টিপটিপ করে পড়া বৃষ্টি, কুলকুল করে বওয়া যাওয়া নদী, ঢেউয়ের ছলাৎ শব্দ সম্পর্কে আমাদের ধারনা আছে ৷ তাই বলে গরম জল ও ঠান্ডা জলের শব্দ ! তাও আবার না কি আলাদা ! এতটাই আলাদা, যে 100 জনের মধ্যে 90 জন বলে দিতে পারেন, কোনটা ঠান্ডা আর কোনটা গরম !
জল সম্পর্কিত অতি সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল এমনটাই৷ গবেষণা করেছে একটি ব্রিটিশ ব্র্যান্ডিং কম্পানি ৷ উদ্দেশ্য ছিল, বিশেষ কিছু পণ্যের ব্র্যান্ডিংয়ে তথা বিজ্ঞাপনে শব্দ (sound)-এর অভিনব ব্যবহার ৷ যার পোশাকি নাম সাউন্ড ডিজ়াইনড অ্যাড ৷ চা, মিনারেল ওয়াটার, এমন কী ক্যাফে কিংবা রেস্তরাঁর বিজ্ঞাপনে যা কার্যকরী ৷ তো সেই মতো শুরু হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷ আর তাতেই দেখা যায়, শীতল জল আর উষ্ণ জল কাপে বা গ্লাসের মতো কোনও পাত্রে ঢাললে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন শব্দ হয় ৷ তরল পাত্রে ঢাললে সেই শব্দ শুনে 96 শতাংশ মানুষ বলে দিচ্ছেন, তরলটি উষ্ণ না শীতল৷ উল্লেখ্য, একই ধাতুর পাত্রে পানীয় ঢেলে করা হয়েছিল এই পরীক্ষা ৷ অবশ্যই চোখ বন্ধ অবস্থায় চিহ্নিতকরণ হয় তরলের ৷ কিন্তু শব্দ আলাদা হল কেন ? কোথায় পার্থক্য দুই তরলে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা জল অনেক সান্দ্র, সহজ বাংলায় বললে থিতু ৷ শীতল জলের অণু আন্দোলিত হয় অনেক কম, গরম জলের তুলনায় ৷ ফলে তা অনেক বেশি স্থির ৷ এই কারণে এই জলের শব্দের অনুরণন কম ৷ শব্দতরঙ্গ কম হওয়ায় শব্দের তীব্রতাও (Volume) কমের দিকে ৷ অন্যদিকে গরম জলের অণু অনেক বেশি অন্দোলিত হয় যেমন, তেমনই তাতে তৈরি হয় প্রচুর বুদবুদ কেন্দ্র ৷ ফলে এই জলের শব্দের অনুরণন বেশি৷ সহজে শোনা যায় ৷
পরীক্ষায় আরও দেখে গেছে, ঠান্ডা জলের শব্দকে চিহ্নিত করতে পারছেন 80 শতাংশ মানুষ ৷ অন্যদিকে, 90 শতাংশ চিহ্নিত করতে পারছেন গরম জলের শব্দকে ৷ তাহলে কী দাঁড়াল ?
অতএব প্রমাণিত হল, রং, স্বাদ আর উষ্ণতাই কেবল পানীয়ের চরিত্র না, তাঁর "গান"ও আছে, যদি আপনার সংবেদনশীল কান থাকে ৷