প্রতি বছর 26 সেপ্টেম্বর পালিত হয় গর্ভ নিরোধ দিবস হিসেবে । এর উদ্দেশ্য হল গর্ব নিরোধের পদ্ধতি নিয়ে সচেতনতা ছড়ানো এবং মানুষ যাতে যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যের পছন্দ বেছে নিতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করা । এটা মানুষকে প্রয়োজনীয় পরিবার পরিকল্পনা সঠিক ভাবে করতে পারে । মহিলাদের যে কোনও ধরনের অপরিকল্পিত অথবা অযাচিত গর্ভধারণকে আটকাতে পারে । বিশেষ করে একেবারে তরুণ বয়সে ।
যৌন মিলন হল সমস্ত জীবিত প্রাণীদের মধ্যে সাধারণ প্রক্রিয়া । যার ফলে এই পৃথিবীতে জীবন চক্র স্বাভাবিক থাকে । যদিও মাঝে মাঝে এর একমাত্র উদ্দেশ্য হয় শুধুমাত্র যৌন চাহিদা পূরণ করা । সেই কারণেই গর্ভ নিরোধের ব্যবহার অযাচিত গর্ভধারণ আটকানোর জন্য প্রয়োজনীয় । গর্ভ নিরোধক ব্যবহার করে দুই বা তার বেশি গর্ভধারণের মধ্যে ব্যবধান রাখা যেতে পারে । এর ফলে যুগলের যৌন জীবনেও কোনও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার সমস্যাকেও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে । যা ভারত-সহ একাধিক দেশের সমস্যা । জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একাধিক পদ্ধতি রয়েছে । ওষুধ আছে । যন্ত্র রয়েছে । যৌন অভ্যাস এবং অস্ত্রোপচারও এটাকে আটকাতে পারে ।
এগুলি কীভাবে কাজ করে ?
UK এর জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ( NHS ) অনুযায়ী, যদি কোনও পুরুষের শুক্রাণু যখন কোনও মহিলার ডিম্বানুতে পৌঁছয়, তখন তিনি গর্ভধারণ করেন । গর্ভ নিরোধক এটা আটকাতেই সাহায্য করে নিম্নলিখিত উপায়ে :
- ডিম্বানু ও শুক্রাণুকে আলাদা করে রাখে ।
- ডিম্বানু তৈরি আটকে দিয়ে ।
- গর্ভে শুক্রাণু ও ডিম্বানু ( নিষিক্ত ডিম্বানু ) এর মিলন আটকে দেয় ।
পদ্ধতিটি ঠিক কী ?
সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন ( CDC ) এর পরামর্শ অনুযায়ী নিচে কতগুলি পদ্ধতি দেওয়া হল, যার মাধ্যমে গর্ভধারণ আটকানো যায় :
জন্ম নিয়ন্ত্রণের বিপরীত পদ্ধতি
জরায়ুস্থ গর্ভনিরোধ
1. লেভোনোরজেস্ট্রাল ইন্ট্রাইউটারিন সিস্টেম ( LNG IUD) – LNG IUD হল ইংরেজি হরফের T এর মতো দেখতে একটি যন্ত্র । অনেকটা কপার T IUD এর মতো । এটা কোনও একজন চিকিৎসকের দ্বারা জরায়ুর মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয় । এটা সামান্য পরিমাণে প্রোজেস্টিন নিঃসরণ করে, যাতে মহিলারা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে না পড়েন ।
2. কপার T ইন্ট্রাইউটারিন সিস্টেম ( IUD) - IUD হল ইংরেজি হরফের T এর মতো দেখতে একটি যন্ত্র । এটা কোনও একজন চিকিৎসকের দ্বারা জরায়ুর মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয় । যাতে গর্ভধারণ আটকানো যায় ।
হরমোন সংক্রান্ত পদ্ধতি
1. ইমপ্ল্যান্ট – ইমপ্ল্যান্ট সরু একটি রড । যা কোনও মহিলার বাহুর উপরের দিকে ত্বকের নিচে বসিয়ে দেওয়া হয় । এই রড থেকে টানা তিন বছর প্রোজেস্টিন নিঃসরণ হয় ।
2. ইনজেকশন অথবা শট – মহিলারা তাঁদের চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রোজেস্টিন হরমোনের এই ইনজেকশন বা শট নিতে পারেন ।
3. গর্ভ নিরোধক ওষুধ সেবন করা – এটাকে পিলও বলা হয় । এটা ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টিন হরমোনের দ্বারা তৈরি হয় । এটা চিকিৎসক খাওয়ার পরামর্শ দেয় । একটি ওষুধ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত ।
4. প্রোজেস্টিন সমৃদ্ধ ওষুধ – ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টিন, এই দুই ধরনের হরমোন সমৃদ্ধ ওষুধ ছাড়াও শুধু প্রোজিস্টন হরমোন আছে এমন ওষুধ (এটাকে অনেক সময় মিনি পিলও বলা হয়) ও খাওয়া যেতে পারে ।
5. প্যাচ – তলপেট, নিতম্ব বা শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ( কিন্তু স্তনের উপর ব্যবহার করা যাবে না ) এর ত্বকে ব্যবহারের এই প্যাচ লাগানো যেতে পারে । এই পদ্ধতিও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত । এটা থেকে প্রোজেস্টিন ও ইস্ট্রোজেন নিঃসৃত হ.য়ে রক্তে মিশে যায় ।
6. হরমোনাল ভ্যাজাইনাল কনট্রাসেপ্টিভ রিং – ওই রিং থেকে প্রোজেস্টিন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হয় । ওই রিংকে যোনীর ভিতরে স্থাপন করা যেতে পারে ।
অন্তরায় ব্যবস্থা
1. ডায়াফ্রাম বা জরায়ু ক্যাপ – শুক্রাণুকে আটকাতে এই অন্তরায় পদ্ধতির প্রতিটি যোনীর ভিতরে কার্ভিক্সে আটকে দেওয়া হয় । এটাকে অনেকটা চেটাল কাপের মতো দেখতে ।
2. স্পঞ্জ – গর্ভনিরোধক স্পঞ্জে স্পার্মিসাইডের উপাদান থাকে । কার্ভিক্সের যেখানে এটা ঠিকঠাক বসে, যোনীর ভিতরে সেখানেই এটাকে বসাতে হবে । স্পঞ্জকে অন্তত ২৪ ঘণ্টা রাখতে হয় । আর যৌন মিলনের পর অন্তত ৬ ঘণ্টা এটাকে রেখে দিতে হয় । তার পর বের করতে হয় ।
3. মহিলাদের কনডোম – এটা একজন মহিলাকে পরতে হয় । এটা শুক্রাণুকে তার শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় ।
4. স্পার্মিসাইডস – এই জিনিসটি শুক্রাণুকে মারতে সাহায্য করে । আর এটা একাধিক আকারে পাওয়া যায় । সেগুলি হল – ফোম, জেল, ক্রিম, ফিল্ম, সোপজিটার ও ট্যাবলেট । এটাকে যোনীর ভিতরে মিলনের একঘণ্টা আগে দিয়ে দিতে হবে ।
আপৎকালীন গর্ভ নিরোধক
- কপার IUD – অসুরক্ষিত যৌন মিলনের পাঁচদিনের মধ্যে কোনও মহিলা কপার IUD ব্যবহার করতে পারেন ।
- আপৎকালীন গর্ভনিরোধক ওষুধ – মহিলারা অসুরক্ষিত যৌন মিলনের পাঁচদিনের মধ্যে আপৎকালীন গর্ভনিরোধক ওষুধ খেতে পারেন । তবে যত তাড়াতাড়ি ওই ওষুধ খাওয়া যাবে, তত তাড়াতাড়ি এটা কাজ করবে ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি
- মহিলাদের নির্বীজকরণ – টিউবের লাইগেশন বা ‘টিউবগুলিকে বেঁধে দেওয়া' ।
- পুরুষদের নির্বীজকরণ – ভ্যাসেকটোমি ।
এই ব্যবস্থা রয়েছে । কিন্তু এর মধ্যে যে কোনও একটি বিকল্পকে ব্যবহার করতে গেলে তার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত । একজন বিশেষজ্ঞই স্বাস্থ্য সম্মত ও সুখী যৌন জীবনের জন্য সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন । এছাড়া এই কঠিন সময়েও বিভিন্ন চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ মানুষকে গর্ভ নিরোধকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, যাতে উপযুক্ত পরিবার পরিকল্পনাকে অবেহলা করা না হয় ।