কলকাতা : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত আর্ট ডিরেক্টর নীতিশ রায়ের বাড়ি দক্ষিণ কলকাতায় । পরিচালক নন্দিতা রায়ের স্বামী তিনি । এই লকডাউনে বাড়িতে বসে স্মৃতিচারণা করছেন । দেখছেন একাধিক সিনেমাও । সাম্প্রতিককালের আর্ট ডিরেকশন কোন পথে এগোচ্ছে সে কথা ETV ভারত সিতারার সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় ব্যক্ত করলেন নীতিশ ।
নীতিশ রায় বলেন, "ভালো আছি । বাড়িতে বসে কাজ করছি । আমার ছেলেটা মুম্বইতে থাকে, সেও সেখানে ভালো আছে । চিন্তা হচ্ছে যদিও । আমরা কলকাতার খবর তো অর্ধেক পাই না ।"
যে কোনও শিল্পী বাড়িতে বসে নিরিবিলিতে কাজ করতে পছন্দ করেন, তার উপর নীতিশ রায়ের মতো মানুষ হলে তো কথাই নেই । তিনিও এই সময়টাকে কাজ লাগাচ্ছেন সেই সব কাজ করেই । বলেন, "আমার পুরোনো অভিজ্ঞতা এক জায়গায় জড়ো করার চেষ্টা করছি ।"
বাড়িতে বসে এখন স্মৃতিচারণা মূলক লেখা লিখছেন বলে জানান নীতিশ । বলেন, "স্মৃতি রোমন্থনের লেখা লিখছি । আমাকে মানুষ অনুরোধ করে, এত লোকের সঙ্গে কাজ করেছি, সেইসব যদি লিখি । নাহলে এই প্রজন্মের মানুষ সেগুলো জানতেই পারবে না । সেগুলো চিন্তা করেই লেখালিখির কাজ শুরু করলাম । এই যেমন দিলীপ কুমারের সঙ্গে যখন কাজ করতাম, আমার বন্ধু ছিলেন । তারপর পরিচালক অসিত সেন, ক্যামেরাম্যান কমলকুমার বোস, যিনি বিমল রায়ের সব ছবিতে কাজ করতেন । তারপর 'কাগজ কা ফুল' ছবির বি কে মূর্তি । তাঁর সঙ্গে 'ডিসকভারি অফ ইন্ডিয়া' করেছিলাম । এই সব মানুষের সঙ্গে নানা অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার । অনেক কথা আছে যেগুলো সাধারণ মানুষ জানেন না, সেগুলো লিখে রাখছি । পরবর্তীকালে সুবিধে হবে ।"
এদিকে কডাউনের মধ্যে কী ঘরের কাজও সামলাতে হচ্ছে নীতিশবাবুকে ? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "বাড়ির কাজ খুব একটা করতে হয় না আমাকে । আমি নিজের কাজ নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকি । এই সময় প্রচুর ছবি দেখছি । সেটাও তো একটা কাজ না !"
এখনকার প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাজের প্রশংসাও যেমন করলেন, তেমনই সমালোচনাও করলেন নীতিশ রায় । বলেন, "ওয়েব সিরিজ় দেখছি । অনেকে ভালো কাজ করছে , নতুন নতুন ছেলে যাঁরা আজকের লেখা লিখছেন, স্ক্রিপ্ট করছেন, অনেকে যাঁরা কাজ করছেন, আমার ছাত্ররাও রয়েছেন । কিন্তু, কাজের ধারা পালটে গিয়েছে । আমাদের সময় যখন কাজ করতাম তখন অনেকগুলো কাজ আমরা একা করতাম । এখন তো সেসব পালটে গিয়েছে । যে লোকটা এখন সেট ডিজ়াইন করে, সে সেট বানায় না । সেটা বানায় আরেকটা লোক । কাজগুলো আলাদা আলাদা মানুষ করে । তাতে কাজের মুন্সিয়ানা ডাইলুটেড হয়ে যায় । আমার তো তাই মনে হয় ।"
বলতে বলতে কিছু উদাহরণ দিলেন নীতিশ । বলেন, "যেমন খুব নাম করা ছবি, 'বাজিরাও মাস্তানি', 'পদ্মাবত', 'পানিপথ' আমার দেখলে বিয়েবাড়ি বলে মনে হয় । সেখানে ক্যামেরাম্যানও বিয়েবাড়ির মতো লাইট করে, ছবিও দেখলে মনে হয় বিয়েবাড়ি দেখছি । আমিও বড় ছবি করেছি, এর চেয়েও বড় । যেমন 'গ্ল্যাডিয়েটর', কোথাও কি মনে হবে সেটা বিয়েবাড়ি ? এই ফিলিংটা ছবির মধ্যে নেই তো । এই কথাগুলো বলতে আমি ভয় পাই না । আমি না বললে, বলবেটা কে ? অনেকে কাজ না পাওয়ার ভয়ে বলতে চায় না । আমার তাতে কিছু এসে যায় না ।"