কলকাতা : প্রথমবার মঞ্চস্থ হল 'আর্টিকেল 25' । এই নাটকটি দেখানো হয় প্রসেনিয়াম আর্ট সেন্টারের একটি বড় ঘরে । প্রথম শো'তেই হাউসফুল হয় নাটকটি । অনেকেই জায়গা না পাওয়ায় ফিরে যেতে বাধ্য হন। নাটকের পরিচালক প্রশান্ত মনে করেন, তাঁদের সমাজের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা আছে । নাটকটি সম্পর্কে ETV ভারত সিতারার সঙ্গে কথা বললেন নির্দেশক প্রশান্ত এস ধর ।
প্রশান্ত বলেন, "এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে ধীরে ধীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের আস্ফালন বাড়ছে । উগ্র জাতীয়তাবাদী, উগ্র ধার্মিক মানসিকতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে । আমাদের সংবিধানে আর্টিকেল 25 যেভাবে ধর্মের প্র্যাকটিস হওয়া উচিত, দেখা যাচ্ছে পুরোটাই বিপরীত পথে চলছে । এই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষগুলো এই বিপরীতগামীতায় হাঁটতে আরম্ভ করেছে । আমরা মনে করি এটা সংবিধানের অবমাননা করা ছাড়া আর কিছুই নয় । সেখান থেকেই পুরো নাটকটাকে ধরা হয়েছে । দিনের শেষে জাতি, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, এইসবের বাইরে বেরিয়ে কোথাও একটা মানবিক অবক্ষয় হচ্ছে । আমরা যে মেজরিটির কথা বলছি, যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সংখ্যালঘু মানুষের উপর চড়াও হচ্ছে, সুযোগ পেলে কিন্তু সংখ্যালঘুরাও একই রকম অ্যাগ্রেসিভ হয়ে উঠছে । এবং অস্ত্র চালাতে পিছপা হচ্ছে না । এই নাটকে এই বিষয়টাকেই ধরা হয়েছে । দিনের শেষে ধর্মের বাইরে বেরিয়ে এসে মানুষ মানবিক অবক্ষয় করছে এবং তাদের মস্তিষ্কে বসে গেছে আমি শ্রেষ্ঠ । সেই শ্রেষ্ঠত্ব ফলানোর জন্য অন্য একটি মানুষকেও মেরে ফেলতে পারে যেকোনওভাবে । এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এটা খুব সাইকোলজিকাল কিংবা মানসিক রোগের পর্যায়ে পৌঁছেছে । এই আস্ফালন, এই বুকবাজি, এর বিরুদ্ধে আমরা ভয় পাচ্ছি । তাই কথা বলতে চাইছি এই নাটকটার বিরুদ্ধে ।"
তিনি আরও বলেন, "এরকম কিছু ঘটনা শেষ কয়েক বছরে আমাদের সামনে এসেছে । খবরে আমরা দেখতে পেয়েছি । আমরা দেখেছি, আমাদের সামনে ঘটেছে । সেই সবরকম খবরকে আমরা আমাদের এই নাটকের ভিজ়ুয়াল রেফারেন্স হিসেবে পরিবেশন করতে চেয়েছি । একেবারেই দুইজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখানো হয়েছে । এই নাটকটি করতে গিয়ে আমরা দীর্ঘ ৩-৪ মাসের একটা স্টাডি সার্কেল করেছি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে । সেখানে আমরা যা যা দেখিয়েছি সবক'টি সংবাদমাধ্যম দেখিয়েছে । সব রিপোর্ট, সব পেপার ওয়ার্ক আমাদের কাছে আছে । যিনি টেক্সটি বানিয়েছেন, তাঁর নাম দীপঙ্কর সেন । নাটকটির ভাবনা, ডিজ়াইন এবং ডিরেকশন আমি করেছি । আর এই নাটকটির সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজ করেছে ।"
নাটক হাউস ফুল হওয়ায় অনেকেই সেটি দেখতে পারেননি । দুঃখজনক ঘটনা বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রশান্ত । প্রশান্তর বক্তব্য, "পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের ক্ষেত্রে নাটক হওয়ার পরে মানুষ হাততালি দেয়, পরিচয়পর্ব হয় এবং মানুষ বাইরে চলে যায় । আমরা এই নাটকটি পর একটি আলোচনা পর্ব রেখেছিলাম । সেটা ছিল পার্ট অফ পারফরম্যান্স । মানুষ এই বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো দেখবেন এবং তা নিয়ে কথা বলবেন, এটা আমরা চেয়েছিলাম । এবং সেই দিক থেকে কিন্তু আমরা সফল হয়েছি । মানুষ শেষপর্যন্ত কথা বললেন । সেগুলো আমরা রেকর্ডিং করতে চাইনি । কারণ অনেকসময় মানুষ ভাবাবেগে অনেককিছু বলে ফেলতে চান । রেকর্ডিং হলে অনেক সত্যি কথা বলতে পারেন না । আর যারা দেখতে পারেননি, তাঁদের জন্য আমাদের পরবর্তী শো 21 সেপ্টেম্বর, প্রসেনিয়াম আর্ট সেন্টার, রিপন স্ট্রিটেই করছি ।"