কলকাতা, 12 মার্চ : সন্তু মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকের ছায়া টলি পাড়াতে ৷ তাঁর অকালে চলে যাওয়াকে মেনে নিতে পারছেন না টলি পাড়ার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ৷ ETV ভারত সিতারার সঙ্গে নিজেদের অনুভূতির কথা ভাগ করে নিলেন ঋষি কৌশিক, অনসূয়া মজুমদার এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
ক্য়ারিয়ারের আট বছর সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে টেলিভিশনে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন ঋষি কৌশিক । ঋষির বাবার চরিত্রেও অভিনয় করেছেন সন্তু । মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর রীতিমতো ভেঙে পড়েছেন 'এখানে আকাশ নীল', 'বাহা', 'কুসুমদোলা', 'কোড়া পাখি'-র মুখ্য অভিনেতা ঋষি কৌশিক । বলেন, "আমার ক্যারিয়ার শুরুর প্রথম থেকেই আমি কাজ করেছি ওঁর সঙ্গে ৷ দু'বছর আগেও 'কুসুম দোলা'-তে যখন অভিনয় করতাম তখন উনি আমার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন । আমি ওঁর সঙ্গে তিনটে সিরিয়ালে কাজ করেছি ৷ অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে । খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, ওঁর মতো একজন মানুষ চলে গেলেন ।"
'গোত্র' ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন অনসূয়া মজুমদার ও সন্তু মুখোপাধ্যায় । 'অন্দরমহল' ধারাবাহিকের স্বামী-স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাঁরা । একজন ভালো বন্ধু ও সহকর্মীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনসূয়া । বললেন, "খবর পাওয়ার পর থেকে ভীষণ খারাপ লাগছে । আমরা অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করেছি। প্রথমে একটি ধারাবাহিকে কাজ করেছিলাম ৷ লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিকাংশ কাজেই আমি এবং সন্তুদা একসঙ্গে ছিলাম। 'জল নুপুর' থেকে শুরু করে, 'কোজাগরী', 'কুসুম দোলা', 'অন্দরমহল', 'মোহর' এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'গোত্র'-তেও একসঙ্গে কাজ করলাম । সেখানে আমার এক বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন উনি । 'মোহর'-এ কয়েকদিন কাজ করে অবসর নিয়েছিলেন । দেখে বোঝাই যেত না উনি এত অসুস্থ ছিলেন । আমরা অনেকে জানতামই না ওঁর ক্যানসারের মতো সাংঘাতিক অসুখ রয়েছে । শেষের কয়েকদিন দেখতে পারলাম না বলে ভীষণ অপরাধবোধ হচ্ছে । ধারাবাহিকে কাজ করতে করতে সকলে পরিবারের মতো হয়ে যায় । সারাক্ষণ হাসি-ঠাট্টা-ইয়ার্কি চলতে থাকে । সেই সবকিছু খুব মনে পড়ছে । ওঁর থেকে অনেক কিছু শিখেছি । ভাষায় কোনও ডাউট থাকলে সন্তুদার কাছে চলে যেতাম । একজন সিনিয়র, বলিষ্ঠ, অসামান্য অভিনেতা ছিলেন ৷ দারুণ গানও গাইতেন ।"
'অন্দরমহল' ধারাবাহিকে পরমেশ্বরী অর্থাৎ কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্বশুরমশাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায় । তাঁর সঙ্গে কনীনিকার অভিনয় প্রশংসা কুড়িয়েছিল দর্শকের । অফস্ক্রিনে কনীনিকার খুবই কাছের মানুষ ছিলেন সন্তু । সন্তুর চলে যাওয়া শোকাহত করেছে কনীনিকাকে । তিনি বলেন, "খুবই খারাপ একটা খবর পেলাম । যেটুকু কাজ আমি ওঁর সঙ্গে করেছি, প্রত্যেক মুহূর্তে শিখেছি । প্রত্যেক দিন যেই থাকুক না কেন, আমরা কিংবা নতুন কেউ, সবসময় অভিনয় ঠিক করে দিতেন । কীভাবে সংলাপ বলতে হবে শিখিয়ে দিতেন ধরে ধরে । এটা নতুন ছেলে মেয়েদের জন্য বিশাল পাওয়া ছিল । সাধারণত, বড় অভিনেতারা এত কথাই বলেন না । আমার সঙ্গে যে যে সিন ওঁর হয়েছে, মানুষের মনে নিশ্চয়ই রয়েছে । কিন্তু আমার প্রত্যেকটা সিন, প্রত্যেকটা শট মনে আছে। এমনও দিন গেছে উনি অন্য ধারাবাহিকে কাজ করছেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম সন্তুদার জন্যে। তার মাঝে সিন চলে আসে। উনি ফ্লোরে এলেন এবং দেখলাম পুরো সংলাপ মুখস্থ । এরকম একজন মানুষের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ এলে একটা তৃপ্তি কাজ করে । সেই সঙ্গে অনেক কিছু শেখাও যায় । আমার সৌভাগ্য, আমি ওঁকে পেয়েছি । এছাড়া আমি বিশ্বাস করি, মৃত্যু কখনও কোনও মানুষকে সরিয়ে নিতে পারে না । উনি আজীবন মনের মধ্যে থেকে যাবেন । শুধু সামনে বসে থাকলে, 'কী রে কনি, কী খবর' ওইটা আর শুনতে পাব না ।"
দীর্ঘদিন ধরে নানারকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন সন্তু মুখোপাধ্য়ায় । গতকাল নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি । মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল 69 বছর । কিছুদিন আগেও অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছিল তাঁকে । সন্তুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে, রাত ১১:৪৫ মিনিটে । তরুণ মজুমদারের একাধিক ছবি যেমন 'সংসার সীমান্তে', 'ভালোবাসা ভালোবাসা', 'গণদেবতা'-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি । অভিনয় করেছেন তপন সিংহের মতো পরিচালকদের সঙ্গেও । নিয়মিত ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছেন । 'মোহর' ধারাবাহিকে কয়েকদিনের জন্য অভিনয় করেছিলেন । তারপর সরে আসেন । তাঁর জায়গায় অভিনয় করতে শুরু করেন দুলাল লাহিড়ি । তখন থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল । তাঁর অকালে চলে যাওয়ায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা ছবি এবং টেলিভিশন জগতে।