কলকাতা, 27 মে : সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কী ICC চেয়ারম্যান হতে পারেন? এই প্রশ্নটি এখনও ক্রিকেটমোদীদের মধ্যে প্রবলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে । বর্তমান ICC চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর মেয়াদ শেষ। তার জায়গায় আসবেন ECB চেয়ারম্যান টমাস গ্রেভসই । তার মনোনয়নের বিষয়ে 17টি ক্রিকেটীয় দেশ সম্মতি দিয়েছে বলে খবর । যদিও তা ICC-র তরফে সরকারি ভাবে স্বীকার করা হয়নি। কারণ ICC-র বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত তা বলা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের টার্ম থাকে । এবার সেই টার্ম ইংল্যান্ডের । সেদিক থেকে টমাস গ্রেভসই এর ক্রিকেটের মসনদে বসা মসৃণ হওয়া উচিত । যদি না অন্য কোনও দেশ প্রার্থী দিয়ে বসে । আর এখান থেকেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ICC-র চেয়ারম্যান হওয়ার জল্পনা শুরু।
নিয়ম অনুসারে এই পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য ICCর দুটো বৈঠকে অংশ নেওয়া জরুরি । আগামী বৈঠকে যোগ দেওয়ার অর্থ সৌরভের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই । ইতিমধ্যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে একপ্রস্থ কথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের হয়েছে । ICC-র চেয়ারম্যান হওয়ার ক্ষেত্রে ক্রিকেট রাজনীতির একটি বিষয় থাকে । সেখানে ভারত 14-3 কিংবা 10-7 ব্যবধানে এগিয়ে ।
ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং পাকিস্তানের ভোট ছাড়া যাবতীয় ক্রিকেটীয় দেশ ভারতকে সমর্থন করবে। কারণ ভারত ক্রিকেট বিশ্বের সোনার রাজহাঁস । তার খেলা না খেলার উপরে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভাঁড়ারের অবস্থা নির্ভর করে। চলতি বছরের শেষে দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার কথা বিরাট কোহলিদের । কোরোনা ভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে সেই সফরের ওপর কোনও আঁচ পড়তে দিতে রাজি নয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া । সেক্ষেত্রে টি-20 বিশ্বকাপ আয়োজন হাতছাড়া হলেও তাদের আপত্তি নেই। কারণ কোহলি ব্রিগেড দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেললেও টিভি রাইটস থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কোষাগারে ঢুকবে । শ্রীলঙ্কা বোর্ড চায় প্রতিবছর অন্তত একটি করে সিরিজ কোহলিরা তাদের দেশে খেলুন । তাহলেই তাদের কোষাগারে অভাব থাকবে না।
টি-20 বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যদি সত্যি না হয় তাহলে ভারত হয়তো 2021সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়তে পারে । সেক্ষেত্রে BCCI 2022সালে বিশ্বকাপ ভারতের মাটিতে আয়োজনের প্রস্তাব দিতে পারে। কারণ ওই বছর আইসিসির কোনও টুর্নামেন্ট নেই । 2023 সালের 50 ওভারের বিশ্বকাপ ভারতে হওয়ার কথা । এই প্রস্তাব পাশ করার মাধ্যমে ক্রিকেটীয় রাজনীতিতে টেক্কা দেওয়ার ভাবনা BCCI কর্তাদের রয়েছে।
যার খেলা না খেলায় অন্য ক্রিকেট বোর্ডের কোষাগারের স্বাস্থ্য নির্ভর করে তাদের দাদাগিরি তো চলবেই। এখানেই অন্যদের আপত্তি । তবে তা ডালপালা ছড়ানোর সম্ভাবনা কম । ইতিমধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ICC চেয়ারম্যান দেখতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। সেই তালিকায় ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ারও রয়েছেন ।
কেন সৌরভ কেন সবার কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী ?
1)সৌরভ একজন প্রাক্তন অধিনায়ক, যার নেতৃত্বগুণ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ।
2) সবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো।
3) সৌরভ মসনদে বসলে ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে দৌত্য করা ICC র পক্ষে সহজ হবে।
এখন প্রশ্ন হল সৌরভ কী নিজে ICC-র চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী হবেন ?
এই বিষয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট মুখ খোলেননি । তবে যারা তাঁকে খুব কাছ থেকে জানেন তারা বলছেন সৌরভ এখনই এই প্রস্তাবে রাজি হবেন না। পরিস্থিতি বিচার করে তারপরেই সিদ্ধান্ত নেবেন। দশমাসের জন্য তিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের মসনদে বসেছেন । যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৮ জুলাই । এই অবস্থায় তাঁর এবং বোর্ডের পদাধিকারীদের মেয়াদ বাড়বে কি না তা এখনও স্থির হয়নি । যদিও বোর্ডের বর্তমান পদাধিকারীদের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে সকলে সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে । এর আগে এই ব্যাপারে শুনানির তারিখ মেলেনি । আশা করা হচ্ছে হয়তো জুন মাসে সুপ্রিম কোর্ট তার রায় জানাবে । তা ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে আশা করা হচ্ছে ।
"রায় কি হবে তা তো আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। তবে পরিস্থিতি বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্তের আশা করতেই পারি,"বলছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন আইনজীবী উষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায় । গত কয়েক মাসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন । বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটের আর্থিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে জোর দিয়েছেন, যাতে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা ক্রিকেটাররা আর্থিক ভাবে নড়বড়ে না থাকেন । একজন প্রাক্তন ক্রিকেটার হওয়ায় সর্বস্তরের ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা সৌরভকে আরও বেশি ক্রিকেটীয় পরিকাঠামোর উন্নয়নের পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করেছে । তাছাড়া সৌরভের মত ব্যক্তিত্বরা আলঙ্কারিক পদের চেয়ে হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ রয়েছে এমন পদ পছন্দ করেন । সেদিক থেকে ICC-র চেয়ারম্যান পদ নামে ভারী হলেও তার কাজ করার সুযোগ কম । তাছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট যেহেতু আর্থিকভাবে বিশ্ব ক্রিকেটের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক ফলে ICC-কেও তাই BCCIএর ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়। অর্থাৎ দাদাগিরির সুযোগ থাকছেই । ফলে সুপ্রিম কোর্ট মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় "মিশন ICC চেয়ারম্যান" প্রসঙ্গটি দুই বছর পরে চিন্তা করতেই পছন্দ করবেন।