হাওড়া, 1 মে : ঈশ্বরকণা আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে বছর দশেক আগে উত্তাল হয় গোটা বিশ্ব । অণু ও পরমাণুকে ভেঙে এক বিশেষ কণাতে নিয়ে আসার যে বিশেষ যন্ত্র, তা বিশেষভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হয় জেনিভার সার্ন কেন্দ্রে । আর এই বিশেষ যন্ত্রটি তৈরিতে লেগেছিল বহু ধাতব অংশ । পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যা তৈরি করা হয়েছিল । তারই মধ্যে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের একটি ধাতব হোল্ডার তৈরি করা হয় হাওড়ার দাসনগরের লেদ কারখানায় ।
জেনিভার সার্ন কেন্দ্রের ওই হাইড্রো কোলাইড মেশিনের কথা বিশ্বের সব মানুষ জানলেও হাওড়ার এই লেদ কারখানার কথা রয়ে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে । হাওড়া ফুল মেলা কমিটির ব্যবস্থাপনায় ও সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের উদ্যোগে এই ধাতব হোল্ডার তৈরির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে (WB Government Will Recognize the Workers Involved in the Discovery of God Particles) । পৃথিবীর বহু উন্নত দেশে এই ধাতব হোল্ডার তৈরির চেষ্টা হলেও হাওড়ার এই লেদ মেশিনে তৈরি হোল্ডারের মতো নিখুঁত তৈরি সম্ভব হয়নি । তারপর হাওড়ার কদমতলার এই আট বাই আট মাপের লেদ কারখানায় খালি গায়ে কাজ করা শ্রমিকেরা 100 শতাংশ নিখুঁতভাবে তৈরি করে দেন এই হোল্ডার ।
আরও পড়ুন : দশকের বিজ্ঞান চর্চা
এই হোল্ডার তৈরির যে টিম এখানে কাজ করেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কালীপদ প্রামাণিক, বুদ্ধদেব দে, সনাতন হাজরা, সনৎ পাল ও প্রকাশ ভট্টাচার্যরা ৷ এই শ্রমিকদের বিষয়ে সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, হাওড়াকে শেফিল্ড তকমার এঁরাই কারিগর । এঁরাই আধুনিক যুগের বিশ্বকর্মা । এঁদের জন্যই সারা বিশ্বে হাওড়ার নাম ছড়িয়ে পড়েছে । এঁদের তৈরি হোল্ডারের নিখুঁত গঠনের কারণেই ঈশ্বরকণা আবিষ্কারের পথ অনেক মসৃণ হয় ।
ওই কারখানাতে কর্মরত সঞ্জয় দাস জানান, এই কাজের বরাত পেয়েছিলেন কলকাতার নরেন্দ্র অ্যান্ড নরেন্দ্র নামের কোম্পানির মুখোপাধ্যায় বাবু । বরাত সরাসরি না পেলেও এই কারখানাতেই তাঁরা ওই হোল্ডার তৈরি করেন । তবে তৈরির সময় তাঁরা জানতেন না এর ব্যবহার আর মূল্য কী । আজ তা জানতে পেরে তাঁরা গর্ব অনুভব করছেন ।
আরও পড়ুন : হিমবাহ গলে যাওয়া আটকাতে কমাতে হবে কার্বন কণা, বিশ্ব ব্যাঙ্কের গবেষণায় তথ্য
সঞ্জয়বাবু আরও জানান, এই ধরণের কাজ যদি ফের পান তবে নিখুঁতভাবে তা সম্পন্ন করবেন । এই ধরণের কাজ করার সুদক্ষ শ্রমিক ও যন্ত্র তাঁদের রয়েছে । রাজ্য সরকার পাশে দাঁড়ালে তাঁরা এই ধরণের কাজে মনোনিবেশ করতে পারবেন ৷
একই দাবি ওই কারখানার ব্যবস্থাপক সুধীর মাইতিরও ৷ তাঁর কথায়, "জানতাম না এই ধরণের কাজের মাধ্যমে বিশ্বের এত বড় ঘটনার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছি । এটা ভাবলেই শিহরণ জাগছে । ওই কাজ শেষ করতে তিন মাস সময় লেগেছিল । চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক লাগাতার তিন মাস ধরে ওই হোল্ডার তৈরিতে ব্যস্ত ছিল । এই কাজ করে হাওড়ার নাম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে । একজন ভারতীয় হিসাবে গর্বিত ।"
প্রসঙ্গত, 2012 সালে ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনিভার কাছে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য উন্মোচনে স্থাপিত সুবিশাল যন্ত্র লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় ওই কণার অস্তিত্ব । বলা হয়, বিজ্ঞান গবেষণায় গত অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল এটি । গ্রীষ্মে লার্জ হ্যাডরন কোলাইডর যন্ত্র যে কণার সন্ধান দিয়েছিল, তা প্রকৃতপক্ষে 'ঈশ্বরকণা'রই একটি বিশেষ রূপ বলে সার্নের তরফ থেকে দাবি করা হয় ।
আরও পড়ুন : Chandrayaan-2 : চাঁদে জলের কণা ? চন্দ্রযান-2-এর জোগাড় করা তথ্যে মিলল ইঙ্গিত