কথায় আছে, সব ভালো যার, শেষ ভালো তার। এই নাটকটির ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। দিনের পর দিন যে গণেশকে অপয়া ভেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে গ্রামের লোক, প্রমাণিত হল সে পয়া, অর্থাৎ ভাগ্যবান।
এই গল্প একটি গ্রামের পটভূমিকায়। গল্পটি কেবল গ্রামের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। গ্রাম পেরিয়ে তা হয়ে ওঠে শহুরে মানসিকতার অঙ্গও। শহুরে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও ছায়া দেখতে পাওয়া যায় তার। সেটিকে ঘিরে চলতে থাকে অর্থনৈতিক লেনদেনের ঘটনা। নাটকের পরিচালক অশোকনগর নাট্যআননের চন্দন সেন সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন মঞ্চে। সমাজের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোভাবকে বিদ্ধ করেছেন তির্যক খোঁচায়। গণেশ, ধানি, মনা এবং জগার চোখ থেকে দেখিয়েছেন পরিবেশকে।
কীভাবে দিনের পর দিন হতদরিদ্র গণেশকে অপয়া ভেবে দুরছাই করেছে তার পরিবেশ এবং শেষমেশ একটি লটারির টিকিট জিতে বহু অর্থ পেয়ে সমাজের চোখে আঙুল তুলেছে সে। মঞ্চাভিনেতা গণেশের চরিত্রে বাসুদেব সাহার অভিনয় যেমন মন ভরাবে, তেমনই কিছু দৃশ্যে চোখ ভেজাবে। নাটকটি দেখে সবচেয়ে মজা লাগবে চন্দন সেনের অভিনয়। তাঁর কমিক টাইমিং সত্যিই প্রমাণ করে, তিনি একজন অসাধারণ অভিনেতা। এছাড়াও নজরকাড়া নাটকের সংলাপ। তৎকালীন কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে সংলাপে। কিন্তু কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ নেই। এককথায় উপভোগ্য এবং টান টান। মূল স্রষ্টা হরিমাধব মুখোপাধ্যায়। বাংলার একটি বিশেষ আঞ্চলিক ডায়ালেক্ট ব্যবহার করা হয়েছিল মূল নাটকে। সেখানে এই নাটকে ডায়ালেক্টের ব্যবহার আকর্ষণীয়।
মঞ্চসজ্জায় তেমন চাকচিক্য না থাকলেও বারবার সেট পরিবর্তনের কায়দা অভিনব। তখনই ঢুকে পড়ে কোরাস। এক জায়গায় অভিনেতা ঋতব্রত বলেন, এটা তো ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজ়িক। এছাড়াও গণেশের মুখে বারবার ছুটে আসে সেই সংলাপ, "আচ্ছা আমি কি সত্যি পায়, নাকি অপয়া।"
সমাজের কুসংস্কার, টাকাপয়সার খেলা, বড়লোক-গরিব লোকের দ্বৈরথ এবং সেইসঙ্গে সমান্তরাল প্রেম, সারল্য এবং হেরে গিয়েও জিতে যাওয়া এক সরল মানুষের কাহিনি। প্রত্যেক শিল্পীরই তাঁর শিল্পের প্রতি দায় থাকে। সমাজ সচেতনতা গড়ে তোলার তাগিদ থাকে। এই নাটক বলে মানুষের মনুষ্যত্বই আসল। সেখানে বড় নয় অর্থ, স্বার্থপরতা, অহমিকা। খোলস ছেড়ে যে মানুষ বেরিয়ে আসতে পারে, নির্ভীক জীবন কাটাতে পারে, সেখানেই তাঁর জয় নিশ্চিত। সে কারণেই হয়তো জয় গণেশ গাথার।