ইসলামাবাদ, ৭ মার্চ : ভারতে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাতে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনকে ব্যবহার করছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা(ISI বা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স)। একাধিক বার সেকথা বলে এসেছে ভারত। কিন্তু, পাকিস্তান সেকথা মানলে তো! নিজেদের সময়ে ভারতের অভিযোগ মানেননি পাকিস্তানের কোনও রাষ্ট্রনায়ক। এবার অবশ্য খোদ প্রাক্তন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ সেকথা স্বীকার করে নিলেন।
তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন জইশ ই মহম্মদ বা তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কেন কোনও ব্যবস্থা নেননি? এক টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে মুশারফকে এই প্রশ্ন করেছিলেন পাকিস্তানের সাংবাদিক নাদিম মালিক(তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে সাক্ষাৎকারের ২ মিনিটের একটি ক্লিপ রয়েছে)। এর উত্তরে প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট বলেন, "ভারতে বোমাবাজি চালাতে জইশকে ব্যবহার করছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সময়টাই(তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন) আলাদা ছিল। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে যেমন কর্ম তেমন ফল রীতিতে চলতেন গোয়েন্দারা। তখন জইশের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমিও জোর করিনি।"
শুধু তাই নয়, জইশ-ই সেই জঙ্গি সংগঠন যারা মুশারফকে দু-দুবার হত্যার ছক কষেছিল। সেই সময় প্রেসিডেন্ট পদে মুশারফ। ২০০৩ সালের রাওয়ালপিণ্ডির ঝাণ্ডা চিচিতে তাঁর উপর হামলা চালায় এক আত্মঘাতী বোমারু। যদিও অল্পের জন্য সে যাত্রায় বেঁচে যান মুশারফ। তাঁর কথায়, হামলাকারী কয়েক সেকেন্ড পর বোতাম(কোনও বিস্ফোরকের) টিপেছিল। তার মধ্যে সেতু পেরিয়ে যায় তাঁর গাড়ি। এই ঘটনার কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি ইমরান খান সরকার জইশের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করছে, তাকে সমর্থন জানিয়েছেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার পাকিস্তান সরকার মাসুদ আজ়হারের ভাই আবদুল রউফ আসগর সহ নিষিদ্ধ সংগঠনের ৪৪জনকে আটক করেছে। ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ার স্ট্রাইকের ১০ দিনের মাথায় পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর তাদের আটক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এপ্রসঙ্গে মুশারফ বলেন, "এটা ভালো পদক্ষেপ। আমি সবসময় বলে এসেছি, জইশ ই মহম্মদ জঙ্গি সংগঠন। ওদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমি খুশি যে সরকার ওদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।"
তবে পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। চাপে পড়ে আইওয়াশের জন্যও এমনটা করে থাকতে পারে পাকিস্তান, মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ, নিজেদের দেশে বিভিন্ন জঙ্গি সংঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যেসব অর্থ-উৎস রয়েছে সেগুলি আটকানোর চাপ রয়েছে পাকিস্তানের উপর। এইসব প্রতিশ্রুতি যদি পাকিস্তান পূরণ করতে না পারে, তাহলে তারা "গ্রে" লিস্ট থেকে ব্ল্যাক লিস্টেড হয়ে যাবে। আর এরকম হলে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেবে।