বেঙ্গালুরু, 3 অক্টোবর: আর দু’দিন পর ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় উৎসবের আসর বসছে ভারতে ৷ আইসিসি বিশ্বকাপে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ৷ এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পাঁচটি বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলা হবে ৷
প্রথম ম্যাচে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া 20 অক্টোবর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে খেলবে ৷ আর তারপর ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড 26 অক্টোবর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বেঙ্গালুরুর এই মাঠে ৷ নিউজিল্যান্ড 4 নভেম্বর পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে এবং 9 নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ রয়েছে চিন্নাস্বামীতে ৷ 12 নভেম্বর চিনাস্বামী স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলবে ভারত ৷ বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে স্টেডিয়ামটির পরিকাঠামো উন্নত করা হয়েছে ৷
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে 40,000 দর্শক একসঙ্গে বসে খেলা দেখতে পারে ৷ এটি দেশের প্রথম স্টেডিয়াম যেখানে, বৃষ্টির পর মাঠ শুকনোর জন্য 'সাব-এয়ার' সিস্টেম থেকে শুরু করে বিদ্যুতের জন্য ছাদে সৌর প্যানেল এবং বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার ব্যবস্থা রয়েছে ৷ আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিত স্টেডিয়ামের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করার পর, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের একটি দল বেঙ্গালুরু সফরে আসেন এবং তাঁরা কিছু পরামর্শ দেয় রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাকে ৷ সেই মতো স্টেডিয়ামের কয়েকটি স্ট্যান্ডের ছাউনি বদলানো হয়েছে ৷ দর্শকদের বসার আসনও বদলে ফেলা হয়েছে ৷ এমনকি প্রেস বক্সের ডাইনিংয়ের এলাকা সম্পূর্ণরূপে বদলে ফেলা হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: বোলাররা সকলেই 'উইকেট-টেকার', বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় দলের শক্তি-সন্ধানে মোরে
ড্রেসিং রুম: খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমের খোলনলচে পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে ৷ ড্রেসিং রুমের মেঝে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে ৷ ড্রেসিং রুমের ক্রিকেটারদের জন্য থাকা শৌচাগারি অত্যাধুনিক করা হয়েছে ৷
হসপিটালিটি বা ভিভিআইপি বক্স: স্টেডিয়ামে পি2, পি ও পি-টেরেস এবং ডায়মন্ড নামে চারটি বক্স রয়েছে ৷ যেখানে ভিভিআইপি দর্শকরা ডাইনিং এবং বিলাসবহুল সুবিধা-সহ ম্যাচ দেখতে পারবেন ৷ খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমের পাশের ডায়মন্ড বক্সটি বিশেষ অতিথিদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে ৷
খেলোয়াড়ের অনুশীলন ও পিচ: চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের জন্য পাঁচটি পিচ প্রস্তুত করা হয়েছে ৷ এছাড়া জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি (এনসিএ)-র মাঠও অনুশীলনের জন্য ব্যবহার করা হবে ৷ আর বিশ্বকাপের প্রধান ম্যাচগুলির জন্য আইসিসি-র তরফে তিনটি পিচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৷ উল্লেখ্য চিন্নাস্বামীর বিশেষত্ব এখানকার বাউন্স ও গতিতে ভরা লাল মাটির পিচ ৷ এছাড়া, চতুর্থ একটি পিচ স্ট্যান্ড-বাই হিসাবে রেখেছে আইসিসি ৷
মাঠের নিকাশি ব্যবস্থা: বদলে যাওয়া আবহাওয়ার কারণে অক্টোবর মাসে এখন দক্ষিণ ভারতে বৃষ্টি হয় ৷ ফলে এম চিন্নাস্বামীতে বৃষ্টির কারণে ম্যাচ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ৷ এর জন্য অত্যাধুনিক 'সাব-এয়ার' প্রযুক্তি বসানো হয়েছে ৷ এর ফলে বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গে আউটফিল্ড 15-20 মিনিটের মধ্যে শুকিয়ে ফেলা সম্ভব হবে ৷ 2017 সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'সাব এয়ার কোম্পানি'-এর সহযোগিতায় 4.25 কোটি টাকা খরচ করে চিন্নাস্বামীতে এই প্রযুক্তি বসানো হয়েছিল ৷
চিন্নাস্বামীর প্রবেশদ্বার: চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে মোট 21টি প্রবেশদ্বার রয়েছে ৷ যার মধ্যে কুবন পার্কের বিপরীতে প্রধান ফটকটি খেলোয়াড় এবং ভিআইপি-দের জন্য সংরক্ষিত ৷ ম্যাচ শুরুর তিন ঘণ্টা আগে থেকে বাকি 20টি গেট খুলে দেওয়া হবে দর্শকদের জন্য ৷ কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং টিকিট সংস্থার কর্মীরা ম্যাচ দেখতে আসা দর্শকদের সহযোগিতার জন্য থাকবেন ৷
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বাধিক ছয় মারার রেকর্ড গড়া পাঁচ ক্রিকেটার
মিডিয়া বক্স: সাংবাদিকদের জন্য স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স আধুনিক পরিকাঠামোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছে ৷ একই সঙ্গে নির্বিঘ্নে সাংবাদিকরা যাতে ম্যাচ কভার করতে পারেন, সেইভাবে প্রেসবক্সটি তৈরি করা হয়েছে ৷
পরিবেশ সংরক্ষণ: পরিবেশ সংরক্ষণের অংশ হিসাবে, স্টেডিয়ামে ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার প্যানেল এবং বৃষ্টির জল পুনর্ব্যবহার যোগ্য করার ব্যবস্থা করেছে কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ৷ তা ছাড়া এবার স্টেডিয়ামে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতলের ক্রাশিং ও রিসাইক্লিং মেশিন বসানো হচ্ছে ৷
চিকিৎসা ও পরিবহন সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা: যে কোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রতিটি ম্যাচের সময় স্টেডিয়ামে মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকবে ৷ সেই সঙ্গে জরুরি পরিষেবায় অ্যাম্বুল্যান্সও থাকবে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ৷ আর দর্শকরা যাতে দিন-রাতের ম্যাচ শেষ হওয়ার পর নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারেন, তার জন্য রাত 1টা পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চালু থাকবে ৷