নয়াদিল্লি ও কায়রো : 3 এপ্রিল : অবশেষে জাহাজজট কাটল সুয়েজে ৷ আজ এক বিবৃতির মাধ্যমে সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবার (29 মার্চ) রাত থেকে জাহাজ চলাচল পুনরায় চালু হওয়ার পর আজকের মধ্যে আটকে থাকা 422 টি জাহাজ সুয়েজের জলপথ পার করে গিয়েছে ৷
প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে থমকে গিয়েছিল মানুষের তৈরি সবথেকে বড় জলপথ সুয়েজ ৷ 23 মার্চ তাইওয়ানের একটি বিশালাকার কন্টেনার বোঝাই জাহাজ এভার গিভেন আড়াআড়িভাবে আটকে গিয়েছিল সুয়েজের মাঝপথে ৷ আর এর জেরেই থমকে গিয়েছিল সুয়েজ ৷ শুধু সুয়েজ নয়, গোটা বিশ্বের অর্থনীতি যেন আচমকা হোচট খেয়েছিল ৷
মেরিটাইম ডেটা কোম্পানির লয়েডের হিসেব বলছে, এই স্তব্ধ হয়ে যাওয়া জলপথে ব্যাপক আর্থিক ধাক্কা খেয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ৷ শুধুমাত্র এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যেই 9.6 বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আটকে ছিল এক এক দিনে ৷ আর এর আঁচ এসে পড়তে পারে ভারত সহ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির উপরেও ৷
মিশরের অর্থনীতির জন্য এই সুয়েজ খাল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ৷ সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলপথ আটকে থাকার কারণে এক এক দিনে 12-15 মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে মিশরের ৷
আরও পড়ুন : প্রায় এক সপ্তাহ পর ফের ভাসল সুয়েজে আটকে পড়া এভার গিভেন
2020 সালে এই সুয়েজ খাল দিয়ে প্রায় 19 হাজার জাহাজ যাতায়াত করেছে ৷ দিনে গড়ে প্রায় 50 টি ৷ এভারগিভেন জাহাজটি সুয়েজের দক্ষিণ দিকের ধারায় আড়াআড়িভাবে আটকে গিয়েছিল ৷ তখন থেকেই বিভিন্ন মহলে কথা হচ্ছিল, এই জায়গাটিকে আরও চওড়া করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্ট এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ ৷
মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসির কথায় 2014-15 সালে উত্তর দিকের ধারাটি চওড়া করার পাশাপাশি প্রায় 35 কিলোমিটারের একটি সমান্তরাল জলপথ তৈরি করেছিল মিশর ৷ তাতে খরচ হয়েছিল 8 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ৷ কিন্তু সেই অনুপাতে সুয়েজ থেকে খুব একটা বেশি লাভের মুখ দেখেনি মিশর ৷
2019-20 আর্থিক বছরে সুয়েজ থেকে মিশরের আয় হয়েছিল মাত্র 5.7 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ৷ 2014 সালে, অর্থাৎ সুয়েজের সংস্কারের আগে, এই আয়ের পরিমাণ ছিল 5.3 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ৷ তুলনামূলকভাবে লাভের মুখ না দেখায় এই পরিস্থিতিতে নতুন করে সুয়েজের কোনও সংস্কার করতে চাইছেন না মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি ৷
এই পরিস্থিতি আঁতশকাচের তলায় রয়েছে মিশর ৷ তার সঙ্গে রয়েছে এভার গিভেনের জাপানি প্রস্তুতকারী সংস্থা এবং জাহাজটি পরিচালনাকারী তাইওয়ানের সংস্থা ৷ শোনা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছে মিশর ৷ জাহাজটি আটকে পড়ার জন্য বিগত এক সপ্তাহে যে বিশাল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে মিশরকে, তাতে সিসি এত সহজে বিষয়টিকে ছাড়বেন বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা ৷
শোনা যাচ্ছে , এই বিশাল ক্ষতির জন্য 1 বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে মিশর ৷ ট্রানজ়িট ফি থেকে শুরু করে জাহাজটি আটকে পড়ার কারণে জলপথের যে ক্ষতি হয়েছে, জাহাজ সরানোর জন্য যে শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়েছিল, তাঁদের খরচ... এই সবকিছুই যোগ করা হয়েছে ক্ষতিপূরণের অঙ্কের সঙ্গে ৷
জলপথ তো জাহাজজট তো কেটে গেল ৷ এখন দেখার এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের আইনি জট কবে কাটে ৷