দেইর আল বালাহ, 24 অক্টোবর: শিশুরা সততই দুরন্ত। দামাল বললেও খুব একটা বেশি বলা হয় না। তাদের ছটফটানি সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে থাকেন বাড়ির বড়রা। তবে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রভাবে এমনই হাজার হাজার 'ছটফটে' শিশুর জীবন সঙ্কটে। অন্যদের মতো এরাও ছটফট করছে। তবে আর পাঁচটা শিশুর মতো জীবনের আনন্দযজ্ঞে গা ভাসিয়ে দিতে নয়, বেঁচে থাকার জন্য। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরও গভীর। আরও বড়। তাদের বেঁচে থাকতে ভেন্টিলেটার প্রয়োজন। পর্যাপ্ত জ্বালানি ছাড়া ভেন্টিলেটর অচল। আর গাজায় জ্বালানির সংকট রোজই একটু একটু করে বাড়ছে। ঠিক সেই অনুপাতে সংকট ঘনাচ্ছে এই একরত্তিদের জীবনে।
মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের গ্লাস ইনকিউবেটরের ভিতরে থাকা একরত্তির ছটফটানির দৃশ্য প্রকাশ্যে এসেছে। ছোট্ট শরীরটার শিরায় শিরায় চ্যানেল। চিৎকার করছে যন্ত্রণায়। ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওষুধ দেওয়া হচ্ছে ক্যাথেটারে। তবে এই ব্যবস্থাও কতদিন চলবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সৌজন্যে তীব্র জ্বালানি সংকট। জেনারেটর চালু রাখতে প্রয়োজনীয় জ্বালানী না পাওয়া গেলে কী হবে তা ভাবলেই শিউড়ে উঠতে হয়! হাসপাতালের তরফে ইয়াদ আবু জাহার বলেন, "একবার জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেলে ওয়ার্ডে থাকা শিশুরা নিশ্বাস নিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের জীবন-রক্ষার বড় দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের।"
গাজার চিকিৎসকরা সকলেই কমবেশি আতঙ্কে। 6টি নবজাতক ইউনিটের কমপক্ষে 130টি শিশুর জীবনে গভীর সংকট তৈরি হয়েছে। ইজরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত 7 অক্টোবর ইজরায়েলের শহরগুলিতে হামাসের আক্রমণের পর জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করেছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দেশ। তারপর ক্রমশ অবনতি হয়েছে পরিস্থিতির।
আরও পড়ুন: গাজায় অব্যাহত ইজরায়েলি হামলা, মৃতের সংখ্যা সাড়ে 4 হাজার ছাড়িয়েছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে গাজার অন্তত 50 হাজার গর্ভবতী মহিলা অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা পাচ্ছেন না। আগামী মাসে প্রায় পাঁচ হাজার 500 গর্ভবতী সন্তান জন্ম দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। অবিরাম ইজরায়েলি হামলায় বিদ্যুৎ, জল ও অন্যান্য সরবরাহের অভাবের কারণে প্রায় 30টি হাসপাতালের মধ্যে অন্তত 7টি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের পরিস্থিতিও ভালো নয়। এমন অসম লড়াই লড়তে যে রশদ লাগে তা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। প্যালেস্তাইনের উদ্বাস্তুদের জন্য রাষ্ট্রসংঘ সংস্থা অবশ্য রবিবার জানিয়েছে, গুরুতর কোনও প্রয়োজন মেটাতে তিন দিনের জন্য যথেষ্ট জ্বালানি রয়েছে। তারপর কী হবে তা জানা নেই কারও।
আরও পড়ুন: গাজায় হত আরও 50! পাঁচ হাসপাতালে বন্ধ চিকিৎসা পরিষেবা
শনিবার গাজায় 20টি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছিল। তারপরও জ্বালানির সমস্যায় বিরাট একটা পরিবর্তন হয়নি। জ্বালানি এখন যেটুকু মিলছে তা হাসপাতালের জেনারেটরেই পাঠানো হচ্ছে। সম্প্রতি গাজা-সীমান্তের পাশে একটি ডিপো থেকে সাতটি ট্যাঙ্কার করে জ্বালানি নিয়ে যাওযা হয়েছিল। তবে এর মধ্যে আদৌ কোনও ট্যাঙ্ক হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত ছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়।
সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যা তাতে জ্বালানি শেষ পর্যন্ত ফুরিয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা। হু-এর মুখপাত্র তারিক জাসারেভিক বলেন, "গাজার পাঁচটি প্রধান হাসপাতালে প্রাথমিক পরিষেবা সরবরাহ করতে 150 হাজার লিটার বা 40 হাজার গ্যালন জ্বালানী প্রয়োজন।" এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কোথা থেকে মিলবে তা জানা নেই কারও। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই শিশুদের কী হবে সেই প্রশ্ন সহজ নয়, অজনা উত্তরও।