ETV Bharat / opinion

Bijaya Dashami 2023: মুখে কুলুপ আঁটার 'মিষ্টি' ইতিহাস, দশমীর আবহে অজানায় ডুব - ইতিহাসের সেই অজনা অধ্যায়

রাজনৈতিক নেতা হোক বা অভিনেতা কেউ কোনও বিষয় নীরবতার আশ্রয় নিলেই আমরা বলি, ‘তিনি মুখে কুলুপ এঁটেছেন ।’ কিন্তু জানেন কী, ঠিক কীভাবে বাঙালি সমাজে এই কথার চল হল! ইতিহাসের সেই অজনা অধ্যায় তুলে ধরা হল ইটিভি ভারতের বিশেষ প্রতিবেদনে ।

Bijoya Dashami 2023
দশমীর আবহে অজানায় ডুব
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Oct 24, 2023, 9:33 PM IST

কলকাতা, 24 অক্টোবর: বিজয়ার আবহে মুখে মিষ্টি না-হলে বাঙালির চলে না । তা না-করে দশমীতে 'মুখে কুলুপ আঁটা'র কথা কেন বলা হচ্ছে সে প্রশ্ন প্রথমেই উঠবে তাতে অস্বাভিবকতার কিছু নেই । কিন্তু জানলে অবাক হতে হয়, শুধু বিজয়া দশমী কেন বাংলার বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গেই এই মুখে কুলুপ আঁটার সরাসরি যোগাযোগ আছে । এই প্রতিবেদনে সেই অজনা ইতিহাসই পাঠকদের কাছে তুলে ধরবে ইটিভি ভারত ।

বাঙালি সুপ্রাচীন কাল থেকেই মিষ্টি খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসে । উৎসবের সময় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মিষ্টি পাঠানোর চলও রয়েছে বেশ কয়েকশো বছর ধরে । মিষ্টি তৈরি থেকে শুরু করে নানা ব্যাপারে অনেক বদল এলেও এই বিষয়টি বদলায়নি । আর এই মিষ্টি পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গেই সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি ।

বেশ কয়েকশো বছর আগের কথা । তৎকালীন গ্রামবাংলায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র মিষ্টি পাঠানো হতো ঝুড়িতে চাপিয়ে ৷ একদল মানুষ সেই মিষ্টি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন । সেখান থেকেই গোলমালের শুরু । অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়ার ক্লান্তি দূর করতে ঝুড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে এক-আধটা মিষ্টি হজম করে ফেলতেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় । তবে এই মিষ্টি পেটে চালান দেওয়ার বিষয়টি একটি বা দু'টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি উধাও হওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে ।

দেখা গেল, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মিষ্টি শেষ হয়ে যাচ্ছে । এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রেহাই দিতে ঝুড়ির বদলে হাড়ির ব্যবহার শুরু হয় । হাড়ির মুখটা আটা দিয়ে আটকে দেওয়া হত । তার ফলে মিষ্টি পড়ে যাওয়ার ভয় থাকত না । শুধু তাই নয়, বাহকদেরও অজুহাত দেওয়ার সুযোগও কমে যেত । এখান থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে বলে মনে করেন গবেষক হরিপদ ভৌমিক ।

তিনি বলেন, "ইতিহাসে এমন উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে যা থেকে জানা যায় মিষ্টির হাড়ির মুখ ময়দা দিয়ে আটকানো থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ জীবনে ঢুকে পড়েছে । স্বামী বিবেকানন্দের ভাইয়ের লেখাতেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ।"

আরও পড়ুন:দোকানে যেতে হবে না, দশমীর মিষ্টিমুখ করুন বাড়িতে বানিয়ে

বাঙালির কাছে এখন বিজয় দশমী মানেই রসগোল্লা ৷ তবে ইতিহাস বলছে অন্য কথা । রসগোল্লার অনেক আগে এসেছে সন্দেশ । বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে সে কথাই তুলে ধরা হয়েছে । আর এখনকার সঙ্গে অতীতের সন্দেশ শব্দের ধারণাও ছিল আলাদা । এখন সন্দেশ বলতে বোঝায় মিষ্টি ৷ তখন সন্দেশ বলতে বোঝাত, কোনও শুভ সংবাদ জানানোর রীতি । ইতিহাস বলছে, সন্দেশের হাত দিয়ে শুরু হওয়া বাঙালির 'মিষ্টি সফর' ধীরে ধীরে রসগোল্লার দিকে বাঁক নিয়েছে । শুধু তাই নয়, নিজের রূপ,রস আর গন্ধে হয়ে উঠেছে বঙ্গ সমাজের অঙ্গ ।

পরিবর্তন এসেছে রসগোল্লাতেও ৷ হরিপদ ভৌমিক জানান, শুরুর দিকে যে রসগোল্লা ছিল তার পোশাকি নাম ঢ্যালা রসগোল্লা । ছানার ঢ্যালা থেকে তৈরি হত বলেই এমন নাম । পরে এলো স্পঞ্জ রসগোল্লা । আরও পরে এলো দানাদাঁড় রসগোল্লা ৷

শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় রসগোল্লা স্বাদ আলাদা । তারও নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন হরিপদ । তিনি বলেন, "রাজ্যের সমস্ত জেলায় জল একরকম নয় । তার জেরে রসগোল্লা স্বাদও আলাদা হয়েছে । অন্য মিষ্টির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি তত ভালো করে বোঝা যায় না। কিন্তু রসগোল্লার সঙ্গে সরাসরি জলের সম্পর্ক থাকে বলে স্বাদের ফারাক বোঝা যায় সহজেই ।"

রসগোল্লা আছে বাঙালির ইতিহাসে । আর এই ইতিহাসে আছে বিতর্কও । তবে সব বিতর্ককে হারিয়ে রসগোল্লা সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কে কোনও খাদ নেই । তাই বিজয়া মানে রসগোল্লা আর রসগোল্লা মানেই বিজয়া ।

কলকাতা, 24 অক্টোবর: বিজয়ার আবহে মুখে মিষ্টি না-হলে বাঙালির চলে না । তা না-করে দশমীতে 'মুখে কুলুপ আঁটা'র কথা কেন বলা হচ্ছে সে প্রশ্ন প্রথমেই উঠবে তাতে অস্বাভিবকতার কিছু নেই । কিন্তু জানলে অবাক হতে হয়, শুধু বিজয়া দশমী কেন বাংলার বিভিন্ন উৎসবের সঙ্গেই এই মুখে কুলুপ আঁটার সরাসরি যোগাযোগ আছে । এই প্রতিবেদনে সেই অজনা ইতিহাসই পাঠকদের কাছে তুলে ধরবে ইটিভি ভারত ।

বাঙালি সুপ্রাচীন কাল থেকেই মিষ্টি খেতে এবং খাওয়াতে ভালোবাসে । উৎসবের সময় এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় মিষ্টি পাঠানোর চলও রয়েছে বেশ কয়েকশো বছর ধরে । মিষ্টি তৈরি থেকে শুরু করে নানা ব্যাপারে অনেক বদল এলেও এই বিষয়টি বদলায়নি । আর এই মিষ্টি পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গেই সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি ।

বেশ কয়েকশো বছর আগের কথা । তৎকালীন গ্রামবাংলায় এক জায়গা থেকে অন্যত্র মিষ্টি পাঠানো হতো ঝুড়িতে চাপিয়ে ৷ একদল মানুষ সেই মিষ্টি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন । সেখান থেকেই গোলমালের শুরু । অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়ার ক্লান্তি দূর করতে ঝুড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে এক-আধটা মিষ্টি হজম করে ফেলতেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় । তবে এই মিষ্টি পেটে চালান দেওয়ার বিষয়টি একটি বা দু'টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টি উধাও হওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে ।

দেখা গেল, গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই মিষ্টি শেষ হয়ে যাচ্ছে । এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রেহাই দিতে ঝুড়ির বদলে হাড়ির ব্যবহার শুরু হয় । হাড়ির মুখটা আটা দিয়ে আটকে দেওয়া হত । তার ফলে মিষ্টি পড়ে যাওয়ার ভয় থাকত না । শুধু তাই নয়, বাহকদেরও অজুহাত দেওয়ার সুযোগও কমে যেত । এখান থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ ব্যবস্থায় ঢুকে পড়ে বলে মনে করেন গবেষক হরিপদ ভৌমিক ।

তিনি বলেন, "ইতিহাসে এমন উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে যা থেকে জানা যায় মিষ্টির হাড়ির মুখ ময়দা দিয়ে আটকানো থেকেই মুখে কুলুপ আঁটার বিষয়টি বাঙালির সমাজ জীবনে ঢুকে পড়েছে । স্বামী বিবেকানন্দের ভাইয়ের লেখাতেও এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ।"

আরও পড়ুন:দোকানে যেতে হবে না, দশমীর মিষ্টিমুখ করুন বাড়িতে বানিয়ে

বাঙালির কাছে এখন বিজয় দশমী মানেই রসগোল্লা ৷ তবে ইতিহাস বলছে অন্য কথা । রসগোল্লার অনেক আগে এসেছে সন্দেশ । বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলে সে কথাই তুলে ধরা হয়েছে । আর এখনকার সঙ্গে অতীতের সন্দেশ শব্দের ধারণাও ছিল আলাদা । এখন সন্দেশ বলতে বোঝায় মিষ্টি ৷ তখন সন্দেশ বলতে বোঝাত, কোনও শুভ সংবাদ জানানোর রীতি । ইতিহাস বলছে, সন্দেশের হাত দিয়ে শুরু হওয়া বাঙালির 'মিষ্টি সফর' ধীরে ধীরে রসগোল্লার দিকে বাঁক নিয়েছে । শুধু তাই নয়, নিজের রূপ,রস আর গন্ধে হয়ে উঠেছে বঙ্গ সমাজের অঙ্গ ।

পরিবর্তন এসেছে রসগোল্লাতেও ৷ হরিপদ ভৌমিক জানান, শুরুর দিকে যে রসগোল্লা ছিল তার পোশাকি নাম ঢ্যালা রসগোল্লা । ছানার ঢ্যালা থেকে তৈরি হত বলেই এমন নাম । পরে এলো স্পঞ্জ রসগোল্লা । আরও পরে এলো দানাদাঁড় রসগোল্লা ৷

শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটি জেলায় রসগোল্লা স্বাদ আলাদা । তারও নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করেন হরিপদ । তিনি বলেন, "রাজ্যের সমস্ত জেলায় জল একরকম নয় । তার জেরে রসগোল্লা স্বাদও আলাদা হয়েছে । অন্য মিষ্টির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি তত ভালো করে বোঝা যায় না। কিন্তু রসগোল্লার সঙ্গে সরাসরি জলের সম্পর্ক থাকে বলে স্বাদের ফারাক বোঝা যায় সহজেই ।"

রসগোল্লা আছে বাঙালির ইতিহাসে । আর এই ইতিহাসে আছে বিতর্কও । তবে সব বিতর্ককে হারিয়ে রসগোল্লা সঙ্গে বাঙালির সম্পর্কে কোনও খাদ নেই । তাই বিজয়া মানে রসগোল্লা আর রসগোল্লা মানেই বিজয়া ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.