রিয়াধ, ২৯ অক্টোবরঃ সৌদি আরবের (কিংডম অফ সৌদি আরব বা KSA) রাজধানী রিয়াধে তৃতীয় ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ ফোরাম (FII) অনুষ্ঠিত হবে । সৌদি আরবের কিং আবদুল আজ়িজ় কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান প্রাচ্যের ‘ডাভোস’ সম্মেলন নামে পরিচিত । এই সম্মেলনের মা্ধ্যমে সৌদি আরব বিশ্বকে বার্তা দিতে চায় যে, তারা পরিবর্তনের পথে এবং বিনিয়োগ ও পর্যটনে উৎসাহী। এই ফোরাম আজ সকালে শুরু হয়েছে । উদ্বোধনী ভাষণ দেন এশিয়া ও, আল-রুমায়ান । তিনি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের গভর্নর । এই ফান্ড KSA-র অধীন একটি ফান্ড যেটি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম । ফোরামে একাধিক বিষযের উপর আলোচনা চলবে। সেগুলি হল, বিশ্বে অর্থনীতির ধারাটি কোন পথে চলবে, বহু মেরুর বিশ্বে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী ফান্ডগুলির ভূমিকা কী হবে ইত্যাদি । আজ সকালে ফোরামে যে বিষয়ের উপর আলোচনা হয় সেটি ছিল ‘আগামী দশক : নতুন যুগের অর্থনীতির স্বপ্ন কীভাবে বিশ্বের অর্থনীতিকে গড়ে তুলবে’ । আলোচনায় যে প্যানেল অংশ নিয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন ভারতের শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ।
আগামী বছর সৌদি আরবে G20 সামিট অনুষ্ঠিত হবে । সে দেশের শাসক মহম্মদ বিন সলমন তাঁর ভিশন-২০৩০ এর পরিকল্পনা ইতিমধ্যে তুলে ধরেছেন । দেশের পেট্রো ডলার নির্ভর অর্থনীতিকে নতুন নতুন ধারায় পরিচালন ও পরিবর্তন এই ভিশনের উদ্দেশ্য ।ওয়াশিংটন পোস্টের সৌদি বংশোদ্ভূত সাংবাদিক জামাল খাসোগির খুনের প্রতিবাদে ২০১৮ সালের FII ফোরাম থেকে একাধিক বড় শিল্পপতি এবং বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বেরিয়ে গিয়েছিল । পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এ বছর ফোরামে আসেননি । তবে গতবছর তিনি ছিলেন ফোরামের অন্যতম মূখ্য বক্তা । তাৎপর্যপূর্ণভাবে এ বছর নরেন্দ্র মোদি তাঁর ভাষণের (কিনোট অ্যাড্রেস) মধ্যে দিয়ে ফোরামের আলোচনার মূল সুরটি বেঁধে দেবেন । তিনি ভাষণ দেবেন প্লেনারি সেশনে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় (ভারতীয় সময় রাত আটটা) ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল গভীর রাতে রিয়াধে পৌঁছান । সেখানে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। ফোরামে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি মোদি সৌদির সুলতান ও যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করবেন । এই অনুষ্ঠানে মোদি তাঁর ভাষণে মূলত ভারতের অর্থনীতির উন্নতি ও বিশ্ব বাণিজ্যে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে বলবেন । পাশাপাশি তাঁর ভাষণে বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক ধারার উল্লেখ থাকবে । ব্রিজওয়াটার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা, কো-চেয়ারম্যান এবং কো-চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার রে ডালিও-র সঙ্গে কথার পাশাপাশি মোদি পরিবেশ, ভৌগোলিকতা ও সাপ্লাই চেনের প্রতিবন্ধকতাকে কীভাবে আশীর্বাদে পরিণত করে অর্থনীতির উন্নতি করা সম্ভব সে বিষয়েও বলবেন।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন এখানে এসেছিলেন তখন তিনি পরিকল্পিত ও জোরদার বিনিয়োগের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন । তাঁকে সেবার সৌদির সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘কিং আবদুল আজ়িজ় শাশ’ প্রদান করা হয়েছিল । সৌদি আরব বিশ্বের আটটি দেশ যথা ভারত, চিন, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকা, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স ও জাপানের সঙ্গে প্রচলিত ক্রেতা-বিক্রেতা, শক্তি ও নিরাপত্তার সম্পর্কের সীমা ছাড়িয়ে পরিকল্পিত অংশীদারিত্বের দিকে ঝুঁকেছে । মোদির সফরের আগে বিদেশ মন্ত্রকের আর্থিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব টি এস ত্রিমূর্তি বলেন, ‘শক্তি ক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলায় তৈল শোধানগারে বিনিয়োগ করতে চলেছে সৌদি আরবের ’আরামকো, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর ADNOC এবং ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি। রায়গড়ের তৈল শোধনাগারটি ভারতের বৃহত্তম ‘গ্রিনফিল্ড শোধনাগার’ হতে চলেছে।
ফোরামের পাশাপাশি আজ ভারত ও সৌদির মধ্যে একটি MoU স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা । এটি স্বাক্ষরিত হবে ইন্ডিয়ান অয়েল মিডল ইস্ট ও সৌদি আরবের আল-জেরি কম্পানির মধ্যে । এই চুক্তি অনুসারে সৌদি আরবে একাধিক খুচরো বিপণন কেন্দ্র খোলা হবে । ভারতের জাতীয় পরিকাঠামো বিনিয়োগ তহবিলে সৌদি আরবের বিনিয়োগের বিশয়টি ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে । সৌদি আরব ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হল নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমনে পারস্পারিক সহযোগিতা । বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৬ লাখ ভারতীয় থাকেন । তাঁরা প্রতি বছর দেশে প্রায় ১১০০ কোটি ডলার (অ্যামেরিকান) পাঠান । সৌদি আরবের গোঁড়া প্রশাসন ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যটকদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে । পাশাপাশি বিদেশি মহিলা পর্যটকদের জন্য পোশাক বিধিতেও শিথিলতা এনেছে । বিদেশের মহিলা পর্যটকদের এখন আর সৌদিতে গিয়ে মাথায় ওড়না (হেড স্কার্ফ) দেওয়ার দরকার নেই। সৌদির আশা, ধর্মীয় পর্যটকই শুধু নয়, ভারত থেকে সাধারণ পর্যটকও প্রচুর পরিমাণে তাদের দেশে আগামীতে আসবেন ।