হায়দরাবাদ : 'আতে যাতে হাসতে গাতে...' 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া'-র এই গানটি দোলা দিয়ে গিয়েছিল প্রতিটি রোম্যান্টিক মনে । শুধু এটিই নয়, সলমান খানের লিপে একের পর গান সকলের মন জয় করে নিয়েছিল শুধু তাঁর রোম্যান্টিক কণ্ঠের জন্য । তিনি এস পি বালাসুব্রমনিয়ম । দক্ষিণী তারকা কমল হাসানের লিপেও একের পর এক গান গেয়েছেন তিনি । ভাষা যাই হোক না কেন, তাঁর কণ্ঠ সেই গানগুলিকে আরও মধুর করে তুলত । যাতে মোহিত হয়ে যেতেন সকলে ।
1989 সালে মুক্তি পাওয়া 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া'-র গান এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে সেই সময় সলমানের বেশিরভাগ ছবিতে তাঁকেই প্লেব্যাক করতে দেখা গেছে । ততদিনে অবশ্য হিন্দি সিনেমার গানের জগতে এক দশক পূর্ণ করে ফেলেছিলেন বালাসুব্রমনিয়ম । মুম্বইতে তাঁর কেরিয়ারকে মূলত দু'টি পর্যায়ে ভাগ করা যায় । একটি 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' মুক্তির আগে ও অন্যটি এর মুক্তির পর ।
তাঁর রোম্যান্টিক কণ্ঠ বরাবরই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে গেছে । জিতে নিয়েছেন একাধিক পুরস্কার । 16টি ভাষায় মোট 40 হাজার গান রেকর্ড করেছেন তিনি । জায়গা করে নিয়েছেন গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে ।
সলমানের একাধিক ছবিতে প্লেব্যাকের পর আর সেভাবে বলিউডে দেখা যায়নি বালাসুব্রমনিয়মকে । সেই সময় দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর অভিনয় ও প্রযোজনার কাজ করেছেন তিনি । তাঁর বদলে সলমনের ছবিতে গাইতে দেখা যায় সোনু নিগম, উদিত নারায়ণদের ।
কয়েক বছরের জন্য গানের জগৎ থেকে বিরতি নিলেও তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন সকলের মনে । দেখে নেওয়া যাক সলমানের ছবিতে প্লেব্যাক করা তাঁর কয়েকটি জনপ্রিয় গান...
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল পরিচালক সুরজ বরজাত্যর ব্লকবাস্টার ছবি 'হাম আপকে হ্যায় কউন-এর 'প্যাহেলা প্যাহেলা পেয়ার হ্যায়'। এই গানে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট করেছিলেন বালাসুব্রমনিয়ম ।
'সজন' ছবিতে সলমানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত ও মাধুরি দীক্ষিত । ব্লকবাস্টার হয়েছিল ছবিটি । প্রশংসা কুড়িয়েছিল ছবির 'তুমসে মিলনে কি তামান্না হ্যায়' গানটি ।
1991 সালে মুক্তি পায় 'পত্থড় কে ফুল'। বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করতে না পারলেও জনপ্রিয় হয়েছিল এই ছবির গান ।
ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল 'ম্যায়নে পেয়ার কিয়া' ছবির 'মেরে রঙ্গ মে' গানটি । গানটিতে ভাগ্যশ্রীর সঙ্গে সলমানের রসায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো । আর সেটিকে আরও রোম্যান্টিক করে তুলেছিল বালাসুব্রমনিয়মের কণ্ঠ ।
1991 সালে মুক্তি পায় 'লাভ'। সেখানে সলমানের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন রেভাথি । ছবির 'সাথিয়া তুনে কেয়া কিয়া' গানে চিত্রার সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছিলেন বালাসুব্রমনিয়ম । সেই সময় ইন্ডাস্ট্রিতে সদ্য পা রেখেছিলেন চিত্রা । তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে বালাসুব্রমনিয়মের কণ্ঠ একটা আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল ।
শুধু সলমানের ছবিতেই প্লেব্যাক করেননি। দক্ষিণী তারকা কমল হাসানের একাধিক ছবিতেও প্লেব্যাক করেছেন বালাসুব্রমনিয়ম ।
একটা সময় ছিল যখন কমল হাসানের ছবি মানেই সেখানে প্লেব্যাক করতে দেখা যেত বালাসুব্রমনিয়মকে । 'অপূর্ব সাগোধারারগাল' ছবির 'পাধু মাপিল্লাইকু'-র কোরাসের অংশটি গেয়েছিলেন তিনি ।
এছাড়াও 'স্বাতীমুত্যম', 'সাগারাসঙ্গমাম', 'মারোচারিতা', 'সাদমা', 'আকালি রাজ্যম' ও 'এক দুজে কে লিয়ে' ছবিতে কমল হাসানের লিপে গান গেয়েছিলেন বালাসুব্রমনিয়ম ।
কমল হাসান বা সলমান খানই নন । একাধিক ছবিতে একাধিক তারকার গলায় গান গেয়েছেন তিনি । কখনও কন্নড় অভিনেতা বিষ্ণুবর্ধনের লিপে আবার কখনও রজনীকান্তের লিপে । তামিল ভাষায় আবার কখনও মালায়লম ছবিতে মোহন লালের লিপে গান গেয়েছেন ।
ছ'বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন এই সংগীতশিল্পী । চারটি ভিন্ন ভাষায় গাওয়া গানের জন্য পুরস্কার জিতেছেন তিনি । তেলুগু গানের জন্য তিনবার । আর তামিল, কন্নড় ও হিন্দির জন্য একবার করে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন । পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করা হয়েছে তাঁকে ।
ভাষা যাই হোক না কেন, সব গানই আবেগ দিয়ে গাইতেন তিনি । গাইতেন সাবলীলভাবে । প্রতিটি গানের সঙ্গে হয়ে যেতেন একাত্ম । আর সেই কারণেই 80, 90 ও 2000-এর শুরুর দিকে প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে যে কোনও সংগীত পরিচালকের প্রথম পছন্দের নামই ছিল এস পি বালাসুব্রমনিয়ম । কিন্তু আর হাসিমুখে মাইক হাতে দেখা না গেলেও গানের মধ্য দিয়েই সকলের হদয়ে থেকে যাবেন তিনি ।