নভেল কোরোনাভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণের জন্য যে লকডাউন আমাদের দেশে চাপানো হয়েছিল, তাতে আমাদের বিশ্রাম নেওয়া এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া গেলেও তার পাশাপাশি অনেক চ্যালেঞ্জও ধেয়ে এসেছে । নবম শ্রেণির পড়ুয়া, 14 বছরের ‘স্বয়ম’ শর্মা লকডাউনের সময় যখন বাড়িতে ছিল তখন বেশিরভাগ সময় টিভি দেখে, ভিডিয়ো গেম খেলে, স্ন্যাকস খেয়ে এবং আগের থেকেও বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে কাটিয়েছিল । ফলে তার ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে শুরু করে । প্রাথমিকভাবে তার বাবা-মার কাছে গোটা ঘটনাটি স্বাভাবিক মনে হলেও, তাঁরা তখন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন, যখন দেখলেন, স্বয়ম অল্প কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে এবং ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি সে তার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে, যার ফলে তার মধে্য ধীরে ধীরে হলেও লক্ষণীয় উন্নতি দেখা গেছে।
ঠিক এই সময়েই স্বয়ম একা নয়, তনিশা (16), রাঘব (16), কয়াল (13) এবং কৌস্তভের (10) মতো আরও কিছু শিশুরও একই সমস্যা দেখা দেয় । শুধুমাত্র বড়দের মধে্য নয়, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে শিশুদের ওবেসিটি দেখা যায় এবং এ বিষয়ে আমরা পিডিয়াট্রিশিয়ান ডাঃ সোনালী নাভালে পূরান্দরের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি যা বলেছেন, তা হল—
ওবেসিটি সংক্রান্ত সমস্যা
সাধারণত, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং জীবনযাত্রার ফলে যে কোনও বয়সেই ওবেসিটির সমস্যা দেখা দেয় । কিন্তু কখনও কখনও জিনগত কারণে বা হরমোনের সমস্যা বা অন্য কোনও কারণেও তা হতে পারে। ডাঃ সোনালির ব্যাখ্যা, আজকের দিনে প্রতিটি রোগ আরও বেশি আতঙ্ক এবং ভয় সৃষ্টি করছে । শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বাড়লে ক্নান্তি, অনিদ্রা ও উদ্বেগ বাড়ে । তাছাড়াও স্থূল শিশুদের শ্বাসকষ্টও হয় । যদি সমস্যা বাড়ে তাহলে বড় বড় রোগ যেমন ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, হাইপারটেনশন এবং অনিদ্রাও হতে পারে।
ওবেসিটির কারণ
—যথাযথ শৃঙ্খলাবদ্ধ রুটিনের অভাব
—পড়াশোনার জন্য এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকা
—খিদে না পেলেও মানসিক চাপ ও বিরক্তি কাটাতে খাবার খাওয়া
—পুষ্টিকর খাবারের বদলে জাঙ্ক ফুড যেমন, তেল-মশলাযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার খাওয়া
ওবেসিটি প্রতিরোধ করব কীভাবে ?
শুধুমাত্র COVID 19-এর সময়ই নয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং ব্যায়াম করা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ । ডাঃ সোনালির ব্যাখ্যা, দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং দেহকে সুস্থ রাখতে সঠিক সময়ে সঠিক পথ্য গ্রহণ করা জরুরি । তাছাড়া কিছু কিছু নিয়ম মানলেও শিশুরা ওবেসিটি প্রতিরোধ করতে পারবে।
কীভাবে পথ্য পরিকল্পনা করা যাবে?
ওবেসিটির সমস্যায় যে সব শিশুরা আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে জরুরি হল, দিনে নির্দিষ্ট ব্যবধানে সুষম আহার গ্রহণ করা । যথাযথ ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করা উপকারী হবে । দিনে চারবার খাবার খেতে পারেন অথবা এই নিয়ে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
সুতরাং, শিশুদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের খাওয়াদাওয়ার অভ্যাসের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব দরকার। তাতে শুধু তাদের ওজনেই প্রভাব পড়ে না বরং শিশু ওবেসিটির জেরে আরও অনেক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার আগমন ঘটে, যা সাধারণত 40 বছর বয়সের পরই বেশি দেখা দেয়।