কলকাতা : কালো ওভারকোট পরে, চোখে সানগ্লাস আর ঠোঁটে চুরুট ধরা খলনায়ক নয়, সৌমিত্র ভিলেনের ছাপ ফোটাতেন তাঁর দৃষ্টিতে । মানুষ ভালো না খারাপ, তার পরিচয় পাওয়া যায় চোখের চাহনিতে । চ্যাটার্জি মশাই সেটা বেশ ভালোই বুঝতেন । তাই "খতম করে দেব", বা "ওর শেষ দেখে ছাড়ব" জাতীয় সংলাপ না বলেও সুক্ষ্ম খলনায়কের চরিত্রে দর্শককে মাত করতেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ।
ক্যারিয়ারগ্রাফে খুব বেশি সংখ্যক খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেননি তিনি । কিন্তু, যে'কটি করেছেন, সেখানেই ছাপ ফেলেছেন । আজ মানুষটি নেই । তাঁর সিনেমা, তাঁর শিল্পের চর্চা সর্বত্র । এর ফাঁকে কোথাও যেন মুখ লুকিয়েছে সন্দীপ বা অসিতরা । তাই একবার সেইসব চরিত্রদের দেখে নেওয়া যাক...
ঝিন্দের বন্দী : শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় কল্পিত ময়ূরবাহন হয়ে উঠেছিলেন সৌমিত্র । সুদর্শন চেহারা, ঠিক যেন কার্তিকের মতো । আর নামও দেখুন, ময়ূরবাহন অর্থাৎ কার্তিক । কিন্তু, মনটা বিষাক্ত । ক্ষমতার লোভ অন্ধ করেছিল ময়ূরবাহনকে । 1961 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে বাংলা ছবির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র উত্তমকুমারের সঙ্গে অভিনয়ে টক্কর দিয়েছিলেন সৌমিত্র ।
আগুন : তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে অসিত সেন পরিচালিত 'আগুন' মুক্তি পায় ঠিক পরের বছর, অর্থাৎ 1962 সালে । মূলত পারিবারিক ও মানসিক দ্বন্দ্বের উপর নির্ভর করে এগিয়েছে 'আগুন'-এর গল্প । সৌমিত্রর মধ্যে দেখা গেছে মানসিক নানা স্তর, একজন রক্তমাংসের মানুষের মধ্যে যেমনটা দেখা যায় । সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে খুব ভালো করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনেতা ।
ঘরে বাইরে : 1985 সালে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল 'ঘরে বাইরে' । সৌমিত্রর করা সেরা খলনায়কের চরিত্র বলা যেতে পারে 'সন্দীপ'-কে । সিনেমা শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে অবধি বোওঝাই যাবে না যে, সন্দীপ কোনও খারাপ কাজ করতে পারে, দুর্নীতি করতে পারে । আর এখানেই সৌমিত্রর জয় । সত্যজিতের বাছাই কি ভুল হতে পারে ?
কাকাবাবু হেরে গেলেন ? : সিনেমার নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত কাকাবাবুকে নিয়ে এই ছবি । তবে সৌমিত্র কিন্তু কাকাবাবু নন । বরং তাঁকে এই ছবিতে দেখা গেছে খলনায়কের চরিত্রে । শিক্ষিত, ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন এক লোভী মানুষ । পিনাকী চৌধুরি পরিচালিত এই ছবি মুক্তি পায় 1995 সালে । সৌমিত্রর বেশ বয়স তখন । তবুও তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করার রিস্ক নিয়েছিলেন এবং দারুণভাবে উতরে গেছিলেন ।