লন্ডন, 15 জুলাই : কিউয়ি বাবা-মার সন্তান স্টোকসের জন্ম ক্রাইস্টচার্চে । 12 বছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন নিউজ়িল্যান্ডেই । পরে আসেন ইংল্যান্ডে । সেখানেই গড়েন নিজের ক্যারিয়ার । তবে শেষ হতে বসেছিল তাঁর ক্যারিয়ার । গত বছর ব্রিস্টলে নাইট ক্লাবে মারপিট করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন । যার জেরে স্টোকসকে জাতীয় দল থেকে চির নির্বাসনে পাঠানোর প্রস্তাবও উঠেছিল । খুব বেশি দিন হয়নি জাতীয় দলে ফিরেছেন তিনি । আর এখন দলের মধ্যমণি সেই কলঙ্কিত স্টোকস । কারণ তিনি লড়াই না করলে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের স্বাদ পাওয়া হত না ইংল্যান্ডের ।
84 রানের অপরাজিত ইনিংসেই কাজটা শেষ হয়নি । এরপর সুপার ওভারেও ব্যাট হাতে নেমেছেন । শেষ পর্যন্ত তাঁর লড়াইয়ের ফলস্বরূপ ইংল্যান্ড জিতেছে । তিনি হয়েছেন ম্যান অফ দ্য ফাইনাল । সেই পুরস্কার যখন নিতে এলেন, তখনও তাঁর গলা কাঁপছে, "কী বলব, ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না । গত চার বছর ধরে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি শুধু এই মুহূর্তটার জন্য । সেটি আবার এমনভাবে হল, আমার মনে হয় না ক্রিকেট ইতিহাসে এমন ম্যাচ আবার কখনও হবে ।"
নিউজ়িল্যান্ড পুরো বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে সীমিত পুঁজি নিয়েও লড়ে গেছে । ফাইনালেও কিউয়িরা লড়ে যাচ্ছিল একইভাবে । 241 রানের পুঁজি নিয়েও ভালোই ধাক্কা দিয়েছিল ইংল্যান্ডকে । ছোটো লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে 86 রানেই চার উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। নিউজ়িল্যান্ড বোলারদের গতির কাছে রীতিমত ব্যাকফুটে চলে যায় তারা । সেখান থেকে জস বাটলারকে নিয়ে স্টোকসের 110 রানের জুটি ।
স্টোকস সেই প্রসঙ্গে বলেন, "জস আর আমি দুজনই জানতাম, শেষ পর্যন্ত যদি ব্যাট করে যেতে পারি তাহলে নিউজ়িল্যান্ড চাপে পড়ে যাবে ।" চাপে নিউজ়িল্যান্ড পড়েও ছিল । কিন্তু ফিরে এসেছিল দারুণভাবে । বাটলার ও ক্রিস ওকসকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে । নিঃসঙ্গ লড়াইয়ে যখন সমীকরণ ক্রমেই অসম্ভব হয়ে উঠছে, সেই সময় দু'রান নিতে গিয়ে স্টোকসের ব্যাটে লাগে বাউন্ডারি থেকে উড়ে আসা থ্রো । ব্যাটে লাগার পর বল ছিটকে চলে যায় বাউন্ডারির দিকে । ওভারথ্রোতে আসে ছ'রান । পাশাপাশি, ম্যাচও চলে আসে নাগালে ।
দৌড়ে দুই রান, সঙ্গে বাই হিসেবে অতিরিক্ত চার রান । স্টোকস ইচ্ছাকৃতভাবে বলটা ব্যাটে লাগাননি । সেই চার রানটাই তো পরে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে গেল । এর জন্য মাঠে তো বটেই, মাঠের বাইরেও স্টোকস ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন, "এভাবে আমি তা করতে চাইনি । বল ওভাবে আমার ব্যাটে লেগে ছিটকে যাবে আমি বুঝিনি । আমি কেনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি ।" তবে একদিন যাঁরা তাঁকে দল থেকে চিরতরে নির্বাসিত করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তাঁরা কি ক্ষমা চাইবেন ?