নয়াদিল্লি, 7 জানুয়ারি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপের ছবি নিয়ে উপহাসের জেরে এবার চাপে মলদ্বীপ ৷ যে সকল মন্ত্রী, নেতা ও সরকারি আধিকারিক ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় উপহাস করেছিলেন, এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মালে ৷ এই ইস্যুতে ভারতের বিদেশমন্ত্রক দ্বীপরাষ্ট্রের সরকারকে উল্লেখ করে কঠোর ভাষায় এর নিন্দা করে ৷ আর তারপরেই, মালের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যাঁরা নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় কটূক্তির সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই ৷ এমনকি যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷
মালদ্বীপের মন্ত্রী মরিয়ম শিউনা তাঁর সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর ভাষার প্রয়োগ করেছিলেন ৷ যা নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বিতর্ক শুরু হতেই, তিনি সেটি মুছে ফেলেন ৷ এমনকি মালে সিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র এবং মালদ্বীপ যুব ক্ষমতায়ন বিভাগের উপমন্ত্রী মোদিকে 'ধর্মান্ধ' বলে নিশানা করেন ৷ যা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় ৷ এরপরেই ভারতের তরফে 'বয়কট মালদ্বীপ' ট্রেন্ড চালু হয়ে যায় ৷ এমনকি লাক্ষাদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বুকিংও অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে ৷
এরই মধ্যে বিদেশমন্ত্রকের নির্দেশে সেখানকার ভারতীয় হাইকমিশন, প্রধানমন্ত্রীকে অপমানের বিষয়টি মালে প্রশাসনের কাছে তুলে ধরে এবং এর তীব্র নিন্দা করে ৷ ভারত যে মালে সরকারের মন্ত্রী এবং তাদের আধিকারিকদের আচরণে ক্ষুব্ধ তা বুঝিয়ে দেওয়া হয় ৷ যার পরেই নড়েচড়ে বসে সে দেশের সরকার ৷ তারা বিবৃতি জারি করে ৷ সেখানে বলা হয়েছে, "মালদ্বীপ সরকার বিদেশি নেতা এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অবমাননাকর মন্তব্য সম্পর্কে অবগত ৷ এই মতামতগুলি ব্যক্তিগত এবং মালদ্বীপ সরকার এই সব মতামতকে সমর্থন করে না... তাছাড়া, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, যাঁরা এই ধরনের অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন ৷ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না সরকার ৷"
এই ইস্যুতে, মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ মালদ্বীপের রাজনীতিকদের অবমাননাকর মন্তব্যের নিন্দা করেছেন ৷ সেইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ মুইজু সরকারকে এর বিতর্ক থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ৷ উল্লেখ্য, পর্যটন নির্ভর মালদ্বীপের একটা বড় বাজার হল ভারত ৷ এখান থেকে বছরে লক্ষাধিক পর্যটক সেদেশে ঘুরতে যান ৷ আর ভারতের চলচ্চিত্র জগতের তারকাদের কাছের বিদেশ ভ্রমণ বলতেই, সবার আগে মলদ্বীপের সৈকতকে মনে পড়ে ৷ এত বড় একটা বাজার হাতছাড়া হলে, সে দেশের অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে বইকি ৷ যা ইতিমধ্যে শুরুও হয়ে গিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, 2023 সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন মহম্মদ মুইজু ৷ তিনি নির্বাচনী প্রচারে 'প্রথম ভারত নীতি' বদলের কথা বলেছিলেন ৷ যার শুরুটা তিনি দ্বীপরাষ্ট্র থেকে 75 জন ভারতীয় সেনার ছাউনি সরিয়ে দিয়ে করবেন বলে জানিয়েছিলেন ৷ যার পরেই ভারতের সঙ্গে মলদ্বীপের সম্পর্কে তিক্ততা আসে ৷ কিন্তু, এবার তা আরও প্রবল হল, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সেদেশের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের অবমাননাকর মন্তব্য ৷
আর ভবিষ্যতে তা আরও খারাপের দিকে যাওয়ার রাস্তা প্রশস্ত হচ্ছে ৷ চিনের বিদেশমন্ত্রক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামিকাল অর্থাৎ সোমবার মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজু চিন সফরে যাচ্ছেন ৷ চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ৷ যেখানে উভয় দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সবুজের উন্নয়নে যৌথভাবে কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ৷ সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছেন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ৷ আর এই সফর চিনের পক্ষে ইতিবাচক হলে তা ভারতের পক্ষে কখনোই সুখকর হবে না ৷
আরও পড়ুন: