ETV ভারত সিতারা : 28 জুন আপনার 'নিরন্তর' ছবিটা রিলিজ় করছে । সেটা তো টেলিভিশনেই আসছে ।
প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি : হ্যাঁ টেলিভিশনেই আসছে । ছবিটা আমাদের ডেলিভার হয়ে গেছিল ডিসেম্বর মাসে । একটা ছবির অনেকরকম লিগালিটি থাকে । টেলিভিশনে আসা মানে OTT প্ল্যাটফর্মেও এসে যাবে । এমনিতেও এই চ্যানেলের এগ্রিমেন্টে থাকে যে, চ্যানেলে আসলে OTT-তেও আসবে ।
ETV : এই ছবিতে আপনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । তাঁর অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে কাজে যায় পাহাড়ে...
প্রসেনজিৎ : ভার্জিন লোকেশনে যায় । এমন জায়গায় সেখানে কেউ কোনওদিন পৌঁছয়নি । ফোনের কানেকশন আসেনি । সেখানে এক ইঞ্জিনিয়ার অর্থাৎ আমি আর তার অ্যাসিস্টেন্ট যায় । এরকম নয় যে আমরা সেই জায়গায় গিয়ে হারিয়ে যাই । দেখানো হচ্ছে দুটি প্রজন্মের জার্নি । দেখানো হচ্ছে একটি ছেলেকে, যে সবে মাত্র কোম্পানিতে ঢুকেছে, যে আগে কোনওদিন টুরে যায়নি । প্রকৃতির মধ্যে তাঁদের দুজনের সম্পর্ক তৈরি হয় ।
ETV : শুটিং কোথায় হয়েছে ?
প্রসেনজিৎ : নর্থ বেঙ্গলে, খুব অদ্ভুত একটা জায়গায় । এই জায়গাটায় কেউ এখনও পর্যন্ত শুটিং করেনি ।
ETV : আপনি ব্যক্তিগতভাবে পাহাড় পছন্দ করেন না সমুদ্র, জঙ্গল, বা মরুভূমি ?
প্রসেনজিৎ : পাহাড় ।
ETV : তাহলে সেই পাহাড়ে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল ?
প্রসেনজিৎ : আমরা যেখানে থাকতাম, তার থেকে উপরে উঠে যেতে হত । উপরে ছিল একটা চায়ের দোকান, সঙ্গে দুটো ঘর । একদম পাহাড়ের মাঝখানে অদ্ভুত জায়গাটা । আমাদের ক্যাম্প থেকে যেতে প্রায় দেড় দু'ঘণ্টা লেগে যেত । ওদের বন্ড দিতে হয়েছিল, যতদিন থাকবে স্নান করবে না । এত ঠান্ডা, যে স্নান করলে শরীর খারাপ হয় আর মানুষ মারা যায় । আমরা বলে দিয়েছিলাম, দু'জন দু'জন করে থাকবে । চন্দ্রাশিস সেখানকার ভাষাটাকেও ব্যবহার করতে চেয়েছিল । তাই সেখানকার কিছু লোকাল অভিনেতা আছে ছবিতে ।
ETV : চন্দ্রাশিসকে পরিচালক হিসেবে কেমন দেখলেন ?
প্রসেনজিৎ : সেটা দর্শক বলবেন । তবে আমি বলব, চন্দ্রাশিসের উপর আমার বিশ্বাস আছে বলেই আমি ওকে ব্যবহার করেছি এরকম একটি কাজে । ওর প্রথম কাজ দেখেছিলাম । তার উপর কৌশিকের সঙ্গে এতগুলো কাজ করেছে । দেখেছিলাম, ছেলেটার মধ্যে অন্যরকম ব্রিলিয়েন্স আছে । অন্যরকম সিনেমার ভাষা নিয়ে কথা বলতে চায় । এখন যেভাবে সিনেমার ভাষা পালটাচ্ছে, সেখান থেকে আমার মনে হয়েছে চন্দ্রাশিস এই ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকদিন থাকবে ।
ETV : আপনি কি চন্দ্রাশিসকে নতুন গল্প ভাবতে বলেছিলেন ?
প্রসেনজিৎ : না না, একেবারেই না । আমি ওঁকে অনেকবার সিনেমা তৈরি করতে বলেছি । আগে কৌশিকের ছবি করার সময়ও বলেছি । আগে সিরিয়াসলি নেয়নি । তারপর ও যখন স্ক্রিপ্টটা আমাকে শোনায়, খুব সুন্দর সিনেম্যাটিক ভাষা খুঁজে পাই । খুব পিওর । নতুনদের সঙ্গে কাজ করার মজাই হল, খুব পিওরিটি পাওয়া যায় । এখনও পর্যন্ত ওঁদের মধ্যে অন্য ক্যালকুলেশনগুলো ঢোকেনি, সেটা খুব সুন্দরভাবে পাওয়া যায় ।
ETV : সত্যমের সঙ্গে আপনাকে 'গুমনামী'তেও দর্শক দেখেছেন । এই ছবিতেও তাই...
প্রসেনজিৎ : ওঁকে আমি অনেকদিন ধরে চিনি । ওঁর সঙ্গে আমার বড় পার্ট বলতে 'নিরন্তর' । কিন্তু এই নিরন্তরের কথা জানার পর সৃজিত মুখার্জি আমাদের দু'জনকে 'গুমনামী'তে বড় রোল দিয়েছিলেন । 'গুমনামী' আগে রিলিজ় করে গেছে । আমি সত্যমকে অ্যাসিসট্যান্ট ডিরেক্টর হিসেবে চিনতাম । চন্দ্রাশিসের প্রত্যেকটি কাস্টিং আমার খুব ভালো লেগেছে ।
ETV : ইন্ডাস্ট্রি এখন চলে আসছে OTT প্ল্যাটফর্মে...
প্রসেনজিৎ : আমার একটা অন্য জিনিস মনে হয় । এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে হয়তো OTT প্লাটফর্মে আসছে । তবে সিনেমা হলের এখনও পর্যন্ত কোনও মার হয়নি । তবে এটাও সত্যি যে, ছবি হলে রিলিজ় করে সেরকমভাবে ব্যবসা করছে না, যে মুহূর্তে সেটি OTT প্লাটফর্মে আসছে, তখন মানুষ এগুলো নিয়ে খুব আলোচনা করছে । 'কেদারা'-র মত ছবি কিন্তু OTT-তে প্রচুর মানুষ দেখেছেন । মুম্বইতেও এরকম অনেক ছবি রয়েছে । আমার 'রবিবার'-এর তেমন বক্স অফিস হয়নি । কিন্তু প্রচুর মানুষ OTT-তে দেখেছেন । অনেকগুলো লেন তৈরি হয়ে গেছে । ছবিকে তো কোথাও আলোচিত কিংবা প্রশংসিত হতে হবে । সেই জায়গা থেকে দেখতে গেলে, OTT খুব বড় ভূমিকা পালন করে । কিন্তু সব ছবি যে OTTতে প্রচণ্ড ব্যবসা করবে, তা তো নয় । 'নিরন্তর'এর ক্ষেত্রে আমার ইচ্ছে ছিল নন্দনে রিলিজ় করব । কারণ এটা নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য তৈরি একটি ছবি । যাঁরা ছবি ভালোবাসেন, আমার ধারণা তাঁরা দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবেন ।