ETV Bharat / international

ভারত-নেপাল টানাপোড়েন মেটাতে হবে আলোচনার মাধ্যমে

নেপালের মানচিত্র নিয়ে ভারত-নেপাল চাপানউতর চলছেই । মানচিত্র খুব তাড়াতাড়িই নেপালের সংসদে পাস হবে এবং দিল্লির কাছে চ্যালেঞ্জ হবে সংযতভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করার । নেপালের সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্ককে আর নষ্ট হতে দেওয়া উচিত হবে না ।

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Jun 5, 2020, 11:15 AM IST

31 মার্চ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে নেপাল সরকার তাদের সংসদে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছে, যা ভারতের কয়েকটি অংশকে নিজেদের বলে দেখাতে দেশের সরকারি মানচিত্র বদলাতে চাইছে । এমন ঘটনা ঘটে তুলনামূলকভাবে চাপা পড়ে থাকা সীমান্ত সমস্যা সামনে আসার পর । যখন ভারত বার্ষিক কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রার জন্য উত্তরাখণ্ডে লিপুলেখ পাস হয়ে একটি নতুন রুট উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয় ।

এই বিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, যখন থেকে দিল্লি জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্বিন্যাসের পর একটি ম্যাপ প্রকাশ করে । যাতে নেপালের নিজের বলে দাবি করা কালাপানি ও লিপুলেখও রয়েছে । নেপালের দাবি, এই পদক্ষেপ করে দিল্লি আগের সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে । তবে, এই দাবি নাকচ করেছে ভারত এবং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে, যখন চিনকে ইঙ্গিত করে ভারতের সেনাপ্রধান জেনেরাল নারাভানে বলেছেন, যে কাঠমাণ্ডু অন্য দেশের কথায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ।

সম্পর্কের দিক দিয়ে ভারত এবং নেপালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বেশ ভালো । যে সম্পর্ককে প্রায়ই ‘বিশেষ’ বলে বর্ণনা করা হয় । ১৯৫০ সালের শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি নেপালি নাগরিকদের ভারতে আসার এবং কাজের সুযোগ দেয়, যা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । দু'দেশের সীমান্তও খোলাই থাকে । এছাড়াও নেপালি নাগরিকরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ (সম্মানিত গোর্খা রেজিমেন্ট), এবং কয়েকজন জেনেরাল পদেও আসীন রয়েছেন । যা দু'দেশের ক্ষেত্রেই নজিরবিহীন এবং বিশেষ ।

ভারত ও চিন এশিয়ার এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল । যারা 2006-এর শুরুতে ঘটনাবহুল কিন্তু দৃঢ়বদ্ধভাবে রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে পৌঁছেছে । এবং এই সময়ে এই ‘বিশেষ’ সম্পর্কের সহনশীলতা পরীক্ষার মুখে পড়েছে । জটিল অভ্যন্তরীণ জনবিন্যাস এবং 1750 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পেরিয়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন যোগাযোগের ভিত্তিতে, ভারত-নেপাল সম্পর্ক বহুস্তরীয় । হিন্দু চরিত্রের এই অতীত রাজ্য বুদ্ধেরও জন্মস্থান, এবং আরও সাম্প্রতিক মাওবাদী অভ্যুত্থান এবং নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা এই গর্বিত কিন্তু দরিদ্র পাহাড়-রাষ্ট্রকে নতুন সামাজিক-অর্থনৈতিক গতি দিয়েছে ।

তারপর থেকে ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ক্রমশ অতীত হয়েছে । একইসঙ্গে এখন কাঠমাণ্ডুতে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকার জন্য চিন রাজনৈতিক তথা আদর্শগত সুবিধা পাচ্ছে । যেটা আগের দশকগুলোয় কখনও ছিল না । দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাজনৈতিক-ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হল, যে পৃথকভাবে কোনও দেশের (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা) একে অপরের সঙ্গে সীমান্ত নেই, এবং তারা একমাত্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত মারফত সম্প্রসারিত অংশের সঙ্গে যুক্ত । কিছু জায়গায় চিনও এই গ্রিডের অংশ । যার ফলে মানচিত্রভিত্তিক জটে মাত্রা যুক্ত হচ্ছে এবং ভারতের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যায় জটিলতা বাড়ছে ।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই অঞ্চল আলাদা আলাদা স্বাধীন দেশে বিভক্ত হয়েছে । এবং আঞ্চলিকভাবে পবিত্র ও প্রতিযোগিতামূলক জায়গায় রয়েছে । অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে ভারত তার ভৌগলিক আকার ও জনবিন্যাস নিয়ে সর্ববৃহৎ চেহারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে । দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বেজিংয়ের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে যা প্রায়শই ভারতের বিপরীত অথবা প্রতিযোগিতামূলক ।

বর্তমান ক্ষেত্রে, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের অংশ, এবং ওই এলাকাগুলির (লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা) ওপর তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে নেপাল 1816 সালের একটি চুক্তির উল্লেখ করছে । যেখানে ভারতের নিজস্ব ঐতিহাসিক দাবি রয়েছে যা 1950, 1962-র পর এবং এখন 2019-এ আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে ।

1982 সালের অক্টোবর মাস থেকে চিনের সঙ্গে দিল্লির নিজস্ব সীমান্ত উদ্বেগ কাজ করছে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চিনের সঙ্গে এইমূহূর্তে সংঘাত দানা বাঁধছে ) । এবং বেজিং-কাঠমাণ্ডুর বর্তমান রাজনৈতিক রসায়ন সম্পর্কে অবহিত থাকায়, কেউ আশা করেনি যে মোদি সরকার নেপালের সঙ্গে এই ম্যাপ ইশুকে সহমর্মিতার সঙ্গে বিচার করবে ।

এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, 4 মে লিপুলেখ পাস হয়ে 40 কিলোমিটার যে রাস্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উদ্বোধন করেছেন, সেব্যাপারে নেপালকে অবহিত করা হয়নি । যে ঘটনাকে নেপালের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠী ভারতের গা-জোয়ারি হিসেবে তুলে ধরছে । এইসব উদ্দেশ্যের পিছনে যে সত্যই থাকুক না কেন, যখন অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রতিবেশীদের জাতীয়তাবাদ এবং স্বাতন্ত্রতার ইশুগুলোকে সহজেই ইন্ধন দেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তখন ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ হল একটা সক্রিয়, বন্ধুত্বপূর্ণ পথ বার করে এই অশান্তিকে আটকান ।

নেপালে ভারতের মিশ্র ভাবমূর্তি । রাজীব গান্ধির জমানায় চাপানো অবরোধ এবং সাম্প্রতিক সময়ে সেদেশের সংবিধানে কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা গা-জোয়ারি করা বড় ভাইয়ের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে । বহু দ্বিপাক্ষিক বিষয়কে ঝুলে থাকতে দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি (নেপালের মতে) রক্ষা করা হয়নি, যার জেরে ভারতের দায়িত্বশীলতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ।

এই মূহূর্তের দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েনের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হল, যেভাবে নেপালি নাগরিকরা ভারতীয় ফৌজে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে তাঁদের অবদান রেখেছেন । গোর্খা ব্রিগেডের সাতটি রেজিমেন্টসহ বর্তমানে প্রায় 35 হাজার সেনাকর্মী কর্মরত রয়েছেন, এবং 90 হাজারেরও বেশি সেনা জওয়ান পেনশন ভোগ করছেন । তাঁরা ভারত-নেপাল সম্পর্কে একটি অভিনব বন্ধনের কাজ করছেন । ভারতের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেপালের মানবসম্পদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং একে যত্নের সঙ্গে রাখতে হবে ।

মোদি সরকারের প্রতিবেশী নীতি এবং সেই সংক্রান্ত বিচক্ষণতার পরীক্ষা হচ্ছে নেপাল । দিল্লিকে যদি ছোটো প্রতিবেশীদের ব্যাপারে সংবেদনশীল, সহমর্মী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দেখা হয়, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলিতে চিনের পদচিহ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে কম সমস্যা হবে ।

বর্তমান মানচিত্র খুব তাড়াতাড়িই নেপালের সংসদে পাস হবে এবং দিল্লির কাছে চ্যালেঞ্জ হবে সংযতভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করার । নেপালের সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্ককে আর নষ্ট হতে দেওয়া উচিত হবে না ।

- প্রতিবেদনটি লিখেছেন উদয় সি ভাষ্কর

31 মার্চ অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে নেপাল সরকার তাদের সংসদে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেছে, যা ভারতের কয়েকটি অংশকে নিজেদের বলে দেখাতে দেশের সরকারি মানচিত্র বদলাতে চাইছে । এমন ঘটনা ঘটে তুলনামূলকভাবে চাপা পড়ে থাকা সীমান্ত সমস্যা সামনে আসার পর । যখন ভারত বার্ষিক কৈলাস-মানস সরোবর তীর্থযাত্রার জন্য উত্তরাখণ্ডে লিপুলেখ পাস হয়ে একটি নতুন রুট উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেয় ।

এই বিবাদ দানা বাঁধতে শুরু করেছে, যখন থেকে দিল্লি জম্মু-কাশ্মীরের পুনর্বিন্যাসের পর একটি ম্যাপ প্রকাশ করে । যাতে নেপালের নিজের বলে দাবি করা কালাপানি ও লিপুলেখও রয়েছে । নেপালের দাবি, এই পদক্ষেপ করে দিল্লি আগের সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে । তবে, এই দাবি নাকচ করেছে ভারত এবং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে, যখন চিনকে ইঙ্গিত করে ভারতের সেনাপ্রধান জেনেরাল নারাভানে বলেছেন, যে কাঠমাণ্ডু অন্য দেশের কথায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ।

সম্পর্কের দিক দিয়ে ভারত এবং নেপালের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বেশ ভালো । যে সম্পর্ককে প্রায়ই ‘বিশেষ’ বলে বর্ণনা করা হয় । ১৯৫০ সালের শান্তি ও বন্ধুত্ব চুক্তি নেপালি নাগরিকদের ভারতে আসার এবং কাজের সুযোগ দেয়, যা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । দু'দেশের সীমান্তও খোলাই থাকে । এছাড়াও নেপালি নাগরিকরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ (সম্মানিত গোর্খা রেজিমেন্ট), এবং কয়েকজন জেনেরাল পদেও আসীন রয়েছেন । যা দু'দেশের ক্ষেত্রেই নজিরবিহীন এবং বিশেষ ।

ভারত ও চিন এশিয়ার এই দুই শক্তিধর দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল । যারা 2006-এর শুরুতে ঘটনাবহুল কিন্তু দৃঢ়বদ্ধভাবে রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে পৌঁছেছে । এবং এই সময়ে এই ‘বিশেষ’ সম্পর্কের সহনশীলতা পরীক্ষার মুখে পড়েছে । জটিল অভ্যন্তরীণ জনবিন্যাস এবং 1750 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত পেরিয়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন যোগাযোগের ভিত্তিতে, ভারত-নেপাল সম্পর্ক বহুস্তরীয় । হিন্দু চরিত্রের এই অতীত রাজ্য বুদ্ধেরও জন্মস্থান, এবং আরও সাম্প্রতিক মাওবাদী অভ্যুত্থান এবং নির্বাচনী বাধ্যবাধকতা এই গর্বিত কিন্তু দরিদ্র পাহাড়-রাষ্ট্রকে নতুন সামাজিক-অর্থনৈতিক গতি দিয়েছে ।

তারপর থেকে ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ক্রমশ অতীত হয়েছে । একইসঙ্গে এখন কাঠমাণ্ডুতে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতায় থাকার জন্য চিন রাজনৈতিক তথা আদর্শগত সুবিধা পাচ্ছে । যেটা আগের দশকগুলোয় কখনও ছিল না । দক্ষিণ এশিয়ার একটি রাজনৈতিক-ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য হল, যে পৃথকভাবে কোনও দেশের (পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা) একে অপরের সঙ্গে সীমান্ত নেই, এবং তারা একমাত্র ভারতের সঙ্গে সীমান্ত মারফত সম্প্রসারিত অংশের সঙ্গে যুক্ত । কিছু জায়গায় চিনও এই গ্রিডের অংশ । যার ফলে মানচিত্রভিত্তিক জটে মাত্রা যুক্ত হচ্ছে এবং ভারতের অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যায় জটিলতা বাড়ছে ।

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের পরে এই অঞ্চল আলাদা আলাদা স্বাধীন দেশে বিভক্ত হয়েছে । এবং আঞ্চলিকভাবে পবিত্র ও প্রতিযোগিতামূলক জায়গায় রয়েছে । অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশে ভারত তার ভৌগলিক আকার ও জনবিন্যাস নিয়ে সর্ববৃহৎ চেহারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে । দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বেজিংয়ের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে যা প্রায়শই ভারতের বিপরীত অথবা প্রতিযোগিতামূলক ।

বর্তমান ক্ষেত্রে, নেপালের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা ঔপনিবেশিক ইতিহাসের অংশ, এবং ওই এলাকাগুলির (লিপুলেখ, কালাপানি এবং লিম্পিয়াধুরা) ওপর তাদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে নেপাল 1816 সালের একটি চুক্তির উল্লেখ করছে । যেখানে ভারতের নিজস্ব ঐতিহাসিক দাবি রয়েছে যা 1950, 1962-র পর এবং এখন 2019-এ আনুষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে ।

1982 সালের অক্টোবর মাস থেকে চিনের সঙ্গে দিল্লির নিজস্ব সীমান্ত উদ্বেগ কাজ করছে (প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর চিনের সঙ্গে এইমূহূর্তে সংঘাত দানা বাঁধছে ) । এবং বেজিং-কাঠমাণ্ডুর বর্তমান রাজনৈতিক রসায়ন সম্পর্কে অবহিত থাকায়, কেউ আশা করেনি যে মোদি সরকার নেপালের সঙ্গে এই ম্যাপ ইশুকে সহমর্মিতার সঙ্গে বিচার করবে ।

এর ফলে বোঝা যাচ্ছে, 4 মে লিপুলেখ পাস হয়ে 40 কিলোমিটার যে রাস্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উদ্বোধন করেছেন, সেব্যাপারে নেপালকে অবহিত করা হয়নি । যে ঘটনাকে নেপালের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠী ভারতের গা-জোয়ারি হিসেবে তুলে ধরছে । এইসব উদ্দেশ্যের পিছনে যে সত্যই থাকুক না কেন, যখন অপেক্ষাকৃত ছোটো প্রতিবেশীদের জাতীয়তাবাদ এবং স্বাতন্ত্রতার ইশুগুলোকে সহজেই ইন্ধন দেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তখন ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ হল একটা সক্রিয়, বন্ধুত্বপূর্ণ পথ বার করে এই অশান্তিকে আটকান ।

নেপালে ভারতের মিশ্র ভাবমূর্তি । রাজীব গান্ধির জমানায় চাপানো অবরোধ এবং সাম্প্রতিক সময়ে সেদেশের সংবিধানে কিছু বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা গা-জোয়ারি করা বড় ভাইয়ের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে । বহু দ্বিপাক্ষিক বিষয়কে ঝুলে থাকতে দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি (নেপালের মতে) রক্ষা করা হয়নি, যার জেরে ভারতের দায়িত্বশীলতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ।

এই মূহূর্তের দ্বিপাক্ষিক টানাপোড়েনের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান হল, যেভাবে নেপালি নাগরিকরা ভারতীয় ফৌজে, বিশেষ করে সেনাবাহিনীতে তাঁদের অবদান রেখেছেন । গোর্খা ব্রিগেডের সাতটি রেজিমেন্টসহ বর্তমানে প্রায় 35 হাজার সেনাকর্মী কর্মরত রয়েছেন, এবং 90 হাজারেরও বেশি সেনা জওয়ান পেনশন ভোগ করছেন । তাঁরা ভারত-নেপাল সম্পর্কে একটি অভিনব বন্ধনের কাজ করছেন । ভারতের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেপালের মানবসম্পদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং একে যত্নের সঙ্গে রাখতে হবে ।

মোদি সরকারের প্রতিবেশী নীতি এবং সেই সংক্রান্ত বিচক্ষণতার পরীক্ষা হচ্ছে নেপাল । দিল্লিকে যদি ছোটো প্রতিবেশীদের ব্যাপারে সংবেদনশীল, সহমর্মী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দেখা হয়, তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলিতে চিনের পদচিহ্ন নিয়ন্ত্রণ করতে কম সমস্যা হবে ।

বর্তমান মানচিত্র খুব তাড়াতাড়িই নেপালের সংসদে পাস হবে এবং দিল্লির কাছে চ্যালেঞ্জ হবে সংযতভাবে বিষয়টির মোকাবিলা করার । নেপালের সঙ্গে এই বিশেষ সম্পর্ককে আর নষ্ট হতে দেওয়া উচিত হবে না ।

- প্রতিবেদনটি লিখেছেন উদয় সি ভাষ্কর

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.