কলকাতা, 17 মে: কোরোনা ভাইরাসের মারণ থাবা মানুষের স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে এসেছে বিপুল পরিবর্তন । এই পরিবর্তন কিছু মানুষের জন্য ভালো । তবে বেশিরভাগে জন্য কোরোনা অভিশাপ বয়ে নিয়ে এসেছে । প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইয়ের ছবি আদতে মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম গল্পকে সামনে নিয়ে এসেছে । তাই ক্রিকেট আম্পায়ারকে যখন উপার্জনের আশায় ফল এবং সবজির পাইকারি বিক্রেতা হতে হয় তখন ক্রিকেটীয় গ্ল্যামার ধুয়ে যায় ।
নাম প্রশান্ত ঘোষ । বয়স 55 । পেশায় ক্রিকেট আম্পায়ার । স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার । ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল কিন্তু অর্থাভাবে তা হয়ে ওঠেনি । তবে ক্রিকেটের প্রতি প্রেমটা তার রয়ে গেছে । তাই আম্পায়ারিং করে বাইশ গজের কাছে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন প্রশান্তবাবু । গত কুড়ি বছরের বেশি সময় ধরে CAB-র গ্রেড ওয়ান আম্পায়ার প্রশান্ত ঘোষ । মরশুমে 80 দিন বা তার থেকে সামান্য কয়েকটাদিন বেশি ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব পান । পাশাপাশি স্পেস সার্কেল, স্প্রিং ক্লাব সহ একাধিক জায়গায় ইনডোর ক্রিকেট, কর্পোরেট ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করে স্বাচ্ছন্দেই জীবন কাটাচ্ছিলেন প্রশান্তবাবু । আউটডোর ক্রিকেট বন্ধ হলেই ইনডোর ক্রিকেট শুরু হয় । সেখানে সম্মান দক্ষিণা যথেষ্ট ভালো । প্রশান্তবাবু যে ইনডোর ক্রিকেটে ম্যাচ পরিচালনা করেন তা সকলেই জানেন । কিন্তু কোরোনা পরিস্থিতিতে সবকিছু স্তব্ধ । ময়দানে বল গড়াচ্ছে না । ফলে আম্পায়ারিং করার সুযোগ নেই । প্রশান্ত ঘোষের কথায়, "খেলা তো বন্ধ । তাই ম্যাচ খেলিয়ে উপার্জনও বন্ধ। এই অবস্থায় বসে থেকে সমস্যা মিটবে না । কিছু করে উপার্জন তো করতে হবে । তাই প্রথমে সবজির বিক্রি করেছি । এখন লিচু এবং পেয়ারা পাইকারি বিক্রি করছি ।"
বারুইপুরের শাসন স্টেশনে নেমে 5 কিলোমিটার দূরে শিমরুলখালি গ্রামে থাকেন প্রশান্তবাবু । এখন বর্তমানে বারুইপুরেই রয়েছেন দক্ষিণ 24 পরগনার এই অঞ্চল পেয়ারা এবং লিচুর জন্য বিখ্যাত । এছাড়া বেগুন, বরবটিরও চাষ হয় । প্রশান্ত ঘোষ বলছেন, "আমি গ্রামের ছেলে । ছোটবেলা থেকে চাষাবাদ দেখে বড় হয়েছি । ক্রিকেটের টানে এই দিকে ভিড়ে যায়নি । এখন ক্রিকেট বন্ধ । তাই উপার্জনের জন্য সবজি,ফলের পাইকারি বিক্রি করছি ।" বারুইপুর বাজার,কাছারি বাজারে পাইকারি হারে সবজি এবং ফল বিক্রি করছেন তিনি ।
আম্পায়ার হিসেবে বেশ পরিচিত মুখ প্রশান্ত ঘোষ । CAB-র ঘরোয়া ক্রিকেটের সব টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন । বোর্ডের আম্পায়ার হওয়া হয়নি কারণ তাঁদের সময় এত ঘনঘন পরীক্ষা হত না । তবে IPL-এর প্রস্তুতি ম্যাচ পরিচালনা করেছেন । আর পাঁচ বছর পরে আম্পায়ারিং থেকে অবসর নিতে হবে । তবে এই বয়সে কোরোনা ভাইরাসের কারণে বিরাট শিক্ষা পেয়েছেন বলে জানালেন সাইমন টাফেলের ভক্ত । লকডাউন উঠে অবস্থা ফের স্বাভাবিক হলে ক্রিকেট মাঠে ফিরবেন বছর 55-র মানুষটিও । তাঁর কথায়, "ক্রিকেট ছেড়ে থেকে থাকতে পারব না । তাই মাঠে বল গড়ালে আমিও ময়দানে ফিরব ।"