জেরুজালেম, 29 অক্টোবর: বাহিনী পাঠিয়ে গাজায় স্থল, আকাশ ও সমুদ্র পথে আক্রমণ আরও বাড়াল ইজরায়েল ৷ এভাবেই ইজরায়েলের সেনাবাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের সূচনা করল। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে স্থানীয় সময় শনিবার রাতে এমনটাই জানালেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ৷ তিনি বলেন, "গাজার বিস্তৃত অঞ্চলে স্থলাভিযানের আগে আক্রমণের ধার আরও বাড়বে। এই যুদ্ধ দীর্ঘ এবং কঠিন হবে ৷ তার জন্য আমরা প্রস্তুত ৷"
গাজায় ইজরায়েলের বোমাবর্ষণকে সেখানকার বাসিন্দারা যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বলে বর্ণনা করেছেন ৷ গাজার অধিকাংশ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে পড়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। সেখানে আটকে পড়েছেন প্রায় 2.3 মিলিয়ন মানুষ ৷ এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী যুদ্ধের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
বাহিনী শনিবার যুদ্ধের বেশকিছু ছবি সামনে এনেছে ৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে, গাজার ফাঁকা এলাকায় সীমান্তের কাছে ট্যাঙ্কগুলি ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে ৷ তারা দাবি করেছে, ইজরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলি হামাসের তৈরি কয়েক ডজন সুড়ঙ্গ এবং ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে বোমাবর্ষণ করেছে । তিন সপ্তাহ আগে ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছিল হামাস ৷ পালটা গাজায় ঢুকে সেখানকার শাসক গোষ্ঠী হামাসকে ধ্বংস করতে লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে ইজরায়েল ।
7 অক্টোবর হামাসের হামলার পর কয়েকশো প্যালেস্তাইনিকে আটক করে বন্দি বানিয়ে রেখেছে ইজরায়েল ৷ তাদের মুক্তির দাবি চাপ বাড়ানো হচ্ছে ইজরায়েল সরকারের উপর ৷ ওই সমস্ত বন্দিদের পরিবারের সদস্যরা শনিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করেন এবং ইজরায়েলে বন্দি প্যালেস্তাইনবাসীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ৷ তাঁরা হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলিদের বিনিময়ে এই প্যালেস্তাইনিদের মুক্তির দাবি জানান ।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণে আরও বলেছেন, "ইজরায়েল সমস্ত বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর ৷ আর এই কাজে আমাদের সাহায্য করবে স্থলাভিযান।" তিনি জানান, অভিযানের গোপনীয়তার রক্ষা করতে এই মিশন সম্পর্কে এর বেশি কিছু তিনি প্রকাশ করতে পারবেন না । তবে এটি যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় ৷ এর স্পষ্ট উদ্দেশ্য, হামাসের সামরিক ও সরকারি ক্ষমতাকে ধ্বংস করে বন্দিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা ।
আরও পড়ুন: ইজরায়েলি বিমানহানায় নিহত হামাসের এরিয়াল ইউনিটের প্রধান
উল্লেখ্য, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে শনিবার গাজায় প্যালেস্তাইনি মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 7 হাজার 700 ৷ হামাসের অধীনে থাকা গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া অনুসারে শুধু শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত 377 জনের মৃত্যু হয়েছে । নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই মহিলা ও নাবালক বলে মন্ত্রক জানিয়েছে ।
মন্ত্রকের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা সাংবাদিকদের বলেছেন, যোগাযোগ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে পড়েছে । বাসিন্দারা কোনও প্রয়োজনে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে পারছেন না ৷ তবে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত দলগুলির সদস্যরা আর্টিলারি ব্যারেজ এবং বিমান হামলার শব্দ অনুসরণ করে মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন। আনুমানিক 1 হাজার 700 জন ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়ে আছেন বলে মনে করেন আশরাফ ৷
(সংবাদ সংস্থা-এপি)
