মা। শব্দটা আমাদের সকলের কাছে খুব আপন, খুব নিজের। এই শব্দটার কিংবা এই মানুষটার কোনও বিকল্প হয় না। ছোটোবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত যতই মানুষটিকে শুচিবাই, খিঁটখিঁটে বলে চেঁচামেচি করি না কেন , আমরা খুব ভালো করেই জানি, গোটা পৃথিবীতে এই মানুষটাই হাজার ব্যঞ্জনা-গঞ্জনা শুনেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে ঠিক আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে। দুই হাত দিয়ে আগলে রাখবে বুকে। শেষ সম্বল দিয়ে বুঝিয়ে দেবে তাঁর উপস্থিতি। আর আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে স্বীকার করে নেব আমাদের মায়ের সস্নেহ অবদানের কথা। যিনি না থাকলে আমরাও থাকতাম না। আজ মাতৃদিবসে টলি ইন্ডাস্ট্রির তাবড় তাবড় শিল্পীরা ETV ভারত মারফত বার্তা পাঠালেন মাকে। কী বললেন তাঁরা?
প্রথমেই তাঁর অনুভূতির কথা শেয়ার করলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। মেয়ে ঋসোনা নিয়া ও ছেলে অংকনের কাছে গিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা দুজনেই সিঙ্গাপুরে পড়াশোনা করে। ঋতুপর্ণা প্রত্যেক মাসের অর্ধেক সময় ছেলে-মেয়ের কাছে কাটিয়ে আসেন। ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে থেকেও এই জন্য সময় বের করেন। ঋতুপর্ণা নিজে একজন দায়িত্বশীল মা। সুদূর সিঙ্গাপুর থেকেই মাতৃদিবসে তাঁর মাকে জানালেন শ্রদ্ধা, বললেন "মা শব্দের কোনও বিকল্প হয় না। মা শব্দের অন্য কোনও মানেও হয় না। এটা সেরা শব্দ, সেরা অনুভূতি, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সম্পর্ক। মা আমাদের তৈরি করেছেন। আমাদের তিলে তিলে বড় করেছেন। আমাদের লড়াই করতে সাহস যুগিয়েছেন, শক্তি দিয়েছেন। মা ছাড়া সব অন্ধকার। মা সেরা অনুভূতি। আমি মাকে বলতে চাই, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সব মায়েদের স্যালুট জানাতে চাই। পৃথিবীর সব মায়েরাই বেস্ট। এবং তাঁরাই বেস্ট থাকবেন। আমি চাই আমার মেয়ে ঋসোনাও যেন বড় হয়ে খুব ভালো একজন মা হয়। খুব ভালো একজন মানুষ হয়। আমি মাতৃহারাদের মা হয়ে উঠতে চাই। যাঁরা মায়ের স্নেহ পায়নি, আমি তাঁদের সেই মাতৃস্নেহ দিতে চাই। মা অনন্ত এবং অপার। মাকে নিয়ে কিছু বলা খুব কঠিন, এটা অনুভব করতে হয়..."
অপরাজিতা আঢ্যর জীবনে মায়ের সম্পূর্ণরূপ হয়ে এসেছেন তাঁর শাশুড়িমা। অপরাজিতার নিজের মায়ের থেকেও তিনি বেশি আপন। ETV ভারতকে তিনি বলেন, "আমার খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে। আমার নিজের মা খুব কঠিন প্রকৃতির মানুষ। আর আমি খুবই ছটফটে, চুলবুলি ছোটো থেকেই। শান্ত একেবারেই ছিলাম না। তবে আমার জন্মের সময় এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল। আমি যখন মায়ের পেটে, মায়ের অসম্ভব লেবার পেইন ওঠে। নিরুপায় মা নিজে পায়ে হেঁটে হাসপাতালে পৌঁছোয়। মা যখন হাসপাতালে ঢোকে শরীর থেকে কী যেন একটা ছিটকে বেরিয়ে আসে। সেই ছিটকে বেরিয়ে আসা জিনিসটা আমি। পৃথিবীতে এসেছিলাম লড়াই করে। তাই আমার নাম অপরাজিতা। আমার জন্মদাত্রী মা অসম্ভব রাগী মানুষ। কিন্তু মায়ের বন্ধুত্ব, আদর সম্পূর্ণরূপে পেয়েছি আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে। নিজের ছেলের থেকেও আমাকে বেশি ভালোবাসেন। আমার কাছে আমার শাশুড়ি মা ঈশ্বর। জীবনে কোনওদিন কেউ আমার এত যত্ন করেনি, যতটা মা করেছেন। বছরের একটা দিন কেন মাকে দেব? গোটা বছরটা, আমার গোটা জীবনটাই তো আমার মায়ের। মা, তোমাকে খুব ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে কখনও যেও না। আমি যেন আমার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তোমাকে পাই।"
কয়েকদিন আগে বিয়ে হয়েছে অভিনেত্রী পাওলি দামের। নিজের মায়ের সম্পর্কে বলতে বলতে শাশুড়ি মায়ের কথা বললেন পাওলি, "মা আমার শক্তি। আমার দুর্বলতা। আজ মাকে একটা কথাই বলতে চাই, প্লিজ একটু নিজের যত্ন নাও। তোমার জন্য মন কেমন করে। অন্যদিকে আমার শাশুড়িমাকে বলতে চাই, তোমাকে পেয়ে আমি একজন বন্ধুকে পেয়েছি। সেই জন্য অর্জুনকে (পাওলি দামের স্বামী) ধন্যবাদ। অর্জুন আমাকে বিয়ে না করলে, আমি তোমার মতো মা পেতাম না। আমাদের বন্ধুত্ব যেন সারাজীবন এভাবেই থাকে।"
নুসরাত জাহান এই মুহূর্তে ভোটের প্রচার নিয়ে অসম্ভব ব্যস্ত। কিন্তু এত ব্যস্ততার মাঝেও মাতৃদিবসে মায়ের জন্য উপহার কিনতে ভোলেননি। সেই সিক্রেট শেয়ার করেলেন অভিনেত্রী। বললেন, "আম্মুর জন্য একটা সারপ্রাইজ় আছে। কাউকে বলা যাবে না। আজই আম্মুকে সেটা দেব। জানি না কী বলবে। আর সেই সঙ্গে বলব, "আই লাভ ইউ"।
এদিকে, অর্জুন চক্রবর্তী, অর্থাৎ অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীর কনিষ্ঠ পুত্র তাঁর মা অভিনেত্রী মিঠু চক্রবর্তীর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বললেন, মা তাঁর কাছে ভগবানের চেয়ে বড়। বললেন, "শুধু আমার নিজের মাকে নয়, সব মায়েদের বলতে চাই আপনারা ভালো থাকবেন। এবং সব সন্তানদের বলতে চাই, মাকে সুখে শান্তিতে রাখবেন। মা যা স্যাক্রিফাইস করেন, স্বয়ং ভগবানও তা করেন না। তাই মা হচ্ছে আগে, ভগবান পরে।"
কৌশিক সেন আর রেশমী সেনের পুত্র ঋদ্ধি সেন তো অনেকদিন আগেই স্বীকার করেছেন, মা না থাকলে জীবনে হয়তো কিছুই হত না। একাধিকবার স্বীকার করেছেন ঋদ্ধি যে, বাবার চেয়ে মাকে তিনি এগিয়ে রাখেন। আজ মায়ের জন্য ঋদ্ধি যে বার্তা পাঠিয়েছে তা হল, "মা তুমি আছ। তাই আমি আছি। এভাবেই তুমি থেকো। তুমি না থাকলে আমার অস্তিত্বই বৃথা। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি মা," কথাটি বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ঋদ্ধি।
'কণ্ঠ' ছবির মুক্তির জন্য এই মুহূর্তে ভারতে রয়েছেন অভিনেত্রী জয়া এহসান। তবে মাতৃ দিবসে তিনি যে মাকে খুব মিস করবেন তা স্বীকার করে নিলেন অভিনেত্রী। বললেন, "আমার মা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার ফ্রেন্ড, ফিলোজ়ফার, গাইড তিনটেই। জীবনে অসহায় হয়ে পড়লে, প্রথমেই মনে হয় আমার লাইফলাইন আছে, মা। আর যেই এটা মনে পড়ে, সব সমস্যা জানলা দিয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আজ আমি মাকে খুব মিস করছি। ঢাকায় থাকলে মাকে নিজে হাতে বানিয়ে কিছু একটা খাওয়াতাম। গিফট কিনে দিতাম। তবে সেলিব্রেশনটা তোলা থাকল। অনেক বড় করে সেলিব্রেট করব। লাভ ইউ মা"
কৌশিক গাঙ্গুলির ছবি 'নগরকীর্তন' দেখতে এসেছিলেন তাঁর মা। সেদিন কৌশিকের একটু অন্যরকম মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, একজন পরীক্ষককে হলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। মনে মনে বলছেন, "দেখো তো তোমার খোকা কত বড় হয়েছে"। কৌশিক গাঙ্গুলির জীবনে তাঁর মা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি। ETV ভারতকে তিনি বললেন, "আমি আজ যা হয়েছি সব আমার মায়ের জন্য। মা না থাকলে কিছুই করতে পারতাম না। সারা জীবন আমার মা আমার জন্য অনেক সেক্রিফাইস করেছেন। পরিবর্তে মাকে কী দিতে পেরেছি। পেরেছি কি মায়ের ভালো ছেলে হতে? আমার সব কাজই তো মায়ের জন্য। মায়ের অনেক বয়স হয়েছে। মা ভালো থাকুন সবসময়, এটাই ভগবানের কাছে কামনা করি। আমার কাছে রোজই মাদার্স ডে।"
রাইমা সেন তাঁর মা মুনমুন সেনের খুব কাছের। তিনি মনে করেন, মা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যাঁকে বাদ দিয়ে কিছুই করা যাবে না। রাইমা জানালেন, " এইসব মাদারস ডে, ফাদারস ডে আমার ভালো লাগে না। ভীষণ অদ্ভুত লাগে। আপনারাই বলুন, মায়ের জন্য কি বছরে একটা দিনই বরাদ্দ রাখা? কারোর কাছে উত্তর নেই। এদিকে ঘটা করে মাদার্স ডে পালিত হচ্ছে। আমার প্রশ্ন একটাই, মাকে একটা দিন ভালো রাখলে আর গোটা বছর ঘুরে তাকালে না, এরকম ভালোবাসার দরকার নেই। বাবা-মায়েরা সন্তানদের থেকে কিছু প্রত্যাশা করেন না, শুধু একটু ভালোবাসা ছাড়া। আমার প্রশ্ন সেই সব ছেলেমেয়েদের কাছে, যারা বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। বলতে ইচ্ছে করে, আপনাদের কি ভালোবাসা কম পড়িয়াছে?"
এদিকে গত বছরের ডেবিউট্যান্ট অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পাল জানিয়েছেন, " আমার জীবনের ব্যাকবোন মা অভিনেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত। ছোটো থেকেই মা আমার ইনস্পিরেশন। মা রোল মডেল। মায়ের কাছে সবকিছু শিখেছি। মায়ের আরও সন্তান আছে। মায়ের ডান্স একাডেমির ছাত্রীরা মায়ের সন্তান। সেই গ্রুপে আমিও নাচ করি, স্টেজ শো করি। কিন্তু কোনওদিন মাকে দেখিনি পার্শিয়ালিটি করতে। কেউ পার্শিয়ালিটি করার সুযোগ করে দিলে, মা ভালো করে বুঝিয়ে দেন একাডেমির অন্যান্য মেয়েরাও মায়ের সন্তান। মা এমন কিছু করবেন না, যাতে তাঁরা মনে কষ্ট পায়। আমি মায়ের এই ভাবনাকে স্যালুট জানাই। প্রার্থনা করি, যেন মায়ের মতো হতে পারি। আই এম প্রাউড অফ ইউ মা।"
আবির চট্টোপাধ্যায়ের মা রুমকি চট্টোপাধ্যায় লোককৃষ্টি নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত বহুদিন। বাবাও তাই। দু'জনকেই মঞ্চের বাইরে ছোটপরদায় এবং বড় পরদায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। আবিরের পরিবারের সকলেই অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। মায়ের সম্পর্কে আবির বললেন, "আমাকে বলা হল এবং চারপাশে দেখতেও পাচ্ছি মাদার্স ডে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। আমাদের তো যে ডে অ্যান্ড নাইট যাই হয়েছে, শুরুই হয়েছে ওঁকে দিয়ে" আর কী বললেন আবির? তোলা রইল ভিডিয়োয়...