মস্কো, 26 নভেম্বর: আরও একটি শীতের মরশুম চলে এল ৷ প্রায় দেড় বছরের উপর ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে রয়েছে রুশ সেনাবাহিনী ৷ সেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পরিবারের সঙ্গে ফোনে বার্তালাপ গোপন রেকর্ডিং সম্প্রতি হাতে এসেছে সংবাদসংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের ৷ তারা জানিয়েছে, সেই রেকর্ডিং থেকে স্পষ্ট, রুশ সেনার অধিকাংশই এবার ঘরের ফেরার জন্য ছটফট করছেন ৷ প্রিয়জনদের সঙ্গে কথায় সেই ইচ্ছেই ব্যক্ত করছেন জওয়ানরা ৷ জানাচ্ছেন, আর তাঁরা বারুদের স্তূপ এবং মৃতদেহের মাঝে থাকতে চান না ৷ এ যেন এক অন্য রাশিয়া ৷
সেই গোপন আলাপচারিতায় শোনা গিয়েছে, প্রায় 200 জন রুশ সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে ৷ তিনশোর বেশি আহত ৷ শতাধিক সৈন্য যুদ্ধ করতে অস্বীকার করছেন ৷ যা স্পষ্ট করছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাত কোনদিকে এগোচ্ছে ৷ ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার সৈন্যরা সাধারণ জীবনে ফিরে আসতে চাইছে ৷ তারা বাধ্য হয়েছিল যুদ্ধ করতে ৷ সংবাদসংস্থা এপি-র দাবি অনুযায়ী, তারা এমনই কয়েকটি ফোনালাপকে চিহ্নিত করেছে ৷ যেখানে পরিবার ও প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন রুশ সৈন্যরা ৷ যাঁদের অধিকাংশ এই মুহূর্তে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন ৷
তেমনি একজন হলেন 'প্রফেসর' ৷ তাঁর এলোমেলো চুলের কারণে, সহকর্মীদের কাছে প্রফেসর নামে পরিচিত এই জওয়ান ৷ তিনি 2022 সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু দিকে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধে সামিল হন ৷ তাঁর মাথায় এই চিন্তা ছিল যে, তিনি হয়তো এই যুদ্ধে নিরীহ বাচ্চাদের মেরে ফেলবেন ৷ এই মুহূর্তে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে রয়েছেন ৷ আর মাঝে মধ্যেই ভয়াবহ মৃত্যুর স্মৃতি তাঁর চোখের সামনে ফুটে ওঠে, যা তাঁকে প্রতি পদে আতঙ্কিত করে তুলছে ৷ গত জুন মাসে এপি-র প্রতিনিধিকে ওই জওয়ান জানিয়েছিলেন, উলটোদিকে আমাদের মতোই যুবকরা রয়েছেন ৷ আর তাঁদের সামনেও গোটা জীবনটা পড়ে রয়েছে ৷ কিন্তু, আমরা যেমন পরিস্থিতি ভোগ করছি, তাঁরাও একইভাবে হাড়, মাংস ও বারুদের স্তূপে দিন কাটাচ্ছে ৷
রুশবাহিনীর সদস্য আর্টিওম ৷ তিনি গত 8 মাস ধরে রাশিয়ায় পরিবার ছেড়ে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে পড়ে আছেন ৷ তাঁর কাছে এই যুদ্ধ অর্থহীন ৷ যুদ্ধের থেকে নিজের পরিবারকে যে তিনি বেশি ভালোবাসেন ৷ আর এখন তাঁদের প্রতি সেই ভালোবাসা আরও বেড়ে গিয়েছে ৷ তাঁর আক্ষেপ পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাননি আগে ৷ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে স্ত্রীকে টেলিফোন করেছিলেন আর্টিওম ৷ সেখানকার পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে আর্টিওম বলেছিলেন, ‘‘সবাই এখানে নরকের মতো বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন ৷ যদি, সুযোগ আসে তাহলে সবাই পালিয়ে যেতাম ৷’’
আরও পড়ুন: