দ্য হেগ, 17 জুলাই : কুলভূষণ মামলায় আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে (ICJ) ঐতিহাসিক কূটনৈতিক জয় ভারতের । আজ ICJ জানিয়ে দিল, কুলভূষণ যাদবকে এখনই ফাঁসি দিতে পারবে না ইসলামাবাদ । পাকিস্তানের সামরিক আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা করার জন্য ইমরান খান প্রশাসনকে নির্দেশ দিল আদালত ।
বিতর্কটা শুরু হয়েছিল বছর তিনেক আগে । গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর অভিযোগে কুলভূষণকে গ্রেপ্তার করেছিলেন পাকিস্তানের প্রশাসন । সালটা ছিল 2016 । এরপর 2017-র এপ্রিলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয় পাকিস্তানের সামরিক আদালত । যদিও প্রথম থেকেই কুলভূষণকে নিরপরাধ বলে দাবি করে আসছিল দিল্লি । তাদের দাবি ছিল, নৌবাহিনীর এই প্রাক্তন অফিসার ব্যবসায়িক কাজে গিয়েছিলেন ইরানে । সেখান থেকে অপহৃত হন কুলভূষণ । যদিও ভারতের বিদেশমন্ত্রকের কোনও যুক্তিই মানতে চায়নি ইসলামাবাদ । এমনকী, কুলভূষণকে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ (কনসুলার অ্যাকসেস) প্রদানের ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছিল তারা ।
এরপরই শুরু হয় দিল্লির সঙ্গে ইসলামাবাদের কূটনৈতিক লড়াই । তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে কুলভূষণ যাদবকে নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয় । আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের অভিযোগ ছিল 49 বছর বয়সি এই প্রাক্তন নৌসেনা অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্যদের। বিদেশমন্ত্রকের কার্যকর পদক্ষেপের ফলেই কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত ।
আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতে ভারতের অভিযোগ ছিল, ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসলামাবাদ । পাকিস্তানের সামরিক আদালতের রায়কে বিচারের নামে প্রহসন বলেও দাবি করে দিল্লি । আজ, আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের নির্দেশ ভারতের সেই দাবিকেই মান্যতা দিল । জানিয়ে দিল, ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে কুলভূষণের ক্ষেত্রে । পাশাপাশি, ইসলামাবাদকে ICJ-এর নির্দেশ, কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনা করতে হবে। পুনর্বিবেচনা করে না দেখা পর্যন্ত কোনওভাবেই ফাঁসি দেওয়া যাবে না তাঁকে ।
কুলভূষণ নিয়ে পাকিস্তানের যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করাই শুধু নয়, কূটনৈতিক রক্ষাকবচের বিষয়েও ভারতের পদক্ষেপকে সমর্থন করল আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালত। জানিয়ে দিল, কুলভূষণের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক আইনি সহযোগিতা দিতে পারবে দিল্লি । রায় ঘোষণার পরই আইনজীবী উজ্জ্বল নিকমের মন্তব্য, '' এটা নিঃসন্দেহে ভারতের বড় জয় । আন্তর্জাতিক আইন মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে ইসলামাবাদকে । কুলভূষণকে প্রয়োজনীয় সবরকম সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে ।''
আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের এই রায়ের পরই খুশির হাওয়া কুলভূষণের পরিবারে । রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আতসবাজি পুড়িয়ে উৎসবে মাতলেন কুলভূষণের গ্রামের বাসিন্দারা । তবে খোঁচা একটা থেকেই গেল, সেটি সরবজিৎ সিংকে নিয়ে । পাকিস্তানের এক জেলে বন্দি থাকার সময় সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল এই ভারতীয় নাগরিকের । আজ সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরবজিতের বোনের ক্ষোভ, তাঁর সময় কেন্দ্রীয় সরকার সচেষ্ট হলে হয়তো বাঁচানো যেত ভাইকে ।