শাংশি, 4 নভেম্বর: বেদবাক্যের মতো শুধুই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ৷ কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না ৷ গ্লাসগোয় রাষ্ট্রনেতারা যখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনায় মগ্ন, সেই সময় চাঁচাছোলা ভাষায় এ ভাবেই তাঁদের আক্রমণ করেছিলেন কিশোরী পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ৷ তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলেও, গ্রেটার আশঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হচ্ছে ৷ কারণ দূষণ রোধ করতে পোল্যান্ড, ভিয়েতনাম, চিলির মতো দেশ যেখানে কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনার পক্ষে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করলেও, সেই পথে হাঁটেনি ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং চিনের মতো দেশ ৷ তাই জলবায়ু রোখা নিয়ে বিশ্বের তাবড় দেশের আদৌ কোনও মাথাব্যথা রয়েছে কি না, প্রশ্ন উঠছে ৷
কোনও চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর না করলেও, গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন রোখার লক্ষ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র-সহ একাধিক ক্ষেত্রে আগামী পাঁচ বছরে কয়লার ব্যবহার 1.8 শতাংশ কমিয়ে আনা হবে বলে বুধবার প্রতিশ্রুতি দেয় চিন ৷ 2020 সাল পর্যন্ত গত 15 বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই তারা কয়লার ব্যবহার 17.4 শতাংশ কমিয়ে এনেছে বলে জানায় সে দেশের ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (এনডিআরসি) ৷
আরও পড়ুন: Booker Prize: বর্ণবিদ্বেষের গল্প শুনিয়ে বুকার পুরস্কার জয় দক্ষিণ আফ্রিকার লেখকের
কিন্তু বাস্তব চিত্রটা একেবারেই আলাদা বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল ৷ কারণ সাম্প্রতিক কালে চিনে কয়লার উৎপাদন বেড়েছে বই কমেনি বলে দাবি তাদের ৷ দেশের উত্তরে শাংশিতে-কয়েক কিলোমিটারের ব্যবধানে অবস্থিত তিনটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ টেনেছেন তাঁরা ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলির একটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়াচ্ছে বেজিং ৷ তার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়লা বোঝাই অগুণতি লরির আনাগোনা লেগেই রয়েছে শাংশিতে ৷
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সরব যে দেশগুলি, তার মধ্যে সামনের সারিতে থাকলেও, কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে ভারতও সে ভাবে উদ্যোগী নয় বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের বাণিজ্য, শক্তি এবং শিল্প কৌশল বিভাগের সচিব এডওয়ার্ড স্যামুয়েল মিলিব্যান্ডও ৷ তাঁর মতে, প্রতিশ্রুতি এবং কাজের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থেকে যাচ্ছে ৷ ব্রিটিশ সরকারকেও কাঠগড়ায় তুলেছেন তিনি ৷ কয়লার ব্যবহার আগের থেকে কমিয়ে আনলেও, 2019 সালে কয়লা ব্যবহার করে ব্রিটেন একাই বিশ্বের 37 শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপন্ন করেছে বলে দাবি করেছেন তিনি ৷
আরও পড়ুন: Narendra Modi : ভারতে 500 কোটিরও বেশি কোভিড ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতি চলছে, জি-20 বৈঠকে জানালেন মোদি
গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া ‘গ্রিনপিস’ সংস্থার প্রধান হুয়ান পাবলো ওসেরিনো বলেন. ‘‘লক্ষ্যের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছি আমরা ৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোখা কতটা জরুরি, তা নিয়ে গুরু-গম্ভীর মন্তব্য করে অনেকে শিরোনাম তৈরি করেন বটে, কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তার কোনও প্রভাব পড়ে না ৷ সকলে জানেন জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কয়লাই ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়লার ধোঁয়ায় চারিদিক এমন ঢেকে রয়েছে যে, আলোর রেখাই চোখে পড়ে না ৷’’
হুয়ানের অভিযোগ, বিশ্বের তাবড় শক্তিধর রাষ্ট্রনেতারা বুক ঠুকে বলেন, 2030-এর মধ্যে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করে দেবেন ৷ 2040-এর মধ্যে অসাধ্যসাধনের প্রতিশ্রুতি দেয় উন্নয়নশীল দেশগুলিও ৷ কিন্তু সবই কথা হয়ে থেকে যায় ৷