সুন্দরবন : আমফানে বিপর্যস্ত সুন্দরবনে ত্রাণ পৌঁছে দিলেন সিনিয়র অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল ও তাঁর পুত্র গায়ক-অভিনেতা অমর্ত্য রায় । গত পরশু তাঁরা ফিরেছেন সুন্দরবন থেকে । সুন্দরবনের অসহায় মানুষগুলোর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে তাঁদের । ETV ভারত সিতারাকে জানালেন চৈতি ।
কলকাতায় ফ্ল্যাটের নিচে গ্যারেজে প্রায় তিনদিন ধরে ত্রাণের সামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, বিস্কুটের প্যাকেট, জামাকাপড় প্রভৃতি এক একটি প্যাকেটে ভরেছিলেন চৈতি, অমর্ত্য এবং চৈতির দীর্ঘদিনের সহকারী পাপ্পু যাদব । অভিনেত্রী আমাদের বললেন, "সবটাই আমরা নিজের হাতে করেছি । এই কাজে আমাদের অসম্ভব সাহায্য করেছে পুলিশ । ওখানকার SDPO, OC, আমাদের ওখানে নিয়ে গিয়েছিলেন । সকলকে লাইন করে দাঁড় করিয়ে পুরো বিষয়টা অর্গানাইজ় করেছিলেন । মাটিতে গোল দাগ কেটে দিয়েছিলেন । তা না হলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন ছিল ।"
চৈতি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন পুলিশকর্মী দীপঙ্করবাবুর কথা । বললেন, "আমফানের আগে ঘরে ঘরে গিয়ে তিনি বলে এসেছিলেন, বাড়ি থেকে না বেরতে । সুন্দরবনের পুলিশ সব ঘরের খবর রাখে । আমি যখন জামাকাপড় তুলে দিচ্ছিলাম মানুষগুলোর হাতে, তখন তাঁরা আমাকে পাস থেকে বলে দিচ্ছিলেন, কাদের বাড়িতে দুটো ছেলে আছে বা মেয়ে আছে, সেই ভাবে জামা দিতে । কোন মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি অভাবী, সেগুলোও তাঁরা জানেন । এটা দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে ।"
সুন্দরবনে চৈতি এবং অমর্ত্যর সঙ্গে গিয়েছিলেন চৈতির ভাই সোমনাথ ঘোষাল এবং চৈতির দীর্ঘদিনের সহকারী পাপ্পু যাদব । চৈতি বললেন, "আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করব পাপ্পুর কথা । ও কিন্তু একজন গরীব মানুষ । ও সমস্ত কিছু করেছে । ওঁর নিজের বাচ্চার যত জামাকাপড় আছে, যেগুলো আর পরবে না, সেগুলো ওঁর বউ বের করে দিয়েছে সুন্দরবনে দেওয়ার জন্য । তাছাড়া যা কাজ করেছে, আমার প্রশংসার ভাষা নেই বলার । আমি ওঁর জন্য খুব গর্বিত ।"
একটা লঞ্চ ভর্তি হয়ে গেছিল ত্রাণের সামগ্রীতে । চৈতি বললেন, "প্রায় 1500 কেজি চাল, 500 কেজি ডাল, 125 কেজি মুড়ি, 2000 বিস্কুটের প্যাকেট, বড় বস্তার 60-70টি ভরে গেছিল জামা-কাপড়ে ।"
সুন্দরবনের পরিস্থিতি সম্পর্কে চৈতি বললেন, "বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে গেছে ধান ক্ষেতে । খুব খারাপ পরিস্থিতি দেখে আসলাম । ওঁদের না আছে খাবার, না আছে জল । ওঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরে, মুখে একটু হাসি ফোটাতে পেরে খুব ভালো লাগছে । এই কাজটা করে যদি 100 জনের মধ্যে একজনকেও প্রভাবিত করতে পারি, তাহলে বুঝব কাজের মতো কাজ করতে পেরেছি ।"
চৈতির পাশে অনেকেই এসে দাঁড়িয়েছেন । তাঁদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে চৈতি বললেন, "আমার চেনাজানার মধ্যে অনেকে আমাকে জামাকাপড় দিয়েছেন । একজন বৃদ্ধাকে যখন জামা কাপড় তুলে দিচ্ছি, দেখি সিল্কের কাঁথা । সেই বৃদ্ধা যে কি উপকৃত হবেন, সেটা ভেবে কি আনন্দই না হচ্ছে ! আমার পরিচিতদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই তাঁদের আলমারি থেকে ইস্ত্রি করা ভালো ভালো জামাকাপড় বের করে দিয়ে দিয়েছেন । তাঁদেরও আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই ।"
অনেকেই আবার বলে, সেলিব্রিটিরা পাবলিসিটির জন্য এইসব ত্রাণের কাজ করে থাকেন । তাঁদের উদ্দেশ্যে চৈতির পরিষ্কার বক্তব্য, "এরকম কেউ যদি ভাবে আমার কিছু যায় আসে না । আমার উদ্দেশ্য আমাকে দেখে যদি সমাজের আরও কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসেন, তাহলে উপকারী সামাজিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারব ।"
একজন সেলিব্রেটি হয়ে অসহায় মানুষগুলোর কাছে যেভাবে তিনি ছুটে গেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয় । চৈতি আমাদের কাছে ব্যক্ত করেছেন, যখন সেই মানুষগুলো তাঁর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করছিলেন, তিনি চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি । শুধু বলেছেন, "আমার ছেলে অমর্ত্যর মঙ্গল হোক ।"