ETV Bharat / international

Rohingya Refugees Crisis: 'ঝড়ে, ঢেউয়ে নৌকা ডুবে যাচ্ছে', রোহিঙ্গাদের কান্না শুনেও শোনে না দুনিয়া

নৌকায় ঢেউ আছড়ে পড়ছে ৷ তাণ্ডব চলছে ৷ নৌকাটা অর্ধেক ভাসছে ৷ ইন্দোনেশিয়ায় স্বামীকে শেষবার ফোন করেছিলেন স্ত্রী সেতেরা বেগম ৷ তার আর পর নেই ৷ বাংলাদেশের ক্যাম্পে অত্যাচারে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ৷ তাই ফের সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া ৷ রোহিঙ্গারা ঘরে ফেরে নাই ৷

ETV Bharat
রোহিঙ্গা সমস্যা
author img

By

Published : Jun 6, 2023, 12:56 PM IST

টেকনাফ (বাংলাদেশ), 6 জুন: সমুদ্রের এমন ঢেউ তারা কেউ কখনও দেখেনি, ভাবেনি ৷ চারদিকে শুধু জল ৷ তার উচ্চতা মানুষ সমান ৷ ঝড় উঠেছে ৷ সেতেরা বেগম চিৎকার করে উঠলেন, "আমাদের নৌকাটা ডুবে যাচ্ছে !" 180 জন যাত্রী বোঝাই নৌকাটা তখন বাংলাদেশের দক্ষিণে অন্ধকারে ৷ শুধু অর্ধেকটা ভাসছে ৷ 2022 সালের 7 ডিসেম্বর রাত 11টা নাগাদ শেষ ফোনে জানিয়েছিলেন সেতারা বেগম ৷

ওই নৌকার সব যাত্রীই রোহিঙ্গা ৷ নৌকাটি তৈরি করেছিলেন জামাল হুসেন ৷ তিনি ক্যাপটেন ৷ একসময় মায়ানমারে তাঁর নিজের ধান জমি ছিল৷ চাষ হত৷ গ্রামের তরুণ নেতা ছিলেন জামাল ৷ এসব 2017 সালের আগের কথা ৷ রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৷ এখানে অস্থায়ী ক্যাম্পই তাদের ঠিকানা ৷ এভাবে জীবন কাটে কী করে ? বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হিংসার ঘটনা বেড়ে চলেছে ৷

তাই ফের সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবে জামাল হুসেন ৷ নৌকা তৈরি করে তার ছবি ছড়িয়ে দেয় মোবাইলে মোবাইলে ৷ যদি কেউ যেতে চায় ৷ তিনি ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যাবেন যাত্রীদের ৷ সেখানে জীবন একটু অন্যরকম, একটু স্বস্তির ৷ নৌকা বড়ো, অনেক জায়গা আছে আর খাবারদাবারও নেওয়া যাবে ৷ সবার দায়িত্ব তাঁর ৷ জামাল একজন সুদক্ষ নাবিক ৷ সমুদ্রের গতিবিধি তাঁর চেনা ৷ তিনি ঠিক ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছে দেবেন ৷

Bangladesh Rohingya Camp
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনের সঙ্গে কথা

আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে ধৃত 6

সেতেরা বেগম 11 বছর তাঁর স্বামীকে দেখেননি ৷ স্বামী রশিদ ইন্দোনেশিয়ায় থাকেন ৷ জামালের নৌকার ছবি দেখলেন সেতেরা বেগম ৷ জামালের উপর ভরসা করে দুই মেয়েকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় স্বামীর কাছে যাবেন বলে ঠিক করলেন ৷ সেতেরা বেগমের বাবা কিন্তু ভয় পেলেন ৷ মেয়েকে বোঝালেন, সমুদ্রে ওই নৌকায় ইন্দোনেশিয়া পৌঁছনো সহজ কথা নয় ৷ প্রতিপদে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে ৷

স্বামীকে ছেড়ে আর কতদিন কাটাবেন সেতেরা ? মন মানল না বাবার কথা শুনলেন না তিনি ৷ জামালের নৌকায় উঠলেন সেতেরা ও তাঁর দুই মেয়ে ৷ একজনের বয়স 15 এবং আরেকজনের 18 ৷ সমুদ্রপথে এ ভাবেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঠিকানা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন ৷ তাঁরা ঢেউয়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন ৷ যেমনভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন সেতেরা বেগম ও তাঁর দুই মেয়ে ৷ জামাল হুসেনের নৌকায় থাকা আরও অনেকে ৷

Boat of Jamal
জামাল হুসেনের নৌকা

স্বামী রশিদকে শেষবার ফোন করেন সেতেরা ৷ 44 সেকেন্ড মতো স্থায়ী হয়েছিল সেই কলটি ৷ শেষ কথাটা ছিল "ওহ আল্লাহ, এটা ঢেউয়ে ডুবে গিয়েছে, ঝড়ে ডুবে গিয়েছে ৷" ব্যস ৷ তারপর থেকে রশিদ বারবার ফোন করেছেন ৷ না, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ পাননি ৷

রোহিঙ্গাদের কেউ চায় না ৷ মুসলিম সংখ্যালঘুদের মায়ানমার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দাপট ৷ রোহিঙ্গারা পালিয়ে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসে ৷ সেখানে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় ৷ সেখানেও শরণার্থী নীতির গেড়োয় বন্দি তাদের জীবন ৷ তাই একটু নিরাপত্তা, একটু আশ্রয় পেতে সমুদ্রে বেরিয়ে পড়ে তারা ৷

আরও পড়ুন: ভারত চাইলে অনেক কিছু করতে পারে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মন্তব্য হাসিনার

জীবন-মৃত্যুর বাজি চলতে থাকে ৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর 3 হাজার 500 জন রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর পেরনোর চেষ্টা করেছে ৷ আগের বছরের তুলনায় তা 360 শতাংশ বেশি ৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘ অবশ্য এই সংখ্যা মানতে রাজি নয় ৷ তাদের হিসেবে তা আরও বেশি৷ কমপক্ষে 348 জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা নিখোঁজ ৷

কেউ কি তাদের কখনও বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে ? জানা যায়নি ৷ ডাঙায় যেমন, জলেতেও- রোহিঙ্গাদের মৃত্যুর পথেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে ৷ সমুদ্রে নৌকাটা ঠিক কোথায় আছে, তা জানতে পারলেও কোনও নৌবাহিনী উদ্ধারে এগোয়নি ৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের কথা বারবার কানে শুনেও স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছে ৷

আচ্ছা, যদি কেউ এই সমুদ্রযাত্রায় বেঁচে গিয়ে থাকে ? একবার একটা ভিয়েতনামের তেল কোম্পানি একটা নৌকাকে উদ্ধার করেছিল ৷ তারপর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেই ভয়ঙ্কর মায়ানমার প্রশাসনের হাতে তুলে দেয় ৷ আবার পালিয়ে যায় রোহিঙ্গারা ৷ মায়ানমার প্রশাসনও এরকম রোহিঙ্গাদের খোঁজে থাকে ৷

রোহিঙ্গা সংকটের উত্তর নেই ৷ এর সঙ্গে জড়িত প্রশাসন, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও কিছু শোনা যায়নি ৷ এই মুসলিম সংখ্যালঘুদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল ৷ এর দায় সবার, প্রত্যেকের ৷

আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে, উল্লেখ বিএসএফের তথ্যে

টেকনাফ (বাংলাদেশ), 6 জুন: সমুদ্রের এমন ঢেউ তারা কেউ কখনও দেখেনি, ভাবেনি ৷ চারদিকে শুধু জল ৷ তার উচ্চতা মানুষ সমান ৷ ঝড় উঠেছে ৷ সেতেরা বেগম চিৎকার করে উঠলেন, "আমাদের নৌকাটা ডুবে যাচ্ছে !" 180 জন যাত্রী বোঝাই নৌকাটা তখন বাংলাদেশের দক্ষিণে অন্ধকারে ৷ শুধু অর্ধেকটা ভাসছে ৷ 2022 সালের 7 ডিসেম্বর রাত 11টা নাগাদ শেষ ফোনে জানিয়েছিলেন সেতারা বেগম ৷

ওই নৌকার সব যাত্রীই রোহিঙ্গা ৷ নৌকাটি তৈরি করেছিলেন জামাল হুসেন ৷ তিনি ক্যাপটেন ৷ একসময় মায়ানমারে তাঁর নিজের ধান জমি ছিল৷ চাষ হত৷ গ্রামের তরুণ নেতা ছিলেন জামাল ৷ এসব 2017 সালের আগের কথা ৷ রোহিঙ্গারা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৷ এখানে অস্থায়ী ক্যাম্পই তাদের ঠিকানা ৷ এভাবে জীবন কাটে কী করে ? বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হিংসার ঘটনা বেড়ে চলেছে ৷

তাই ফের সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবে জামাল হুসেন ৷ নৌকা তৈরি করে তার ছবি ছড়িয়ে দেয় মোবাইলে মোবাইলে ৷ যদি কেউ যেতে চায় ৷ তিনি ইন্দোনেশিয়া নিয়ে যাবেন যাত্রীদের ৷ সেখানে জীবন একটু অন্যরকম, একটু স্বস্তির ৷ নৌকা বড়ো, অনেক জায়গা আছে আর খাবারদাবারও নেওয়া যাবে ৷ সবার দায়িত্ব তাঁর ৷ জামাল একজন সুদক্ষ নাবিক ৷ সমুদ্রের গতিবিধি তাঁর চেনা ৷ তিনি ঠিক ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছে দেবেন ৷

Bangladesh Rohingya Camp
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনের সঙ্গে কথা

আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে রোহিঙ্গা সন্দেহে ধৃত 6

সেতেরা বেগম 11 বছর তাঁর স্বামীকে দেখেননি ৷ স্বামী রশিদ ইন্দোনেশিয়ায় থাকেন ৷ জামালের নৌকার ছবি দেখলেন সেতেরা বেগম ৷ জামালের উপর ভরসা করে দুই মেয়েকে নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় স্বামীর কাছে যাবেন বলে ঠিক করলেন ৷ সেতেরা বেগমের বাবা কিন্তু ভয় পেলেন ৷ মেয়েকে বোঝালেন, সমুদ্রে ওই নৌকায় ইন্দোনেশিয়া পৌঁছনো সহজ কথা নয় ৷ প্রতিপদে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে ৷

স্বামীকে ছেড়ে আর কতদিন কাটাবেন সেতেরা ? মন মানল না বাবার কথা শুনলেন না তিনি ৷ জামালের নৌকায় উঠলেন সেতেরা ও তাঁর দুই মেয়ে ৷ একজনের বয়স 15 এবং আরেকজনের 18 ৷ সমুদ্রপথে এ ভাবেই হাজার হাজার রোহিঙ্গা তাদের জীবনের ঠিকানা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন ৷ তাঁরা ঢেউয়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছেন ৷ যেমনভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন সেতেরা বেগম ও তাঁর দুই মেয়ে ৷ জামাল হুসেনের নৌকায় থাকা আরও অনেকে ৷

Boat of Jamal
জামাল হুসেনের নৌকা

স্বামী রশিদকে শেষবার ফোন করেন সেতেরা ৷ 44 সেকেন্ড মতো স্থায়ী হয়েছিল সেই কলটি ৷ শেষ কথাটা ছিল "ওহ আল্লাহ, এটা ঢেউয়ে ডুবে গিয়েছে, ঝড়ে ডুবে গিয়েছে ৷" ব্যস ৷ তারপর থেকে রশিদ বারবার ফোন করেছেন ৷ না, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ পাননি ৷

রোহিঙ্গাদের কেউ চায় না ৷ মুসলিম সংখ্যালঘুদের মায়ানমার থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ৷ সেখানে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দাপট ৷ রোহিঙ্গারা পালিয়ে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে আসে ৷ সেখানে ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় ৷ সেখানেও শরণার্থী নীতির গেড়োয় বন্দি তাদের জীবন ৷ তাই একটু নিরাপত্তা, একটু আশ্রয় পেতে সমুদ্রে বেরিয়ে পড়ে তারা ৷

আরও পড়ুন: ভারত চাইলে অনেক কিছু করতে পারে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মন্তব্য হাসিনার

জীবন-মৃত্যুর বাজি চলতে থাকে ৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর 3 হাজার 500 জন রোহিঙ্গা বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগর পেরনোর চেষ্টা করেছে ৷ আগের বছরের তুলনায় তা 360 শতাংশ বেশি ৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘ অবশ্য এই সংখ্যা মানতে রাজি নয় ৷ তাদের হিসেবে তা আরও বেশি৷ কমপক্ষে 348 জনের মৃত্যু হয়েছে অথবা নিখোঁজ ৷

কেউ কি তাদের কখনও বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে ? জানা যায়নি ৷ ডাঙায় যেমন, জলেতেও- রোহিঙ্গাদের মৃত্যুর পথেই ঠেলে দেওয়া হয়েছে ৷ সমুদ্রে নৌকাটা ঠিক কোথায় আছে, তা জানতে পারলেও কোনও নৌবাহিনী উদ্ধারে এগোয়নি ৷ রাষ্ট্রসঙ্ঘের কথা বারবার কানে শুনেও স্রেফ এড়িয়ে গিয়েছে ৷

আচ্ছা, যদি কেউ এই সমুদ্রযাত্রায় বেঁচে গিয়ে থাকে ? একবার একটা ভিয়েতনামের তেল কোম্পানি একটা নৌকাকে উদ্ধার করেছিল ৷ তারপর সঙ্গে সঙ্গে তাদের সেই ভয়ঙ্কর মায়ানমার প্রশাসনের হাতে তুলে দেয় ৷ আবার পালিয়ে যায় রোহিঙ্গারা ৷ মায়ানমার প্রশাসনও এরকম রোহিঙ্গাদের খোঁজে থাকে ৷

রোহিঙ্গা সংকটের উত্তর নেই ৷ এর সঙ্গে জড়িত প্রশাসন, কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও কিছু শোনা যায়নি ৷ এই মুসলিম সংখ্যালঘুদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে মনে করে বিশেষজ্ঞ মহল ৷ এর দায় সবার, প্রত্যেকের ৷

আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বাড়ছে, উল্লেখ বিএসএফের তথ্যে

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.