প্রিয় রানা,
শীতকাল এলেই মনে পড়ে তোদের কথা ৷ ভালো আছিস আশা করি ৷ এবারও পিকনিকে যাওয়া হল না ৷ এখন কলকাতায় থাকলেও মনটা আমার চন্দননগরেই পড়ে থাকে ৷ ছোটবেলাটা কি সুন্দরই ছিল আমাদের, বল ! কত দুষ্টুমি করেছি আমরা ৷ ক্রিকেটের ব্যস্ত ক্রীড়াসূচি, অফিসের কাজ সব মিলিয়ে সময়ই পাই না এখন ৷
সেদিন পোপের দুষ্টুমি দেখে টাইম মেশিনে করে নিজের ছোটবেলায় ফিরে গিয়েছিলাম ৷ মনে আছে আমাদের নৌকা চালানো শেখার অভিজ্ঞতাটা ? ধানক্ষেতের আল ধরে গিয়ে গঙ্গার ধারের মাঠটায় সবাই মিলে আড্ডা দিতাম আমরা ৷ তখনই চোখে পড়েছিল ওই লোকটাকে ৷ নামটা মনে পড়ছে ? আমি ভুলে গিয়েছি ৷ তবে, চেহারাটা মনে আছে ৷ কালো, গাট্টাগোট্টা চেহারা ছিল ৷ নৌকাটা গাছের সঙ্গে বেঁধে, হালটা লুকিয়ে কাজে চলে যেতেন ৷ কাজটা যে ভালো করত না তা বুঝতে পেরেছিলাম ৷ তবে, সেটা কতটা খারাপ কাজ বোঝার মত বুদ্ধি আমাদের ছিল না ৷ আমাদের টানত ওর নৌকাটা ৷ মনে আছে লুকিয়ে রাখা হালটা তুই খুঁজে পেয়েছিলি ৷ তারপর বাঁধন খুলে গঙ্গায় নৌকা চালানো ৷ জোয়ার-ভাটার গঙ্গায় নৌকা চালানো যে ঝুঁকির সেদিন বুঝিনি ৷ শুধু ভেসে বেড়ানোর রোমাঞ্চটাই নৌকা বাইতে সাহস জুগিয়েছিল ৷ সাতদিনের মধ্যে আমরা নৌকা বাইতে শিখে গিয়েছিলাম ৷ আমাদের মধ্যে তুই সবচেয়ে ভালো নৌকা বাইতি ৷
যেদিন ধরা পড়েছিলাম, মনে আছে ৷ সেদিন আরও অনেক বন্ধুকে ডেকেছিলাম আমরা ৷ দেরিও হয়ে গিয়েছিল সেদিন ৷ দূর থেকে দেখেছিলাম লোকটা দাঁড়িয়ে আছেন ৷ আমাদের চিৎকার করে গালাগালি করছিলেন ৷ অবস্থা সুবিধার নয় বুঝে নৌকা ঘুরিয়ে পাশের ঘাটে ভিড়িয়ে ছিলাম ৷ তারপর কাদা টপকে দৌড় ৷ লোকটাও আমাদের ধরতে পারেনি ৷ তবে, পরের দিন থেকে একজনকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল ৷ যাতে ফের নৌকা নিয়ে যেতে না পারি ৷ সেদিন রোমাঞ্চ লেগেছিল ৷ এখন ভাবলে ভয় ভয় করে ৷
আরও পড়ুন: প্রিয় কাশ্মীর ... ভূস্বর্গকে 'শীতের চিঠি' ভাস্বরের
শীত নিয়ে আমার আরেকটি স্মৃতি আছে ৷ ভারতীয় এ দলের হয়ে নিউজিল্যান্ডে খেলতে গিয়ে বুঝেছিলাম, ঠান্ডা কতটা মারাত্মক হতে পারে ৷ ড্রেসিংরুমে হিটার চালিয়ে রাখতে হচ্ছিল ৷ ঠাণ্ডার সঙ্গে প্রচণ্ড হাওয়া ছিল ৷ ব্যাট করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম, হাওয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট করা কত শক্ত ৷ জোরে বল মারলেও যাচ্ছিল না ৷ আবার হাওয়ার পক্ষে ব্যাট করার সময় বল লাগলেই দ্রুত চলে যাচ্ছিল ৷ ওই অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতে হয়েছিল আমাকে ৷
ক্রিকেটের বাইরে ট্রেকিং করতে যাই আমি ৷ দারুণ লাগে ৷ ফিটনেস বজায় থাকে ৷ সেবার সোনালি, পোপকে নিয়ে উত্তরাখণ্ডে ট্রেক করতে গিয়ে অভিজ্ঞতাটা দারুণ হয়েছিল ৷ হঠাৎ করে হাওয়া বদলে বৃষ্টি নামে ৷ দ্রুত তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছিলাম ৷ রাত যত গড়ায় ঠান্ডা তত বাড়ছিল ৷ সঙ্গে বৃষ্টি ৷ তারপর বৃষ্টির ফোঁটা আর কোথায় ! পরিবর্তে শিলা পড়ছে ৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে শিলাগুলো গলে যাচ্ছিল না ৷ পোপ প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিল ৷ পরে দারুণ উপভোগ করে ৷ ওর হাসি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছিল ৷ এই ছোট ছোট স্মৃতি আমার শীতকালকে উষ্ণ আর স্মৃতিমেদুর করে তোলে ৷ অনেকদিন দেখা হয় না ৷ চল একদিন আড্ডা মারি ৷ ভালো থাকিস ৷
ইতি-
রুকু(অনুষ্টুপ)
আরও পড়ুন: বিভুঁই থেকে মাকে শীতের চিঠি পাঠিয়েছিলেন বাঙালি লেখক...