বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন গোটা পৃথিবীতে ডেকে আনছে এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকেনমিক ফোরামে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি ৷ এর ফলে পরিবেশের প্রতি তাঁর দায়িত্বজ্ঞানহীতার ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়েছে ৷ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন এবং তিনি ঘোষণা করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক লাখ কোটি গাছ রোপণ ও সংরক্ষণের কাজে যুক্ত হবে ৷ জলবায়ুর পরিবর্তন রুখতে আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ পরিবেশ বদলে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতার বাণী শুনিয়েছেন, বিশ্বের নেতাদের কাছে তিনি এ নিয়ে বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরির দাবি জানিয়েছেন ৷ যদিও এই প্রজন্ম পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে বিশ্বের নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, তবে প্রথম বিশ্বের নেতারা এই বিষয়কে গুরুত্ব দিতে নারাজ ৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ লড়াইয়ে থাকার কোনও প্রয়োজন নেই বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো প্রোটোকল থেকে সরে এসেছিল ৷ যদিও ওবামা সরকার প্যারিস চুক্তিতে সই করেছিল, তবে ক্ষমতায় আসার পর তা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে আসে ট্রাম্প ৷ মার্কিন নাগরিকদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন ৷ মাথাপিছু গাছের হিসেবে কানাডা, রাশিয়া ও ব্রাজিলের থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ; তবুও WEF-এর গ্রিন ইনিশিয়েটিভে স্রেফ চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য তারা যোগদান করেছিল ৷
দ্রুতহারে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণ হল, গাছ রোপণ না করা, বেপরোয়া ভাবে শিল্পায়ন করা এবং জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন ৷ বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা হু হু করে বাড়ছে, কারণ দূষণ, মহামারী, খাদ্য সংকট ও দুর্যোগ ৷ চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই গোটা বিশ্বের 40 শতাংশ কার্বন নির্গত হয় ৷ যদিও ভারতের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ অনেকটাই ভালো (4.5 শতাংশ) , তবুও নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা থেকে আমাদের বিরত হলে চলবে না ৷ যে দেশগুলি আক্ষরিক অর্থে গোটা বিশ্বে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে , তারা নিজেদের কৃতকর্ম নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নয় ৷
সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রাকৃতিক উৎসের 10,000 কোটি টন প্রতি বছর ব্যবহার করছে ৷ পরের তিন দশকে এই সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়ে 18,400 কোটি টন হয়ে যেতে পারে ৷ ওই সমীক্ষাতেই দেখা গিয়েছে যে মাথাপিছু এই উৎসের ব্যবহার উন্নত দেশগুলিতে অন্যদের তুলনায় 10 গুণ বেশি ৷ শিল্পক্ষেত্র থেকে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড আগামী 100 বছর পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং EU নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে, তবে এই পরিস্থিতি বদল নিয়ে তাদের মধ্যে কোনও হেলদোল নেই ৷ এই ক্ষেত্রে কফিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে শেষ পেরেকটি তখন পোতা হয়, যখন ট্রাম্প WEF-এ জলবায়ু নিয়ে উদ্বেগকে সর্বনাশা ভবিষ্যৎবাণী বলে ব্যাখ্যা করেন ৷
বিশ্বের নেতাদের জলবায়ু নিয়ে উদ্বেগকে তুচ্ছ করে তোলার মরিয়া প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একাধিক ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত করছে ৷ সাহারা মরুভূমিতে তুষারপাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাইনাস 40 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, হড়পা বানের একাধিক বড় ঘটনা, ভূমিকম্প, দুর্ভিক্ষ এবং এলোমেলো বর্ষা বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকেই আঙুল তুলছে ৷ সমুদ্র উপকূল ও একটু নিচু এলাকায় যে কয়েক মিলিয়ন লোক বসবাস করেন, হিমবাহ গলে যাওয়া এবং সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়া তাঁদের কাছে ভয়ের কারণ হয়ে উঠছে ৷ পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবার খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠবে ৷ গত এক বছরে আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় 15টি ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছে ৷ অস্ট্রেলিয়ার বুশ ফরেস্টের মতো না হওয়া সত্ত্বেও আমাজনের জঙ্গলে ভয়ঙ্কর দাবানল হয় ৷
The Lancet Research জানিয়েছে, এভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন হতে থাকলে কলা, কফি, আলু ও বাদামের মতো ফল অবলুপ্ত হয়ে যাবে, একই সঙ্গে ফসল উৎপাদনও মারাত্মক হারে কমে যেতে পারে ৷ এই সমস্ত আশঙ্কা সামনে এলেও রাষ্ট্রসংঘের সাম্প্রতিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন COP 25-এ কোনও সমাধান সূত্র বের হয়নি বা কোনও চুক্তিও হয়নি ৷ উন্নত দেশগুলি যতক্ষণ না জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে সংঘবদ্ধ আন্দোলনে নামছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মানবসভ্যতার উপর থেকে আশঙ্কার মেঘ সরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই ৷