উপরে বাচ্চাকে একা মানুষ করছি । এলাহাবাদে কেস চলছে, হাইকোর্ট, লোয়ার কোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট - সব জায়গার মামলার ঝক্কি একা সামালাতে হচ্ছে । বাবা-মা আমার কাছ থেকে 250 কিলোমিটার দূরে বীরভূমে থাকেন । ওঁরা অসুস্থ । ভাইটা করোনাতে মারা গেল । কে থাকবে আমার পাশে ? আমার একার লড়াই আমি একাই লড়ছি । তাই এখনই কাজে ফেরার কথা কিছু ভাবতে পারছি না ৷"
বিশ্বকাপে 7 ম্যাচ খেলে 21টি উইকেট নিয়েছেন মহম্মদ শামি ৷ তবে তাঁর এই সাফল্য এসেছে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ককে সঙ্গী করেই ৷ কারণটা সকলেরই জানা । হাসিন জাহানের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে তাঁর । কেকেআর চিয়ার লিডারদের দলে হাসিন জাহানের সঙ্গে প্রথম দেখা শামির । এরপর সুন্দরী হাসিনের প্রেমে পড়ে যান তিনি । হাসিনের এটি দ্বিতীয় বিয়ে । সব জেনেশুনেই ভারতীয় মডেল হাসিনকে বিয়ে করেন শামি । তবে তাঁদের ছয় বছরের সংসার ভাঙনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ।
প্রসঙ্গত, বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দলের হারের পর নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন হাসিন জাহান । সেই ভিডিয়ো দেখেই ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রশ্ন তোলেন, তবে কি ফাইনালে হেরে যাওয়া শামিকে একহাত নিতেই এই পোস্ট হাসিনের ? এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসিন বলেন, "আমি এ বারের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখিনি । আমার আগ্রহও ছিল না । এই নিয়ে অনেক কথা আমাকে অনেকবার বলতে হচ্ছে । তাতে আমার অসুবিধা নেই । তবে, আমার খুব খারাপ লাগে যে, আমার সব কথা শোনার পরেও আমার আর শামির এই সম্পর্কের টানাপোড়েনের ব্যাপারে সেই আমাকেই ভিলেন বানানো হচ্ছে । সমাজের কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ কিছু না বুঝে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছেন । আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, কিছু মিডিয়া হাউস শামির হয়ে কাজ করছে । শামির নামের সঙ্গে সেলেব ট্যাগ আছে, তাই সে নিরপরাধী । আর আমি ভিলেন । অথচ আমাকে কত কিছু সইতে হয়েছে তা প্রায় সকলেরই জানা । সব জেনেও টিআরপি বাড়াতে আমাকে ভিলেন বানানো হচ্ছে । শামির ক্ষমতা আছে ৷ আর তাই ওর পাশে আছে ইন্ডিয়ান মিডিয়া ।"
হাসিন আরও বলেন, "শামি ভেবেছিল আমি ওর বিরুদ্ধে কোনওদিন যাব না । কেননা ওর ক্ষমতা আছে । ওর সেলেব তকমা আছে । তার উপরে আমার দ্বিতীয় বিয়ে ছিল এটা । ভেবেছিল, ওকে ছাড়া কোনও রাস্তা নেই আমার । ভেবেছিল, আমি রাস্তায় ভিক্ষা করব । তাও ওর বিপক্ষে যাব না । কিন্তু আমার পক্ষে আর সহ্য করা সম্ভব ছিল না। আমি আর আমার মেয়ে মরেও যেতে পারতাম । ভেবেছিল, আমার মানসম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে । আমি সেটা হতে দিইনি । আমি যে এতকিছু করে ফেলব ভাবেনি শামি ।"
উল্লেখ্য, হিংসার অভিযোগ তথা বধূ নির্যাতনের অভিযোগ এনে 2018 সালে শামির বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতে মামলা রুজু করেছিলেন তাঁর স্ত্রী হাসিন জাহান। আজ প্রায় চার বছর ধরে মামলাটি বিচারাধীন । এশিয়া কাপের পরেই শামিকে আদালতে হাজিরা দিতে হয় । তিনি ও তাঁর দাদা মহম্মদ হাসিম আলিপুর আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন, শামি ও তাঁর দাদার জামিন মঞ্জুর করেছিল আদালত । 2 হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডেই শামি এবং তাঁর দাদা জামিন পেয়েছিলেন ।
হাসিনের অভিযোগের ভিত্তিতে এরপর বিসিসিআই থেকে মহিলা কমিশন, কলকাতা পুলিশ সকলেই জেরা এবং তদন্ত করে শামির ব্যাপারে । জনতার কথায়, গোটা দেশের সামনে শামিকে ভিলেন বানানোর নিরলস চেষ্টা করছেন হাসিন জাহান ৷ ও দিকে, হাসিন শামির বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন, "ওকে সেন্ট্রাল কন্ট্রাক্ট থেকে সরিয়ে বিসিসিআই যখন গলা টিপে ধরল, তখন চোখে জল নিয়ে নাটক করে বলেছিল, 'আমি সংসার ভাঙতে দিতে চাই না।' আর বিসিসিআই ওকে ফ্রি করে দেওয়ার পরেই বলল, 'অব তো ম্যায় ইসে কোর্ট মে দেখুঙ্গা।' আমি ওর অওকত জানি খুব ভালোভাবে । শামি কতটা নোংরামি করতে পারে আমি খুব ভালো জানি । ওর ফাঁদে আমি আর পা দেব না । যতদিন না কোর্টের প্রচুর প্রেশার ওর উপরে আসবে ততদিন ও অসভ্যতা চালাবে । ওর ঐশ্বরিক মার দরকার । কর্ম কারওকে ছেড়ে কথা বলে না । ফল সে পাবেই । আমি অপেক্ষায় রইলাম সেই দিনটার।"
মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করায় হাসিন বলেন, "আরিয়া ক্লাস থ্রি-তে পড়ে । খেলাধুলোর প্রতি ওর কোনও আগ্রহই নেই । নাচতে ভালোবাসে । ও যেটা নিজের মন থেকে হতে চাইবে আমি সেটাতেই সায় দেব ।"
আরও পড়ুন: