ETV Bharat / opinion

ভারতে শিক্ষার জরুরি অবস্থা

ইনাডুর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শিক্ষাবিদ এবং পদ্মশ্রী কৃষ্ণকুমারবাবু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন । এখানে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল ।

ভারতে শিক্ষার জরুরি অবস্থা
ভারতে শিক্ষার জরুরি অবস্থা
author img

By

Published : Apr 28, 2021, 11:42 AM IST

শিক্ষাবিদ এবং পদ্মশ্রী কৃষ্ণ কুমার বলেছিলেন, করোনার কারণে গোটা দেশের কোটি কোটি শিশু শিক্ষার হাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে , এখনও হচ্ছে । জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধানের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে গোটা দেশকে একটা বিশাল মূল্য চোকাতে হবে । তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্ক করেছেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ক্ষু্ণ্ণ হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্করভাবে নিম্নমুখী হয়ে পড়বে । কৃষ্ণকুমার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি ) অধিকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন । তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তিনি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল গুলো চালু করতে এবং স্কুলছুট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য আর্থিক সহায়তার কথা বলেছেন । তবে এসব কিছুর আগে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, এই করোনা পরিস্থিতি শিশুদের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে বিস্তৃত সমীক্ষা চালানোর উপর । ইনাডুর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণকুমারবাবু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন । এখানে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল ।

দ্বিতীয় তরঙ্গ কীভাবে শিক্ষাকে প্রভাবিত করবে ?

লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের জন্মস্থানে ফিরে গিয়েছে । কিন্তু, তাঁদের শিশুদের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে কোনও সমীক্ষা চালানো হয়নি । এমনকি, মেট্রো শহরেও বিপুল সংখ্যক শিশু পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত ছিল । শ্রমিকরা করোনার প্রথম তরঙ্গের পর আবার শহরে ফিরে আসেন, কিন্তু সঙ্গে তাঁদের শিশু সন্তানটিকে আর নেননি । দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এই স্কুলগুলিতে পড়া ছেলেমেয়েদের বর্তমান অবস্থা কেউ জানেন না ।

করোনার প্রভাব কমলে কেন্দ্রীয় সরকারের কী করা উচিত ? তারা এখনই বা কী ব্যবস্থা নিতে পারে ?

শিক্ষার্থীদের উপর করোনার প্রভাব সম্পর্কে একটা বিস্তৃত সমীক্ষা সবার আগে করে ফেলতে হবে । নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান অবশ্যই জোগাড় করতে হবে । সঠিক ক্ষেত্র এবং পরিসংখ্যান ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা কোনওভাবেই সম্ভব নয় । গত একবছর ধরে মিড ডে মিলের প্রকল্পটার কী হল, স্কুল বন্ধ থাকায় তা পড়ুয়াদের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ অবশ্যই জরুরি । বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এখন কোথায়, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হত । তাদের সরকারি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হত । তবে, সবার আগে এই সংখ্যাটা জানা আমাদের সব থেকে প্রয়োজন । আর সেটা জানতে পারলেই সরকারি স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বৃদ্ধি, স্থানের বৃদ্ধি ঘটিয়ে ওই সব স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানো সম্ভব । দেখে মনে হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক শিশু, বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা স্কুল ছেড়ে শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত হয়েছে । আমরা যদি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে সেই সব শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারব । এ বিষয়ে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে ।

আরও পড়ুন : দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড, দেশে প্রথমবার একদিনে মৃত ৩ হাজারের বেশি

সিবিএসই এবং রাজ্য সরকারি স্কুলগুলির পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে । এর পরিণতি কী হতে পারে ?

দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল বা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত । আসলে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা গতবছর কেবল মাত্র অনলাইনে ক্লাস করেছে । সুতরাং, পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়া যেতে পারে । এটা কোনও অসম্ভব নয় । ছোটদের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমের উপর গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে । অবশ্যই প্রয়োজনভিত্তিক । বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য অনলাইন পরীক্ষা নিচ্ছে ।

ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করছে । এই ফাঁকটা কীভাবে পূরণ করা সম্ভব ?

এই ব্যবধান আগেও ছিল । এখনও আছে । তবে এখন এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করতে হবে । সরকারের উচিত, যে সকল বেসরকারি স্কুলগুলি শিক্ষকদের ঠিক মত বেতন দিতে পারে না, তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা । এক মাত্র এই ভাবেই আমরা দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে পারব । একইভাবে, সরকারের উচিত ন্যূনতম ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতাগুলি যা করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বেসরকারি স্কুলগুলির ক্ষেত্রে তা দ্রুত চালু করা । এটা কোনওভাবেই অতিরিক্ত চাপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না । স্কুলছুট সব শিশুরা যদি ফিরে আসে, তাহলে স্কুলগুলির জন্য পরিকাঠামো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যায় বৃদ্ধি করতে হবে অতি দ্রুত হারে । কোনওভাবেই এই কাজটা করতে দেরি করা চলবে না । শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যা যা দরকার, তা করতেই হবে । আর সেটা করতে হবে দ্রুতটার সঙ্গে ।

আরও পড়ুন : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক মোদির, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতিতে জোর

চার বছরের কম বয়সের শিশুদের অনলাইনে ক্লাস করানো হচ্ছে, এটা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে ?

ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশে কিণ্ডারগার্টেন বা প্রাক- প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের জন্য অনলাইনে ক্লাস করানো হয় না । শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাবে অনলাইন ক্লাস শিশুমনের বিকাশ এবং মানসিকতার দিক থেকে সুখকর নয় । বড়রা কীভাবে ছোটদের পড়াবেন, সে সম্পর্কে একটা ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে পারে । করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার পর শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা উচিত । এই বয়সের শিশুদের জন্য ক্লাস করার কঠোর রুটিন পালন করার কোনও প্রয়োজন নেই । সামান্য প্রাথমিক শিক্ষার পরই তাদের অবাধে খেলাধুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন ।

করোনা জনিত কারণে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, সেই পরিবারগুলির শিশুরা যাতে শিক্ষার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের কী পদক্ষেপ করা উচিত ?

এ জাতীয় সকল ছাত্রকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে । এমন কোটি কোটি শিশু রয়েছে, যারা কোনও সুবিধা পায়নি, যারা বুনিয়াদি শিক্ষার সামান্যতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত । সমীক্ষার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোন স্তরে কতটা আর্থিক সহায়তা বাড়ানো দরকার সে সম্পর্কে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত । লকডাউনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি স্কুলগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে । এখন এটা কেবল সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রশ্নের মধ্যে আটকে রাখার সময় নয় । কোন স্কুলে কত পড়ুয়া ছিল, সেটাই সবার আগে বিবেচ্য হওয়া উচিত । পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর, সরকারি সহায়তার ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে । এই মুহূর্তে আমরা একটি গভীর সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি । আমাদের অবশ্যই এই সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে । আমরা যদি স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে আগামী দিনে দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে । এর বিশাল মূল্য দিতে হবে দেশকেই । বহু পিছনে চলে যাবে দেশের উন্নয়ন । আর এই সকল দিক বিবেচনা করে, বর্তমান সময়টাকে জাতীয় শিক্ষার অন্যতম জরুরি সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে ।

শিক্ষাবিদ এবং পদ্মশ্রী কৃষ্ণ কুমার বলেছিলেন, করোনার কারণে গোটা দেশের কোটি কোটি শিশু শিক্ষার হাত থেকে বঞ্চিত হয়েছে , এখনও হচ্ছে । জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধানের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে গোটা দেশকে একটা বিশাল মূল্য চোকাতে হবে । তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে সতর্ক করেছেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি ক্ষু্ণ্ণ হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্করভাবে নিম্নমুখী হয়ে পড়বে । কৃষ্ণকুমার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি ) অধিকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন । তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তিনি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুল গুলো চালু করতে এবং স্কুলছুট ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার জন্য আর্থিক সহায়তার কথা বলেছেন । তবে এসব কিছুর আগে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন, এই করোনা পরিস্থিতি শিশুদের উপর কেমন প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে বিস্তৃত সমীক্ষা চালানোর উপর । ইনাডুর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণকুমারবাবু দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন । এখানে তার কিছু অংশ তুলে ধরা হল ।

দ্বিতীয় তরঙ্গ কীভাবে শিক্ষাকে প্রভাবিত করবে ?

লাখ লাখ পরিযায়ী শ্রমিক তাঁদের জন্মস্থানে ফিরে গিয়েছে । কিন্তু, তাঁদের শিশুদের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে কোনও সমীক্ষা চালানো হয়নি । এমনকি, মেট্রো শহরেও বিপুল সংখ্যক শিশু পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত ছিল । শ্রমিকরা করোনার প্রথম তরঙ্গের পর আবার শহরে ফিরে আসেন, কিন্তু সঙ্গে তাঁদের শিশু সন্তানটিকে আর নেননি । দেশ জুড়ে লক্ষ লক্ষ বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । এই স্কুলগুলিতে পড়া ছেলেমেয়েদের বর্তমান অবস্থা কেউ জানেন না ।

করোনার প্রভাব কমলে কেন্দ্রীয় সরকারের কী করা উচিত ? তারা এখনই বা কী ব্যবস্থা নিতে পারে ?

শিক্ষার্থীদের উপর করোনার প্রভাব সম্পর্কে একটা বিস্তৃত সমীক্ষা সবার আগে করে ফেলতে হবে । নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান অবশ্যই জোগাড় করতে হবে । সঠিক ক্ষেত্র এবং পরিসংখ্যান ছাড়া কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা কোনওভাবেই সম্ভব নয় । গত একবছর ধরে মিড ডে মিলের প্রকল্পটার কী হল, স্কুল বন্ধ থাকায় তা পড়ুয়াদের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ অবশ্যই জরুরি । বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়ারা এখন কোথায়, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে হত । তাদের সরকারি স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হত । তবে, সবার আগে এই সংখ্যাটা জানা আমাদের সব থেকে প্রয়োজন । আর সেটা জানতে পারলেই সরকারি স্কুলগুলিতে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো বৃদ্ধি, স্থানের বৃদ্ধি ঘটিয়ে ওই সব স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরানো সম্ভব । দেখে মনে হচ্ছে, বিপুল সংখ্যক শিশু, বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা স্কুল ছেড়ে শ্রমিকের কাজে নিযুক্ত হয়েছে । আমরা যদি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ করতে পারি, তাহলে সেই সব শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে পারব । এ বিষয়ে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা সম্ভব হবে ।

আরও পড়ুন : দৈনিক আক্রান্তের রেকর্ড, দেশে প্রথমবার একদিনে মৃত ৩ হাজারের বেশি

সিবিএসই এবং রাজ্য সরকারি স্কুলগুলির পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে । এর পরিণতি কী হতে পারে ?

দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল বা দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত যুক্তিসঙ্গত । আসলে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা গতবছর কেবল মাত্র অনলাইনে ক্লাস করেছে । সুতরাং, পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়া যেতে পারে । এটা কোনও অসম্ভব নয় । ছোটদের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমের উপর গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে । অবশ্যই প্রয়োজনভিত্তিক । বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য অনলাইন পরীক্ষা নিচ্ছে ।

ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করছে । এই ফাঁকটা কীভাবে পূরণ করা সম্ভব ?

এই ব্যবধান আগেও ছিল । এখনও আছে । তবে এখন এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ করতে হবে । সরকারের উচিত, যে সকল বেসরকারি স্কুলগুলি শিক্ষকদের ঠিক মত বেতন দিতে পারে না, তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা । এক মাত্র এই ভাবেই আমরা দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করতে পারব । একইভাবে, সরকারের উচিত ন্যূনতম ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতাগুলি যা করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, বেসরকারি স্কুলগুলির ক্ষেত্রে তা দ্রুত চালু করা । এটা কোনওভাবেই অতিরিক্ত চাপ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না । স্কুলছুট সব শিশুরা যদি ফিরে আসে, তাহলে স্কুলগুলির জন্য পরিকাঠামো এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যায় বৃদ্ধি করতে হবে অতি দ্রুত হারে । কোনওভাবেই এই কাজটা করতে দেরি করা চলবে না । শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যা যা দরকার, তা করতেই হবে । আর সেটা করতে হবে দ্রুতটার সঙ্গে ।

আরও পড়ুন : করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক মোদির, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতিতে জোর

চার বছরের কম বয়সের শিশুদের অনলাইনে ক্লাস করানো হচ্ছে, এটা তাদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে ?

ভারত ছাড়া বিশ্বের আর কোনও দেশে কিণ্ডারগার্টেন বা প্রাক- প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের জন্য অনলাইনে ক্লাস করানো হয় না । শিশু মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ভাবে অনলাইন ক্লাস শিশুমনের বিকাশ এবং মানসিকতার দিক থেকে সুখকর নয় । বড়রা কীভাবে ছোটদের পড়াবেন, সে সম্পর্কে একটা ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে পারে । করোনার ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার পর শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সামগ্রিক বৃদ্ধি পরীক্ষা করে অনলাইনে ক্লাসের ব্যবস্থা করা উচিত । এই বয়সের শিশুদের জন্য ক্লাস করার কঠোর রুটিন পালন করার কোনও প্রয়োজন নেই । সামান্য প্রাথমিক শিক্ষার পরই তাদের অবাধে খেলাধুলোর জন্য ছেড়ে দেওয়া প্রয়োজন ।

করোনা জনিত কারণে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, সেই পরিবারগুলির শিশুরা যাতে শিক্ষার সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের কী পদক্ষেপ করা উচিত ?

এ জাতীয় সকল ছাত্রকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে । এমন কোটি কোটি শিশু রয়েছে, যারা কোনও সুবিধা পায়নি, যারা বুনিয়াদি শিক্ষার সামান্যতম সুযোগ থেকেও বঞ্চিত । সমীক্ষার পর প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোন স্তরে কতটা আর্থিক সহায়তা বাড়ানো দরকার সে সম্পর্কে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত । লকডাউনের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি স্কুলগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে । এখন এটা কেবল সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রশ্নের মধ্যে আটকে রাখার সময় নয় । কোন স্কুলে কত পড়ুয়া ছিল, সেটাই সবার আগে বিবেচ্য হওয়া উচিত । পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর, সরকারি সহায়তার ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে । এই মুহূর্তে আমরা একটি গভীর সঙ্কটের মধ্যে পড়েছি । আমাদের অবশ্যই এই সঙ্কট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করতে হবে । আমরা যদি স্কুলছুটদের ফিরিয়ে আনতে না পারি, তাহলে আগামী দিনে দেশে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হবে । এর বিশাল মূল্য দিতে হবে দেশকেই । বহু পিছনে চলে যাবে দেশের উন্নয়ন । আর এই সকল দিক বিবেচনা করে, বর্তমান সময়টাকে জাতীয় শিক্ষার অন্যতম জরুরি সময় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.