জেরুজালেম, 15 অক্টোবর: ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ৷ আর এর মধ্যেই, মিশর ও গাজার মধ্যে রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট রবিবার সকালে বন্ধ করে দেওয়া হয় ৷ কারণ হিসাবে দুই মিশরীয় উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার অনুমতির পাশাপাশি আমেরিকান-সহ অন্যান্য বিদেশী এবং আহত প্যালেস্তাইনিদের মিশরে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিষয়ে ইজরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং প্যালেস্তাইনের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে ৷
ইসরায়েল-প্যালেস্তাইন যুদ্ধের নবম তম দিনে গাজার পরিস্থিতি চূড়ান্ত অবনতি হয়েছে ৷ ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, প্রায় দুই হাজার 329 জন প্যালেস্তাইনে নিহত হয়েছে ৷ যা 2014 সালের গাজা যুদ্ধের চেয়েও বেশি ৷ সেই সময় অবশ্য ছয় সপ্তাহ ধরে চলেছিল যুদ্ধ। চলতি যুদ্ধ উভয় পক্ষের জন্য পাঁচটি গাজা যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এক হাজার 300 জনেরও বেশি ইজরায়েলি ইতিমধ্য়েই নিহত হয়েছে ৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগ সাধারণ নাগরিক হামাসের 7 অক্টোবরের হামলায় নিহত হয়েছে। মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে 1973 সালের যুদ্ধের পর এটি ইজরায়েলের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ বলেও বর্ণনা করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ইজরায়েল বাহিনী গাজাবাসীদের জন্য তিন ঘন্টায় সব সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেছে ৷ ইজরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার নাগরিকদের উত্তর গাজা থেকে সরে যেতে তিন ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ৷ তারা জানিয়েছে, এই অঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় 1.1 মিলিয়ন মানুষ সকাল 10টা থেকে দুপুর 1টা পর্যন্ত স্থানান্তর করতে পারবে ৷ আইডিএফ জানিয়েছে, ওই এলাকায় সেই সময় কোনও সামরিক তৎপরতা চলবে না।
তুরস্ক এবং জর্ডন থেকে চালান-সহ মানবিক সাহায্যের কনভয়গুলি গাজায় ডেলিভারির জন্য ক্রসিং পয়েন্টের কাছে অপেক্ষারত রয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, ব্লিঙ্কেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গেও দেখা করেছেন ৷ মার্কিন বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন রিয়াদে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মহম্মদ বিন সলমনের সঙ্গে দেখা করেছেন ৷ সেক্ষেত্রে ব্লিঙ্কেনের দাবি, বাইডেন প্রশাসন ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধকে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হতে দিতে চায় না ৷ আর সে কারণেই আমেরিকা এক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্লিঙ্কেন এবং ক্রাউন প্রিন্স রবিবার রাজধানীর বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত বাংলোয় এক ঘন্টার কম সময় ধরে বৈঠক করেছেন। বৈঠক কেমন হয়েছে জানতে চাইলে, ব্লিঙ্কেনের উত্তর ছিল এককথায়, 'খুব ফলপ্রসূ'৷ তবে তাৎক্ষণিকভাবে অন্য কোনও বিস্তারিত বিবরণ দিতে তিনি চাননি ৷ অন্যদিকে, বৈঠকটি আদতে শনিবার গভীর রাতে হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি ৷ ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী সতর্ক করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর এই আলোচনা হয় ৷ গাজা উপত্যকায় হামাসের অবস্থানে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু হবে বলেও ঠিক হয়েছে বলে খবর ৷ বৈঠকের পর স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সেক্রেটারি বৈঠকে হামাসের সন্ত্রাসী হামলা বন্ধ করা, সমস্ত পনবন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করা এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অটল মনোভাব তুলে ধরেছেন। দুই দেশেরই সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরেও স্থিতিশীলতা এগিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের যৌথ অঙ্গীকারও নিশ্চিত করেছেন।
প্রিন্স মহম্মদ হলেন ষষ্ঠ আরব নেতা যিনি ব্লিঙ্কেন মধ্যপ্রাচ্যে আসার পর থেকে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন ৷ একই সঙ্গে, ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানো, সমর্থন করার জন্য বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করার জন্যওবলেছেন তিনি ৷ ইজরায়েল থেকে ব্লিঙ্কেন জর্ডন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং সৌদি আরবের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানা গিয়েছে ৷ রবিবার পরে তিনি মিশর সফরের পরিকল্পনা করছেন।