এই সময় দাঁড়িয়ে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক একটি ছবি 'গোত্র'। যার প্রত্যেক স্তরে এটাই বোঝানো হয়েছে, মনুষ্যত্ব আর মানবিকতার উপর আর কিছুই নেই। মানুষের গোত্র মনুষ্যত্ব, ধর্ম ও মানবিকতা। এমন একটি ছবি তৈরি করার জন্য পরিচালকদ্বয় নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁদের প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ়কে অনেক ধন্যবাদ।
ছবিতে বেশ কয়েকটি বার্তা দিয়েছেন নন্দিতা-শিবপ্রসাদ। প্রথম বার্তা, এই ছবি ধর্ম বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথা বলে। হিন্দু-মুসলমান-শিখ-খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ ধর্মকে কেন্দ্র করে একে অপরের মধ্যে যে হিংসাপরায়ণ মনোভাবকে বহন করে নিয়ে চলে, গোত্র তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দিক থেকে দেখতে গেলে ১০০তে ১০০ নম্বর পাবে 'গোত্র'।
দ্বিতীয় বার্তা, কলকাতা শহরে বৃদ্ধ মানুষদের পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করেছেন পরিচালকদ্বয়। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাপনায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী সন্তানরা প্রতিনিয়ত তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের এই শহরে রেখে পাড়ি দেয় বিদেশে। অট্টালিকার মতো বিশাল বাড়ি আগলে সেই বাবা-মায়েরা পড়ে থাকেন এই দেশে, এই শহরে। কিছু অসাধু উদ্দেশ্যের মানুষ সেইসব বৃদ্ধদের আড়ালেই ক্ষতি করে চলে, যা আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই খবরের কাগজের পাতায়। সেই অসহায়তার একটি চিত্র ফুটে উঠেছে 'গোত্র' ছবিতে। ।ছবিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রেমকে দেখানো হয়েছে। যা আজকের সমাজেও খুব সাদরে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু মানবিক কোনও মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা পরম সুখকর। যেখানে সেই প্রেমের ভিত মানবিকতা।আর রয়েছে হিন্দু-মুসলমান, এই দুই ধর্মের মিশে যাওয়া। যা একসময় বহমান ছিল অবিভক্ত ভারতবর্ষে। এই সমস্ত কারণে, 'গোত্র' ছবিটি উপভোগ্য হতে পারে দর্শকের কাছে।এরপর আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। ছবিতে অভিনেত্রী অনসূয়া মজুমদারের এপর্যন্ত শ্রেষ্ঠ অভিনয় বলা যেতে পারে। তিনি প্রমাণ করলেন তাঁর অভিনয় সত্তা। তার মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত বাংলার মায়ের প্রতিচ্ছবি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য নাইজেল আকারার অভিনয়। মানালি দে যথাযথ। খরাজ মুখোপাধ্যায় এবং অম্বরীশ ভট্টাচার্য দুর্দান্ত।ছবির গান মুক্তির আগেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। রঙ্গবতী গানটি চলার সময় প্রেক্ষাগৃহের দর্শকরা আনন্দে ভেসে গিয়েছিল। ভেসে গিয়েছিল সংলাপেও। সবশেষে বলতেই হয়, প্রতিবারের মতো এই ছবিতেও নন্দিতা তাঁদের বিশেষত্বের ছাপ রেখে গেলেন। সত্যি প্রমাণ করলেন, কাছের মানুষ হতে গেলে গোত্র লাগে না।