কলকাতা : আমরা প্রত্যেকেই জানি, উত্তমকুমার ছিলেন খাদ্যরসিক । আর সুপ্রিয়া দেবী একজন দারুণ রাঁধুনী । তবে উত্তম কোন রেস্তোরাঁর খাবার খেতে ভালোবাসতেন বা সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে কোন রেস্তোরাঁয় গিয়ে খেতেন, এইসব দিদার মুখে শুনেছেন শন । মধ্য কলকাতার পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি নামী রেস্তোরাঁ পিটারক্যাট । সেটি ছিল উত্তম-সুপ্রিয়ার প্রিয়, প্রিয় ছিল ফ্লুরিজও ।
শন আমাদের বলেন, "দিদি ও দাদু পিটারক্যাটে খেতে খুব ভালোবাসতেন । মাঝেমধ্যে রবিবার সকালের ব্রেকফাস্ট করতে যেতেন সেখানে । আর শুটিং না থাকলে রবিবার সকাল 10 টা থেকে 10:30 টার মধ্যে চলে যেতেন ফ্লুরিজ়ে ।" তাছাড়া, শুটিংয়ের ফাঁকে কোনও স্ন্যাক্স খেতে ইচ্ছে করলে, নিজ়ামের চিকেন রোল খেতেন মহানায়ক । তখনকার দিনে উত্তমকুমার গাড়ি চালাতেন ঠাকুর নামের এক ভদ্রলোক । রোল আনার দায়িত্ব ছিল ঠাকুরেরই ।
মহানায়ক প্রকাশ্যে প্রাতঃরাশ সারছেন, দেখতে পেলে কি আর শান্ত থাকবে জনতা ? তাই তুমুল সাবধানতা বজায় রেখে সমস্ত আয়োজন করত রেস্তোরাঁগুলি, জানালেন শন । শুধু কী তাই ? কলকাতার একটি বিশেষ রাস্তায় প্রতিদিন হাঁটতে যেতেন মহানায়ক । এত খাওয়াদাওয়া করলে শরীরে যাতে মেদ না জমে, তাই হাঁটাহাঁটিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন উত্তম । জমজমাট রাস্তায় প্রকাশ্যে হেঁটে চলেছেন নায়ক, ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে থাকা উত্তমকুমার, এই দৃশ্য কজন দেখেছেন, হাতে গুনে বলা মুশকিল । কেউ হয়তো দেখেননি ।
শন বললেন, "উত্তমকুমারের হাঁটতে যাওয়ার সময় ছিল অদ্ভুত । ভোরের পাখি তখনও ডাকেনি, সেই নিশুতি তিনটের সময় ময়রা স্ট্রিটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন । হাঁটা শেষ করতেন আকাশবাণী রেডিয়ো স্টেশনের অফিসের কাছে । সেখান থেকে ফের হেঁটে ফেরত আসতেন বাড়ি । তখন তো এত জিম ছিল না, এত ট্রেনারও ছিল না । প্রাকৃতিক উপায়ে হাঁটাহাঁটিতে বিশ্বাস করতেন তিনি । এটাই ছিল তাঁর প্রতিদিনের রুটিন ।"
সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে যুগলে... কাজের ফাঁকে একটি বিশেষ জায়গায় বেড়াতে যেতেন উত্তম কুমার । সেটি খুব প্রিয় জায়গা ছিল সুপ্রিয়া দেবীরও । সপ্তাহান্তে ছুটি কাটাতে যেতেন প্রায়শই । জায়গাটির নাম তোপচাচি, ধানবাদের কাছে একটি জায়গা । সেখানে একটি বাগানবাড়ি ভাড়া নেওয়া ছিল উত্তমকুমারের ।
এত খাদ্যরসিক এক মানুষের ছিল কঠিন ডায়েট । সেই ডায়েট কী ছিল, শন জানালেন আমাদের । বললেন, "এমনি সময় খুব লাইট খাওয়া-দাওয়া করতেন দাদু । সঙ্গে স্যান্ডউইচ ক্যারি করতেন । রাতেরবেলায় চিকেন স্টু কিংবা সুপ খেতেন ।"এই মুহূর্তে ধারাবাহিকে কাজ করছেন শন ।
প্রথম ধারাবাহিক 'আমি সিরাজের বেগম'এর সিরাজউদ্দৌলা । পরের ধারাবাহিকটি 'এখানে আকাশ নীল'-এর ডাঃ উজান চ্যাটার্জি । দিদা সুপ্রিয়া দেবীর থেকে যতখানি অভিনয় শিখেছেন, উত্তমকুমারের থেকেও অনুপ্রেরণা পেয়েছেন শন । আমাদের বললেন, "আমি দাদুর ডেডিকেশনকে সম্মান করি । প্রথম 8 টি ছবি ফ্লপ করার পরেও নিজেকে টিকিয়ে রেখেছিলেন । মধ্যগগনে বিরাজ করেছেন দাদু । এটা খুবই রেয়ার একটা ব্যাপার । খুব সহজ ব্যাপার নয় । এত প্রত্যাখ্যান এত হতাশা পেরিয়ে এই জায়গা ধরে রাখা খুবই কঠিন । মানুষ খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেয় কিনা !"
জন্মবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণা করেই উত্তমকুমারকে শ্রদ্ধা জানালেন শন ব্যানার্জি । শ্রদ্ধা জানাল ETV ভারত সিতারাও ।