হায়দরাবাদ, 24 অক্টোবর: হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন আক্রমণের প্রস্তুতির ঘোষণা করেছে ইজরায়েলি সামরিক বাহিনী ৷ এই নিয়ে তাদের সতর্ক করেছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৷ তাঁর কথায়, সাধারণ মানুষের কথা অবহেলা করলে চলবে না ৷ তা হলে শেষ পর্যন্ত ইজরায়েলের সামরিক কৌশলের বিরূপ পরিণতি হতে পারে ।
ওবামার সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এল, যখন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে যে দুই সপ্তাহের বিমান হামলায় গাজায় মৃতের সংখ্যা 5 হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ তাছাড়া সোমবারও গাজায় শত শত লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে ইজরায়েলের তরফে ৷ হামাসের সঙ্গে তাদের লড়াইয়ে গাজা স্ট্রিপে এখনও অনেক সাধারণ মানুষ আটকে পড়ে রয়েছে ৷
সোশ্যাল মিডিয়ায় করা একটি পোস্টে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, "হামাস ইজরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের ভয়ঙ্কর আক্রমণ শুরু করার 17 দিন হয়ে গিয়েছে ৷ অরক্ষিত মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ-সহ 1400 ইজরায়েলি নাগরিককে হত্যা করেছে । এই ধরনের অকথ্য নৃশংসতার পরে, মার্কিন সরকার এবং আমেরিকান জনগণ সেই সব পরিবারের দুঃখে অংশীদার হয়েছে ৷ প্রিয়জনদের ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করেছে এবং ইজরায়েলি জনগণের সঙ্গে যথাযথভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে ।"
এর পর তাঁর সংযোজন, “যেমন আমি একটি আগের পোস্টে বলেছি, ইজরায়েলের অধিকার আছে তার নাগরিকদের এই ধরনের নিলর্জ্জ হিংসার বিরুদ্ধে রক্ষা করার ৷ আর আমি হামাসের সামরিক সক্ষমতা ভেঙে ফেলাতে এবং শত শত পণবন্দিকে উদ্ধার করার জন্য আমাদের দীর্ঘদিনের মিত্রকে (ইজরায়েল) সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি ৷”
ওই পোস্টে বারাক ওবামা এর পর লেখেন, “তবে আমরা ইজরায়েলকে সমর্থন করলেও আমাদের এটাও পরিষ্কার হওয়া উচিত যে ইজরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইকে কীভাবে বিচার করে । বিশেষ করে, এটি গুরুত্বপূর্ণ যেমন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বারবার জোর দিয়েছেন যে ইজরায়েলের সামরিক কৌশল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে, সেই আইন সাধারণ জনগণের মৃত্যু বা দুর্ভোগ যতটা সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করার কথা বলে ।’’
তিনি আরও লেখেন, ‘‘এই মূল্যবোধগুলিকে বজায় রাখা তার (ইজরায়েল) নিজের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ৷ কারণ, এটি নৈতিকভাবে ন্যায়সঙ্গত এবং প্রতিটি মানুষের জীবনের অন্তর্নিহিত মূল্যের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে । জোট গঠন ও আন্তর্জাতিক মতামত গঠনের জন্য এই মূল্যবোধগুলিকে বজায় রাখাও অত্যাবশ্যক ৷ এই সবই ইজরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷"
বিদেশনীতি নিয়ে সংকটের বিষয়ে সচরাচর মন্তব্য করেন না প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ৷ তাই তাঁর ‘বিরল বিবৃতি’-তে তিনি ইজরায়েলকে হামাসের উপর পালটা আক্রমণের সময় অত্যধিক সাধারণ নাগরিকের হতাহতের ঘটনা এড়িয়ে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন । তিনি ফিলিস্তিনিদের প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন না করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন ।
ওবামার কথায়, “এটি একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ । যুদ্ধ সবসময়ই দুঃখজনক, এবং এমনকি সবচেয়ে সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত সামরিক অভিযান প্রায়ই সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে । প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন তাঁর সাম্প্রতিক ইজরায়েল সফরের সময় উল্লেখ করেছেন, যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার সময় আমেরিকা নিজেই মাঝে মাঝে আমাদের উচ্চ মূল্যবোধ থেকে ছিটকে পড়েছে ৷ 9/11-এর পরে আল কায়েদার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমরা যেসব পদক্ষেপ করেছি, সেই সময় মার্কিন সরকার আমাদের মিত্রদেরও পরামর্শ মানতে আগ্রহী ছিল না ।’’
সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই তিনি ইজরায়েলকে সতর্ক হতে বলেছেন ৷ কারণ, গাজায় সাধারণ নাগরিকদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে হামাস জঙ্গিরা ৷ তাই তাদের উপর আক্রমণ করতে গেলে তার আঁচ লাগবে সাধারণ মানুষের উপরও ৷ তা ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে বলেও ওবামা জানিয়েছেন ৷ গাজায় জল, বিদ্যুৎ, খাবার সরবারহ বন্ধ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন ৷ ওবামার বক্তব্য, এর ফলে সেখানকার মানুষ চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উদ্যোগে ইজরায়েল যে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন বারাক ওবামা ৷ পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি প্যালেস্তাইন-সহ সবপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন ৷ তাঁর মতে, প্যালেস্তাইনের যে নেতারা দুই দেশ গঠনের তত্ত্বে বিশ্বাস করেন, তাদের তরফে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্য়োগ সেভাবে চোখে পড়েনি ৷
আরও পড়ুন: পড়ে থাকা লাশকেও গুলি হামাসের, ইজরায়েলে জঙ্গি হামলার স্বীকারোক্তির হাড়হিম ভিডিয়ো