নয়াদিল্লি, 13 ডিসেম্বর: বিদেশে গিয়ে মেয়ের প্রাণভিক্ষা চাইবেন মা। ইয়েমেনে যেতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন কেরলের প্রেমা কুমারী ৷ তাঁর মেয়ের নাম নিমিশা প্রিয়া ৷ পেশায় নার্স নিমিশাকে, তালাল আবদো মাধি নামে এক ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে ইয়েমেনের একটি আদালত ৷ এখন একটাই উপায়ে মেয়েকে বাঁচাতে পারেন নিমিশার মা প্রেমা কুমারী ৷ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে মেয়ের সাজা মকুবের আবেদন জানাবেন ৷ আর তাতে রাজি হয়ে পরিবারটি মত দিলেই ছাড়া পেতে পারেন নিমিশা ৷
তবে ভারত সরকারের বিদেশনীতি অনুযায়ী ইয়েমেনে যাতায়াতের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন ৷ আর এই অনুমতি চাইতেই আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন নিমিশার মা প্রেমা ৷ মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রহ্মণিয়াম প্রসাদ কেন্দ্রকে এই অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ৷ 2017 সাল থেকে ইয়েমেনে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করেছে ভারত সরকার ৷ এই ক্ষেত্রে সেই নিয়ন্ত্রণ শিথিল করুক ভারত। এমনই নির্দেশে দিয়েছে আদালত ৷
প্রেমা কুমারী তাঁর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে আদালতে একটি হলফনামা পেশ করেছেন ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি এবং আরও 3 জন ইয়েমেনে যাবেন ৷ সেখানে তাঁরা সবাই তালাল আবদো মাধির পরিবারের সদস্যদের কথা বলবেন ৷ নিমিশা এই খুনের জন্য দায়ী নয় বা এই হত্যাকাণ্ডে তাঁর কোনও হাত নেই ৷ এই বিষয়টি নিহতের পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন প্রেমা কুমারী ও অন্যরা ৷ এর জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হলে তাও দিতে রাজি প্রেমা কুমারী ৷ এমনকী তিনি ওই মৃতের পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, নিমিশা কোনও আইনজীবী পাননি ৷ তাই আদালতে এটা প্রমাণ করা যায়নি যে তিনি তালাল আবদো মাধিকে খুন করেননি ৷
নিমিশা প্রিয়াকে ছাড়িয়ে আনার এই কাজ তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে এবং ঝুঁকিতে করবেন ৷ হলফনামায় প্রেমা কুমারী স্পষ্ট জানিয়েছেন, এর জন্য কেরল সরকার বা ভারত সরকারের কোনও দায়বদ্ধতা নেই ৷ এর আগে 13 নভেম্বর ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্ট নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড খারিজের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ আর তাই নিহত তালাল আবদো মাধির পরিবার নিমিশাকে ক্ষমা না করে দিলে নিমিশা মুক্তি পাবেন না ৷
ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে প্রেমা কুমারী বলেন, "মেয়ে এই অবস্থায় থাকায় মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ৷ গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে আমি মেয়ের কথা ভেবে চলেছি ৷ ও আমায় বলেছে, ও কাউকে খুন করেনি ৷ ওর কথা আমি বিশ্বাস করি, ও কাউকে খুন করতে পারে না ৷ ট্রায়াল কোর্টে যখন এই মামলাটি চলছিল, তখন আমার মেয়ে কোনও আইনজীবী জোগাড় করতে পারেনি ৷ তাই সে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ৷"
প্রেমা কুমারী ইয়েমেন সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ ৷ কারণ, তারা নিমিশাকে গত পাঁচ বছর ধরে বেঁচে থাকার সুযোগটুকু দিয়েছে ৷ প্রেমা কুমারী আরও জানান, শেষবার যখন নিমিশার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল তখন সে অত্যন্ত সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল ৷ প্রেমার কথায়, "যদি নিমিশার মৃত্যুও হয়, তাও বিশ্ব এটা জানবে যে সে নিরপরাধ ছিল ৷ আমার নাতনি (নিমিশার মেয়ে) 27 ডিসেম্বর 11 বছরে পা দেবে ৷ অন্তত এই সন্তানের জন্য আমার মেয়েকে ছেড়ে দেওয়া হোক ৷"
সূত্রের খবর, নার্সের কাজে কেরল থেকে ইয়েমেনে গিয়েছিলেন নিমিশা প্রিয়া ৷ এরপর সেখানে তালাল আবদো মাধি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ হয় ৷ তবে এই ব্যক্তি নিমিশার উপর অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ ৷ সে নিমিশাকে ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করার চেষ্টা করে ৷ তাঁর কাছ থেকে পাসপোর্ট হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ ৷ এই ব্যক্তিকে খুনের অভিযোগেই নিমিশাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে ইয়েমেনের আদালত ৷
আরও পড়ুন: