খান ইউনিস, 31 অক্টোবর: গাজা উপত্যকায় আক্রমণের তীব্রতা সোমবার আরও বৃদ্ধি করেছে ইজরায়েল ৷ গাজার আরও গভীরে প্রবেশ করেছে ইজরায়েলের স্থলসেনা ও ট্যাংক৷ পাশাপাশি চলছে আকাশপথে হামলাও ৷ সোমবার বিমানহানা হয়েছে একটি হাসপাতালের পাশে ৷ সেখানে আহতদের চিকিৎসা তো চলছেই৷ একই সঙ্গে সেখানে অনেকে আশ্রয়ও নিয়েছেন ৷
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির সব সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ৷ তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি আসলে হামাসের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে ৷ গত 50 বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছে ইজরায়েলে ৷ তাই ইজরায়েলের সেনা কোনোভাবেই পিছু হটবে না ৷
গত 7 অক্টোবর দক্ষিণ ইজরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস জঙ্গিরা ৷ সেই হামলায় অন্তত 1400 জন নিহত হন ৷ প্রায় 240 জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় হামাস ও অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি ৷ অপহৃতদের মধ্যে চারজনকে ইতিমধ্যে ছেড়েছে তারা ৷ এখনও বন্দি রয়েছেন অনেকে ৷ এই অবস্থায় ইজরায়েলের সেনার তরফে জানানো হয়েছে যে অপহৃত এক মহিলা সৈনিককে উদ্ধার করা হয়েছে ৷ তিনি পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন ৷ তাঁকে স্বাগত জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রীও ৷
কিন্তু এখনও অনেকে বন্দি রয়েছেন ৷ বন্দিদের মধ্যে পুরুষ, মহিলা ও শিশুরা রয়েছে ৷ বন্দিদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে চাপ বাড়ছে নেতানিয়াহু সরকারের উপর ৷ সেই লক্ষ্যে ইজরায়েলি সেনা কাজ করলেও, কোনোভাবে হামাসকে নিকেশ করার পরিকল্পনা থেকে তারা সরতে নারাজ ৷
অন্যদিকে হামাসের দাবি, তারা সবাইকে ছেড়ে দেবে ৷ কিন্তু তার বদলে ইজরায়েলে যে ফিলিস্তিনিরা বন্দিরা রয়েছে, তাদেরও ছেড়ে দিতে হবে ৷ যাদের বিরুদ্ধে ইজরায়েলে হামলার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, সেই ব্যক্তিদের ছাড়তে হবে ৷ কিন্তু ইজরায়েল হামাসের সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে ৷ বরং নেতানিয়াহুর দাবি, স্থল অভিযানের ফলে হামাস ক্রমশ চাপে পড়ছে ৷ এর জেরে তাঁর দেশের সেনা সহজেই বন্দিদের মুক্ত করে আনতে পারবে ৷
আরও পড়ুন: গাজায় মাটির নিচে বাংকারে হামলা ইজরায়েলের, লক্ষ্য লুকিয়ে থাকা হামাস জঙ্গি নেতারা
এদিকে হামাস সোমবার একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে ৷ সেই ভিডিয়োতে তিনজন মহিলা বন্দিকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে দেখা গিয়েছে ৷ সেখানে বন্দিরা তাঁদের মুক্ত করা নিয়ে ইজরায়েলের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন ৷ তবে এই ভিডিয়ো কবে রেকর্ড করা হয়েছে বা কী পরিস্থিতি ওই বন্দিরা এই কথা বলছেন, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট হয়নি ৷
এই পরিস্থিতিতেও গাজা শহরে ক্রমশ আক্রমণের চাপ বৃদ্ধি করছে ইজরায়েল ৷ সেখানে তাদের স্থল অভিযান তো চলছেই ৷ পাশাপাশি সীমান্তে অপেক্ষায় প্রায় 10 হাজার ইজরায়েলি সৈন্য ৷ গাজা শহরে বসবাসকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় 6 লক্ষ 50 হাজার ৷ অধিকাংশ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দক্ষিণ দিকে সরে গিয়েছে ৷ যদিও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নিরাপদ আশ্রয়স্থলগুলিতেও বিমানহানার অভিযোগ উঠেছে ৷
প্যালেস্তাইনের শরণার্থীদের জন্য রাষ্ট্রসংঘের ইউএনআরডাব্লুএ নামে একটি সংস্থা কাজ করে ৷ সেই সংস্থার দাবি, যুদ্ধের জেরে 6 লক্ষ 72 হাজার মানুষ গাজার বিভিন্ন স্কুল ও তাদের আশ্রয়স্থলে রয়েছে ৷ সেখানে যা লোক রাখা সম্ভব ৷ তার থেকেও চারগুন লোক সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৷ সোমবার গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে যে মৃতের সংখ্যা 8300 ছাড়িয়েছে ৷
আরও পড়ুন: 3200-এর বেশি শিশুর মৃত্যু, সময়ের আগেই গাজায় 2023-24 শিক্ষাবর্ষের সমাপ্তি